স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন এবার নিউজিল্যান্ড সফরে দ্বিতীয় টেস্ট, নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলছে, তখন দেশে আসার বিমানে চড়েছেন টেস্ট স্প্যাশালিস্ট ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক। কারণ প্রথম টেস্টে ব্যাটিং করতে গিয়ে তিনি পাঁজরে ব্যথা পেয়েছিলেন। সেই ব্যথায় দ্বিতীয় টেস্টের দল থেকেই ছিটকে পড়েন। আর তাই দল যখন দ্বিতীয় টেস্টে দ্বিতীয়দিনে খেলতে নামে, সেদিন শনিবার দেশে ফিরে আসেন মুমিনুল। তবে দ্বিতীয় টেস্টের শেষ তিনটিদিন ছাড়া পুরো সফরজুড়েই দলের সঙ্গে ছিলেন মুমিনুল। অস্ট্রেলিয়ায় কন্ডিশনিং ক্যাম্প শেষে নিউজিল্যান্ডেও দলের সঙ্গেই ছিলেন। দলকে একের পর এক ম্যাচ হারতে দেখেছেন। বাংলাদেশ দল তিন ওয়ানডে, তিন টি২০ ও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের সবকটিতে হেরেছে। দলের বেহাল দশাও হয়েছে। দুরবস্থা হয়েছে। মুমিনুল মনে করছেন এ দুরবস্থা কাটান সম্ভব। মানসিক যে অবস্থা, তাও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
মানসিক অবস্থা, দুরবস্থা নিয়ে মুমিনুল বলেছেন, ‘কাটিয়ে উঠা অবশ্যই সম্ভব। কেননা আমি যখন থেকে জাতীয় দলে ঢুকেছি। চার বছর ধরে। আমি সবসময় দেখছি যে, দল যখন খারাপ খেলে তখন সবাই এক মানে ঐক্য সবসময় ভাল থাকে। আমি তখন থেকে দেখছি, এখনও পর্যন্ত ওই জিনিসটাই আছে। আগে অনেক সময় দেখা যেত, খারাপ খেললে দল ছন্নছাড়া হয়ে যায়, আমি বাংলাদেশ দলে যখন থেকে ঢুকছি তখন থেকে দেখছি, যখন খারাপ খেলে তখন আরও একতা বাড়ে। আমার মনে হয় না, তেমন কোন সমস্যা হবে।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বলতে গিয়ে মুমিনুল জানান, ‘পুরো সিরিজে হয়ত রেজাল্ট হয়নি। আমার কাছে মনে হয়, অনেক ইতিবাচক দিক আছে। আমার অভিজ্ঞতা চিন্তা করলে যেটা আমি পেয়েছি, নিউজিল্যান্ড সিরিজে আমি যা শিখেছি, আমি আমার জীবনে অর্ধেক বেশি সময় শিখেছি। এই সিরিজ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। যা আমার পরবর্তী ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অনেক বেশি কাজে দিবে।’
নিজের ব্যাটিং নিয়ে বলতে গিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘এটা আমার মনে হয় প্রথমে বোর্ডকে, টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচ মানে হাতুরুসিংহেকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত। বোর্ডকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত। আমি সফর শুরু হওয়ার অনেকদিন আগে গিয়েছি। পুরো একমাস সময় পেয়েছি। ওই জিনিসটা আমার খুব কাজে লেগেছে। ওখানে প্র্যাকটিস করাটা অস্ট্রেলিয়ায়, পরে নিউজিল্যান্ডে পুরো সিরিজ। একটা মাস ওই কন্ডিশনে প্র্যাকটিস করেছি। ওই জিনিসটা অনেক কাজে দিছে। এটার কারণে আমার কাছে খুব সহজ ছিল, ওই জায়গায় ভাল খেলাটা।’ নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজে দলের সঙ্গে থাকলেন, খেলেছেন শুধু প্রথম টেস্টটি। প্রথম ইনিংসে ৬৪ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩ রান করেছেন। দ্বিতীয় টেস্টে আর খেলতে পারেননি। ইনজুরিতে পড়ে গেছেন। এখন ভারতের বিপক্ষে ৯ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারিতে হতে যাওয়া টেস্টটিতে খেলতে পারবেন কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। মুমিনুলের কথাতেই তা পরিষ্কার, ‘এখন আগের চেয়ে কিছুটা কম (ব্যথা)। খারাপ না। ইনশাল্লাহ, সামনে হয়তো যাওয়ার আগে ফিটনেস টেস্ট দিব। যদি পাস করি, ইনশাল্লাহ যাব।’
ভারত সফরে কি হবে, তা নিয়ে চিন্তা নেই মুমিনুলের, ‘কি হবে এখনও চিন্তা করতেছি না। স্পিন ট্র্যাক হলে, স্পিন ট্র্যাক হবে। পেস হলে পেস। আমরা হয়তো পুরোপুরি প্রস্তুতিটাই নিয়ে যাব। স্পিন, পেস দুটোই। এখন অল্প সময়ের মধ্যে নিজেকে এখন তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে হবে। ওখানেও গিয়ে পারফর্ম করতে হবে। দিন শেষে আপনার পারফর্মেন্সটা কাউন্ট হবে।’ ক্যারিয়ারে ২০টি টেস্ট খেলেন। ৪টি শতক করেন। এরমধ্যে সব শতক দেশের মাটিতে। দেশের বাইরে মুমিনুলের কোন শতক নেই। দেশের বাইরে খেলেছেন ৬টি টেস্ট। এবার দেশের বাইরে অনেক খেলা রয়েছে। মুমিনুলও দেশের বাইরে শতক করার দিকেই মনোযোগী, ‘দেশের বাইরে টেস্ট শতক নাই। আপাতত চেষ্টা করব ভারতে সিরিজ আছে, তারপর শ্রীলঙ্কায় আছে। চেষ্টা করব আপনি যেটা (বিদেশের মাটিতে শতক) বলছেন, সেটা কাটিয়ে উঠার জন্য। ইনশাল্লাহ, চেষ্টা করব।’ টেস্টে নিয়মিত ব্যাটসম্যান মুমিনুল। কিন্তু নির্ধারিত ওভারে সুযোগই মিলে না। মুমিনুল তা নিয়ে ভাবতেও রাজি নন। জানিয়েছেন, ‘না, এমন কোন (ওয়ানডে খেলা) চিন্তা করি নাই। ওইটা হলেও পরবর্তীতে। যদি সুযোগ পাইতাম, ওটা পরের কথা। সুযোগ পাইলেও আমি জানি না পারব কি, পারব না। কিন্তু আমি চেষ্টা করব। ওটা নিয়ে এখন চিন্তা করি না। আপাতত টেস্ট নিয়ে চিন্তা করতেছি। টেস্টে আরও ভাল মতো খেলে, ভাল কিছু করে ওটা পরবর্তীতে। ওটা টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। আমার ব্যাপার নয়।’ ভারত সফরে শেখাতেই নজর দিচ্ছেন মুমিনুল। বলেছেন, ‘প্রত্যেক সফরে যেটা হয়নি, চেষ্টা করি যে শিখছি, সেটা যেন কাজে লাগাতে পারি। যেটা পারি নাই বড় ইনিংস খেলতে। চেষ্টা করব বড় ইনিংস খেলতে।’