ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

কালো টাকার সন্ধানে

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কালো টাকার সন্ধানে

দেশে দেশে কালো টাকা একটি বহুল সমস্যা বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। গড়হবঃধৎু ঞৎধহংসরংংড়হ গবপযধহরংস অনুসারে অর্থ প্রবাহ এক স্থানে সংরক্ষিত না থেকে বরং বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। আর এ অর্থ প্রবাহ দুটো ধারার মাধ্যমে হয়ে থাকে : প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো অন্যটি অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো। এই অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে যে লেনদেন হয় সেটিকে বলা হচ্ছে কালো টাকা। লেখক কাওসার রহমান নিরীক্ষাধর্মী কাজ করেছেন ‘কালো টাকার সন্ধানে’ গ্রন্থে। অবশ্য বাংলায় কালো টাকা বলা হলেও ইংরেজীতে কিন্তু ইষধপশ ঊপড়হড়সু টহফবৎ এৎড়ঁহফ ঊপড়হড়সু, উরহঃু গড়হবু বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। সাধারণত একটি দেশের এক-তৃতীয়াংশ থাকে কালো টাকা। কিন্তু বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ কত এ নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে বেশ কিছু কাজ হলেও কাওসার রহমান প্রথমবারের মতো কালো টাকার ওপর একটি বিস্তৃত কাজ করেছেন। আসলে কালো টাকা নিয়ে অনেক মিথ থাকলেও এটি সত্য যে টাকা যখন মুদ্রায় ছিল তখনও এটি প্রযোজ্য ছিল। কাওসার রহমান তার গ্রন্থে মোট আটটি অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন। এগুলো হচ্ছে : গুপ্তধনের খোঁজে, কালো টাকা কালো নয়, টাকা পাচারের হাল-হকিকত ইনভয়েস কালো টাকা, পাচার করা টাকায় সেকেন্ড হোম হুজির নতুন মাধ্যম মোবাইল ব্যাংকিং, কালো টাকা টাকার নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক আমলা ও ব্যবসায়ী চক্র, কালো টাকার ভয় ক্ষমতাসীনদের। এ অধ্যায়গুলোতে একটি অনুসন্ধানী চিত্রমালা ফুটে উঠেছে। প্রতিটি অধ্যায় ফুটে উঠেছে দেশের প্রতি মমত্ববোধ ঈধঢ়রঃধষ ঋষরমযঃ না হলে দেশের কি উন্নয়ন হতো তার একটি প্রাঞ্জল আলোচনা আজকাল পাঠকেরা বলে থাকেন, অনেক অর্থনীতিবিদ সহজ জিনিসকে এমন কঠিন করে উপস্থাপন করেন- গাণিতিক মডেল দেন যাতে অর্থনীতি যে মানুষের উন্নয়নের জন্য, এ কথাটি বার বার বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। এ কারণেই কাওসার রহমানের গ্রন্থটি সাধারণ পাঠকের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এষড়নধষ ঋৎধসবড়িৎশ ড়ভ গড়হবঃধৎু ঞৎধহংসরংংরড়হ-এ যত তত্ত্ব ও তথ্য কথাই বলা হোক না কেন টাকা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাচার হবে। কিন্তু প্রবণতা কমানো উচিত। ‘ইন ভয়েস কারসাজিতে কালো টাকা’ প্রবন্ধে লেখক অবশ্য দেশ থেকে কিভাবে অর্থ পাচার হচ্ছে সেটির চালচিত্র তুলে ধরেছেন। আসলে ইঁংরহবংং ঊঃযরবং এর সেই পুরনো প্রশ্নটি এসে যায় নৈতিকতার মানদ- ব্যবসায়ী, শুল্ক কর্তৃপক্ষ, ব্যাংকার, আমলা করে থাকেন। আর শুল্ক কর্তৃপক্ষের বৈধ জিনিসকে যে কি কষ্ট দেন তা একমাত্র ভুক্তভোগী জানেন। ‘পাচার করা টাকায় সেকেন্ড হোম’- প্রবন্ধটি অত্যন্ত সুগঠিত। আসলে অবৈধভাবে টাকা পাচার করে অনেকেই মালয়েশিয়া, দুবাইতে সেকেন্ড হোম কিনছে। এমনকি কানাডাতেও প্রবাসী হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা মহল একটু তৎপর হওয়া উচিত। নচেত অর্থ পাচার বন্ধ হবে না। ‘কালো টাকা নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক আমলা ও ব্যবসায়ী চক্র’ প্রবন্ধটিও সুলিখিত। আসলে এটি একটি মাফিয়া নেক্সাস। এ নেক্সাসটি ভাঙ্গা দরকার। ‘কালো টাকার ভয় ক্ষমতাসীনদের’ প্রবন্ধে লেখক প্রাঞ্জল ভাষায় কালো টাকার ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরেছেন। আসলে বিরোধী দলে থাকলে কালো টাকা পাচার করা সহজ ভাবখানা এমন আমরা, আমরাই তো। বিভিন্ন পয়েন্টে তাদের মধ্যে যোগসূত্র ঘটায়। আর স্থানীয় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে কালো টাকার অপব্যবহার ঘটে। নারী-শিশু এবং অস্ত্র-মাদক নিয়ন্ত্রণ করে থাকে কালো টাকার অপব্যবহারকারীরা। জঙ্গীবাদী, সন্ত্রাসী ও ধর্ম ব্যবসায়ীরা কালো টাকা ব্যবহার করে যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের সুস্পষ্ট আইন আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিবেদন জানাব, তিনি যে ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন করতে চাচ্ছিলেন তার বাস্তবতা প্রসারিত করতে হলে বাংলাদেশে ‘কমিউনিটি ব্যাংকিং’ ব্যবস্থা চালু করার জন্য। আর এ কমিউনিটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা হলে গ্রামীণ এলাকা থেকে অর্থ শহর এলাকা হয়ে রাজধানী হয়ে বিশ্ব কেন্দ্রে পাচার হয়ে যাবে। এ্যামানুয়েলের ভাষায় টহবয়ঁধষ ঊীপযধহমব। আর তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জোর দাফব জানাচ্ছি কমিউনিটি ব্যাংকিং চালুর সুস্পষ্ট ব্যবস্থা নেয়ার। কালো টাকা রোধ করা সম্ভব না হলেও মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কাওসার রহমানকে ধন্যবাদ ও সাধুবাদ জানাচ্ছি।
×