ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মঘাতী প্রবণতা

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আত্মঘাতী প্রবণতা

বই একাকিত্বের সঙ্গী, সান্ত¡নার উৎসস্থল, মানবিকতা জাগরণী, জ্ঞানের অমূল্য ভা-ার, বিবেকের কণ্ঠস্বর ও চিত্তের আনন্দ সঞ্চারিণী শক্তি। বইয়ের সাহচর্যে আমাদের চিন্তার প্রসারতা ও কল্পনার অলিগলির সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বই সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। পৃথিবীর সবার সঙ্গে যে আমাদের আত্মার সম্পর্ক গভীরতর তা একমাত্র বই পড়েই উপলব্ধি করা যায়। তাই বই পড়ে কেউ কখনও দেউলিয়া হয়েছে বলে শোনা যায়নি। বই পড়ে বরং উপকার সাধিত হয়। বই কেনার যে কি আনন্দ তা শুধু সেই বোঝে যে বইয়ের সঙ্গে মিতালি গড়তে পারে। বই পড়ার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি নিজেকে যেমন নতুন মানুষ হিসেবে গড়তে পারে তেমনি বইয়ের সংস্পর্শে পরিবার, সমাজ, দল, গোষ্ঠী ও দেশ আপনা আপনি বদলে যায়। যে জাতি যত বেশি বই পড়ে সে জাতি তত বেশি উন্নত। প্রতি বছর বইপ্রেমীরা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একুশে বইমেলার অপেক্ষায় থাকে। ভাষা আন্দোলনের এই মাসটিতে বইমেলা যেন হয়ে ওঠে বাঙালীর প্রাণের উৎসব। ভাষার মাসে বাংলা ভাষাকে লেখনী ও সাহিত্যের মধ্য দিয়ে আরো গভীরতা দান ও বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য একুশে বইমেলার জুড়ি নেই। সময় ও চাহিদার আবর্তনে বইমেলার পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই একটি মাসে প্রতিদিন সকল শ্রেণীর পাঠক-পাঠিকার কথা চিন্তা করে লেখক ও প্রকাশনীরা নিত্যনতুন বই স্টলগুলোতে নিয়ে আসে। কবি, সাহিত্যিক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক ও ছড়াকারদের সঙ্গে পাঠক-পাঠিকার মিলন ও সেতুবন্ধন রচিত হয়। কিন্তু তার পরেও একটি প্রশ্ন ইদানীং খুব জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছে, বইকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেও অনেকের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে যাচ্ছে। বইয়ের বদলে অনেকে ইন্টারনেটে বই পড়াতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু এটাও সত্য যে, নিজের হাতে ধরে, বইয়ের প্রচ্ছদের দিকে তাকিয়ে থাকার মধ্যেও যে একটা আনন্দ রয়েছে তা থেকে হয়ত তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। মাদকের নেশার ছোবলে পড়ে অনেকে আত্মঘাতী হয়। আবার বই পড়ার অভ্যাস জীবন থেকে হারিয়ে ফেললে যে আত্মঘাতী হতে হয় তা হয়ত অনেকে জানে না। বইয়ের পাতার প্রতিটি ভাঁজে যে গন্ধ, রস, রং ও আকর্ষণ শক্তি লুকায়িত তা আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হলে আমাদের জীবনটাই ব্যর্থতার গ্লানিতে পূর্ণ হয়ে যাবে। বই পড়ার নেশা আবার ভাল। কারণ বই সমাজের সমস্ত দৈন্যতা, কালিমা ও ব্যর্থতা এক নিমেষে দূর করে দিয়ে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণ করতে পারে। বই পড়া এবং বই কেনা শুধু একুশে বইমেলার মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং বইয়ের মধ্যে যে অদৃশ্য সৌন্দর্যময়তা, কল্পনাশক্তির প্রখরতা বিদ্যমান তা যেন সারাটি বছর বই পড়ার মধ্য দিয়ে আহরিত হয়। প্রতি বছর বইমেলা আসবে। আমরা বইমেলায় যাব। বইমেলার পরিধি ও দর্শনার্থীর সংখ্যা হয়ত বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আনন্দ সহকারে যদি বই না কিনে খালি হাতে ফিরে আসি তাহলে কি লাভ? বনানী, ঢাকা থেকে
×