ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলবে না, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠক করে বার্তা পার্থর

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলবে না, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠক করে বার্তা পার্থর

অনলাইন ডেস্ক \ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংঘর্ষ মেটাতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বিবদমান দুই গোষ্ঠীকে মুখোমুখি বসালেন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্র সংসদের ভোটে সংগঠনের হয়ে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তার অভিন্ন একটি তালিকাও প্রাথমিক ভাবে তৈরি করে দিয়েছেন পার্থবাবু। এবং স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ‘‘টিএমসিপির নামে একাধিক তালিকা দেওয়া চলবে না। একটিই তালিকা হবে।’’ ২৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ভোট। তার আগে টিএমসিপির গোষ্ঠী-সংঘর্ষে ‘বিব্রত’ শিক্ষামন্ত্রী সোমবার তাঁর নিজের বাড়িতে দু’টি গোষ্ঠীকে ডেকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কোনো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না। এর জন্য কোনও গোষ্ঠীর আলাদা করে মনোনয়নও গ্রাহ্য করা হবে না। আজ মঙ্গলবার ও কাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে। যে সব আসনে টিএমসিপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে, সেগুলো এই দু’দিনে প্রত্যাহার করে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন পার্থবাবু। অভিন্ন সেই চূড়ান্ত তালিকা তাঁকে আজ, মঙ্গলবার দেখিয়ে নেওয়ার কথাও শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন বলে সূত্রের খবর। বেশ কয়েক মাস ধরেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপি-র বর্তমান রাজ্য সভাপতি জয়া দত্তের গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাত চলছে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের গোষ্ঠীর। এ দিনের বৈঠকে জয়া, অশোক ছাড়া ছিলেন টিএমসিপির সাধারণ সম্পাদক কুণাল সামন্ত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছিলেন অশোক গোষ্ঠীর নেতা আব্দুল কাইয়ুম মোল্লা-সহ বেশ কয়েক জন। পাশাপাশি ছিলেন জয়া গোষ্ঠীর নেতা মনিশঙ্কর মণ্ডল, লগ্নজিতা চক্রবর্তীরাও। কাইয়ুম যাঁকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ, সেই রুমানা আখতারও এ দিন বৈঠকে ছিলেন। প্রায় বিরোধীশূন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছাত্র সংসদের ভোটাভুটিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে চলে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার জয়াদেবী বহিরাগতদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার পরেই পরিস্থিতি চূড়ান্ত আকার নেয়। দু’দলের মধ্যে মারপিটে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তার প্রেক্ষিতে এ দিন মন্ত্রী ছাত্র সংগঠনের নেতাদের জানিয়ে দেন, এই ধরনের বিশৃঙ্খলায় স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও বিরক্ত ও অসন্তুষ্ট। তাই এই ঘটনাকে আর কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। কেন বহিরাগতদের নিয়ে জয়াদেবী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছিলেন, তার কারণও জানতে চেয়েছেন মন্ত্রী। বৈঠকের পরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘সমস্যা মিটে গিয়েছে। একটি প্যানেলই নির্বাচনে লড়বে। কোনও গোষ্ঠীবাজি বরদাস্ত করা হবে না। পুরো বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকার জন্য পুলিশকেও জানাব। উপাচার্যের সঙ্গেও কথা বলব।’’ জয়া গোষ্ঠীর নেত্রী লগ্নজিতাও বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার হুমকির মুখে পড়ছেন বলে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন। পাশে ছিলেন রুমানা। সুত্রের খবর, লগ্নজিতা পুরো বিষয়টি মন্ত্রীকে বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন। অশোক গোষ্ঠীর সমর্থক সায়নী সরকার পাল্টা অভিযোগ করেন যে, জয়াদেবীর নাম করে তাঁদেরও হুমকি দেওয়া চলছে। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দেন, ছাত্রীদের গুরুত্ব দিতে হবে। ছাত্রীরা কোনও সমস্যায় পড়লে তা তিনি নিজে দেখবেন। এ দিন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘ছাত্রীদের ৩০ শতাংশ আসনে লড়তে দিতেই হবে।’’ কাইয়ুমও যাতে কোনও রকম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না করেন, সেই বিষয়ে তাঁকে সতর্ক করে দিয়েছেন পার্থবাবু। নতুন আসা পড়ুয়াদের নিয়েও একটি কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এই সব পড়ুয়াকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য সিনিয়র পড়ুয়াদের নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তো কাইয়ুম ছাড়া কোনও কমিটিই নেই। এ ভাবে চলতে পারে না। সকলকে নিয়ে চলতে হবে।’’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×