ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

১৬ বছর পর বাড়ি ফিরল ছেলে

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

১৬ বছর পর বাড়ি ফিরল ছেলে

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ যে বাড়িতে এতদিন ছিল সুনসান নীরবতা, সেই বাড়িতে আজ কোলাহল। স্বজনরা জড়ো হয়েছে ডোমার উপজেলার জোড়াবাড়ি ইউনিয়নের মধ্য জোড়াবাড়ি জয়নালপাড়া গ্রামের কায়িক শ্রমিক লুৎফর রহমান ও মোহছেনা বেগম দম্পতির বাড়িতে। দীর্ঘ ষোলো বছর আগে তাদের হারিয়ে যাওয়া একমাত্র সন্তান আবুল হাসান (৩০) ফিরে এসেছে। বাড়িতে বাঁধভাঙ্গা উল্লাস যেন থামছেই না। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে মা-বাবা চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না। এই কান্না তো আনন্দের। যে ছেলেকে পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিল তারা। রবিবার সকালে তাদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, তাদের একমাত্র সন্তান আবুল হাসান। তার বয়স যখন চৌদ্দ তখন সে হারিয়ে গিয়েছিল। এ সম্পর্কে তারা জানায়, ২০০১ সালের ঘটনা। সে সময় এলাকায় চরম অভাব অনটন চলছিল। এলাকা অনেক ছেলে অভাবের কবলে পড়ে কাজের সন্ধানে চট্টগ্রাম যায়। সে সময় তাদের ছেলে আবুল হাসানও তাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম গিয়েছিল। সেখানে রড তৈরির কারখানায় এলাকার অন্যদের সঙ্গে তাদের ছেলেও শ্রমিকের কাজ করত। চট্টগ্রামে দুই মাস কাজ করার পরে হঠাৎ একদিন সে হারিয়ে যায়। সেই হতে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তারা খবর পায় তাদের গ্রামের অদূরে গোমনাতী গ্রামের লোকমান হোসেনের মিল চাতালে একটি ছেলে গত সাতদিন ধরে অবস্থান করছে। ছেলেটি তাদের হারিয়ে যাওয়া আবুল হাসানের মতো দেখতে। খবর পেয়ে তারা গত শনিবার ঘটনাস্থলে যান। ছোটকালে ছেলের শরীরে কিছু চিহ্ন রয়েছে যেমনÑ ডান পায়ে কোদালের কাটা দাগ, ঘাড়ের নিচে বড় তিল, বাম কান ফুটো করা ছিল। এসব চিহ্ন ছাড়াও বাবা মায়ের মুখের আদল মিলে যাওয়ায় তারা তাদের ছেলেকে বুকে টেনে নেয়। এ সময় এলাকার এমদাদুল হক, যে ২০০১ সালে আবুল হাসানের সঙ্গে চট্টগ্রামে কাজে গিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিল। সেও আবুল হাসানকে চিনতে পেরে জড়িয়ে ধরে। আবুল হাসান নিজবাড়ির এলাকার অদূরে ফিরে এসে শুধু বলছিল তার বাবা মায়ের নাম ভুলে গেলেও তার বাড়ি যে ডোমারের জোড়াবাড়ি গ্রামে সেটি তার মনে ছিল। এতদিন হারিয়ে সে বিভিন্ন স্থানের হোটেলে হোটেলে শ্রমিকের কাজ করে দিন পার করছিল। একদিন স্বপ্নে তার বাবা মাকে দেখতে পেয়ে সে নিজবাড়িতে ফিরে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে। এরপর এই এলাকায় ফিরে এসে খুঁজে পাচ্ছিল না বাবা মার ঠিকানা। আশ্রয় নেয় গোমনাতীর লোকমান হোসেনের মিল চাতালে। এখানে ৭ দিন থাকার পর সে তার বাবা মাকে খুঁজে পেয়েছে।
×