ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শূন্যগর্ভ উদ্বোধনী ভাষণ

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭

শূন্যগর্ভ উদ্বোধনী ভাষণ

উদ্বোধনী ভাষণেও কথা রাখলেন না তিনি। আত্মম্ভরিতার ছাপ ছিল তার ভাষণে। ক্যাপিটল হিলে শুক্রবার শপথ নেয়ার আগের রাতে রিপাবলিকান দলের তহবিল যোগানদাতাদের সঙ্গে নৈশভোজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছিলেন, ‘কালকের উদ্বোধনী ভাষণটি আমি তৈরি করেছি, স্টিফেন মিলার এ ব্যাপারে আমাকে সহায়তা করেছেন। উপস্থিত অতিথিবৃন্দের সামনেই তিনি এ কথা বলেন। কোন মার্কিন প্রেসিডন্টই উদ্বোধনী ভাষণ নিয়ে আগে থেকে এ রকম খোলামেলা মন্তব্য করেননি। পূর্বসূরিদেরও সমালোচনা করতে ছাড়েননি তিনি। খবর সেøট অনলাইনের। রিপাবলিকান পার্টির ক্যাম্পেন ম্যানেজার ও ট্রাম্পের উপদেষ্টা কেলিন ক্যানোয় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ট্রাম্পের উদ্বোধনী ভাষণে আত্মম্ভরিতামূলক কিছু থাকবে না। শুক্রবার সকালে ফক্স টেলিভিশনের ফক্স এ্যান্ড ফ্রেন্ডস অনুষ্ঠানেই তিনি এমন মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, বক্তৃতাটি যেমন হবে বলা হয়েছিল সে রকম হয়নি। টেলিপ্রম্পটারের সহায়তায় দেয়া ওই ভাষণে ট্রাম্প ‘আমি’ শব্দটি তিনবার উচ্চারণ করেন। উদ্বোধনী ভাষণ লেখার জন্য ট্রাম্প এক মাস আগেই তার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সপ্তাহতিনেক আগে তিনি টুইটারে একটি ছবি পোস্ট করেন। তাতে দেখা যায়, প্যাড আর কলম নিয়ে বসে ট্রাম্প লিখছেন। ছবির ক্যাপশন ছিল- উদ্বোধনী ভাষণ লিখছেন ট্রাম্প। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প একদৃষ্টে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছেন। একজন স্বাভাবিক প্রেসিডেন্ট এ কাজটি করেন না। তিনি কখনও উদ্বোধনী ভাষণ লেখার কৃতিত্ব নেন না বা এ ব্যাপারে ভুয়া ছবি দিয়ে নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করেন না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এ ভাষণে মৌলিকত্বের অভাব ছিল। পূর্বসূরিদের প্রচ্ছন্ন বিষোদ্গারের ইঙ্গিত দিয়ে উদ্বোধনী ভাষণে ট্রাম্প বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীতে একটি ক্ষুদ্রগোষ্ঠী সরকারের সাফল্যের ফল ভোগ করেছেন আর এজন্য ব্যয় নির্বাহ করতে হয়েছে জনগণকে। আবার তিনি বলেছেন, ওয়াশিংটন বিকাশলাভ করেছে কিন্তু জনগণ সম্পদের ভাগ পায়নি। রাজনীতিকরা লাভবান হয়েছেন কিন্তু মানুষের চাকরি খোয়াতে হয়েছে। কারখানা বন্ধ হয়েছে। ক্ষমতাসীন মহল তাদের স্বার্থ রক্ষা করেছে কিন্তু দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি। তাই বিশ্লেষকগণ ট্রাম্পের ভাষণকে নৈতিকভাবে অন্তঃসারশূন্য এক ব্যক্তির নৈতিকভাবে অন্তঃসারশূন্য ভাষণ বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্পের পূর্বসূরি জর্জ ডব্লিউ বুশের উদ্বোধনী ভাষণটির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সেসব মার্কিনী তাকে ভোট দেয়নি তিনি তাদের কাছে সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। ট্রাম্পের মতো তিনিও কম পপুলার ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। অভিষেকের তিন দিন আগে টেক্সাসে এক সমাবেশে বুশ মানবতা, ঐক্য ও রাজনৈতিক সমঝোতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছিলেন, ‘আমার পিতা আমাকে শিখিয়েছেন কেবলমাত্র ব্যক্তিগত অর্জনই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়।’ তিনি ডেমোক্র্যাটদের উদ্দেশে বিশেষভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। বুশ বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক, ভাষাগত ও বর্ণগত সব বিভেদ এখন অতীতের বিষয়। আমরা সবাই টেক্সান, সবাই আমরা আমেরিকান।’ অভিষেকের দুদিন আগে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির বৈঠকে তিনি দলে ভিন্ন মত, ভিন্ন চিন্তা ও ভিন্ন ভাষাভাষী লোকজনের আগমনকে স্বাগত জানান। স্প্যানিশ ভাসায় তিনি বলেন, ‘এল সুয়েনা আমেরিকানেস পারা টুডোস’ অর্থাৎ ‘আমেরিকার স্বপ্ন সবার জন্য’। অভিষেকের আগের রাতেও লিঙ্কন মেমোরিয়ালে তিনি সর্বদলীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি কৌতুক করে বলেছিলেন, ‘উপস্থিত লোকজন আমার রানিংমেট ডিক চেনিকে দেখতে এসেছে।’ উদ্বোধনী ভাষণেও তিনি একই সুর ধরে রাখেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে আমেরিকার ভূমিকা হচ্ছে রক্ষাকর্তার, দখলদারের নয়। প্রতিরক্ষা সহায়তা দেয়া, অধিগ্রহণ করা নয়।’ অন্যদিকে ট্রাম্প তার পূর্বসূরির মতো চিরাচরিত পথে হাঁটেননি। তিনি অভিষেকের আগের সময়টাতে টিভি চ্যানেল সিএনএন, এনবিসি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে কষে গালাগাল করেছেন। নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনকে ‘অপরাধী’ এবং ডেমোক্র্যাটদলীয় মানবাধিকারকর্মী জন লুইসকে ‘মিথ্যাবাদী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রিয়েল এস্টেট টাইকুন ও সাবেক রিয়েলিটি শো উপস্থাপক ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পদাধিকারবলে ‘কমান্ডার ইন চীফ’ হয়েছেন বটে; কিন্তু টুইটারে তিনি এর আগে থেকেই ‘গলফার ইন চীফ’ বলে নিজেকে পরিচয় দিয়ে এসেছেন। অভিষেকের আগের রাতে ট্রাম্প রীতি অনুযায়ী লিঙ্কন মেমোরিয়ালে যান ঠিকই, তবে ইচ্ছাকৃত ভুল তথ্য দেন। তিনি দাবি করেন, সেখানে এর আগে কখনও এত লোক জড়ো হয়নি।
×