ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র

ঘৃণা নয় ভালবাসা, দেয়াল নয় সেতু চাই

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭

ঘৃণা নয় ভালবাসা, দেয়াল নয় সেতু চাই

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পরদিন তার বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন ও দেশের অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়েছে ২০ লাখের বেশি মানুষ। প্রধানত নারী সংগঠনগুলোর আয়োজনে সেøাগান মুখরিত এ বিক্ষোভ সমাবেশে শান্তিপূর্ণভাবে বিমূঢ় উপহাস ছুড়ে দেয়া হয় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। খবর এএফপির। ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ সমাবেশ এক মহাসমুদ্রে পরিণত হয় এবং অচল হয়ে পড়ে শহরের ব্যবসা কেন্দ্র। সমাবেশে অনেক পুরুষও অংশ নেন। নারীদের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথিত ‘পুরুষতান্ত্রিক আচরণের’ প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। নারী অধিকার কর্মীদের আশঙ্কা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে তাদের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্বজুড়ে অন্তত ৬০০ বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয়েছে ওয়াশিংটনে। পরিকল্পনা ছিল যে, তারা হোয়াইট হাউসের সামনে মিছিল নিয়ে যাবেন। কিন্তু মিছিলের পথ জুড়েই লাখ লাখ বিক্ষোভকারী অবস্থান নেয়ায় তা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিতি ছিল শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানের চেয়েও অনেক অনেক বেশি, অনেক তারকা শিল্পীও এ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সদ্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, সঙ্গীতশিল্পী ম্যাডোনা, গায়িকা কেটি পেরি, সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন, অভিনেত্রী জুলিয়ান মোর ও স্কারলেট জোহানসন, নারী অধিকারকর্মী গ্লোরিয়া স্টাইনহ্যাম। সমাবেশে মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী ম্যাডোনা বলেন, ‘এই দিন আমাদের জীবন শুরু করার দিন। বিপ্লব এখান থেকেই শুরু হচ্ছে। এটা আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের পরিচয়, আমাদের সম অধিকারের লড়াই। এই অন্ধকারের বিরুদ্ধে চলুন সবাই একসঙ্গে লড়াই করে জানিয়ে দিই যে আমরা ভীত নই, আমরা একা নই এবং আমরা পেছনে ফিরব না।’ এরপর তিনি নিজেকে তুলে ধরার বক্তব্য সংবলিত একটি গানও গেয়ে শোনান। ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে অনেকেই সেøাগান দেন, ‘তুমি আমার প্রেসিডেন্ট নও।’ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘ঘৃণা নয় ভালবাসা,’ ‘দেয়াাল নয়, সেতু’ ইত্যাদি। ফ্যাশন এ্যাক্সেসরি ডিজাইনার ব্রুকলিনের জেনিফার বেহর বিক্ষোভের অন্যতম প্রতীক গোলাপি রঙের পুশি হ্যাট চাপিয়ে বাল্টিমোর থেকে ওয়াশিংটন এসে পৌঁছান যাত্রীবোঝাই ট্রেনে করে। বেহর (৪২) বলেন, আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে এ সমাবেশে। আমরা দেখাতে চাই যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কংগ্রেসে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠতা আমাদের দেশকে মতাদর্শের দিক থেকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন না। আমি নারীদের প্রতি ট্রাম্পের আচরণে ক্ষিপ্ত। তিনি বিশেষভাবে ক্রোধ প্রকাশ করেছেন ডেমোক্র্যাট হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে রিপাবলিকানদের ব্যাপক সমালোচনায়। শিকাগো থেকে রাতে ভাড়া করে বাসে সমাবেশে এসেছে হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপ। তারা ট্রাম্প বিরোধী বিভিন্ন লেখা সংবলিত ব্যানার দুলিয়ে সেøাগান দেয়। কিম লি উইলকিনস মেরিল্যান্ড থেকে। তার আসার বিশেষ উদ্দেশ্য হচ্ছে এ্যাফোর্ডেবল কেয়ার এ্যাক্ট বা ওবামার স্বাস্থ্যনীতি বাতিলে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো। ৬০ বছর বয়স্ক এ আফ্রিকান-আমেরিকান বলেন, তিনি সাম্প্রদায়িক বিভেদের যে কদাকার দিনগুলোতে ফিরে যেতে ভয় পান। আমরা ৫০ বছর আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যাচ্ছি। আমরা তা মেনে নিতে পারছি না। ট্রাম্প আমার পক্ষে নেই। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পক্ষে নেই তিনি। লস এঞ্জেলেসের পুলিশ দফতরের মুখপাত্র এন্ড্রু নিম্যান বলেছেন, তার তিন দশকের চাকরি জীবনে এ শহরে যত সমাবেশ দেখেছেন, সেগুলোর মধ্যে এটি বৃহত্তম। সংগঠকদের হিসেবে এখানে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। তিনি বলেন, আমি সত্যিকারভাবে দিনটিকে বেশ উপভোগ করেছি। এটা এক চমৎকার মানবসাগর। এটা বিস্ময়কর। বিশ্লেষকরা বলেছেন, ওয়াশিংটনে এ সমাবেশ এটাই প্রমাণ করেছে যে, মার্কিন সমাজে গভীর বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে এবং ট্রাম্পের ভবিষ্যত কর্মকা- নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ভীতির।
×