ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

শীতের ফুল চন্দ্রমল্লিকা

হরেক রং আর সৌন্দর্যে ভরে উঠেছে বাগান

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

হরেক রং আর সৌন্দর্যে ভরে উঠেছে বাগান

মোরসালিন মিজান ॥ এখন শীতকাল। বাগানে নতুন ফুল। একটি দুটি নয়। অনেক। তবু চন্দ্রমল্লিকাকে আলাদা করা যায়। বিশেষভাবে চোখে পড়ে। ঘ্রাণ নেই। সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো। ফুলটির হরেক জাত। একেকটি একেক রঙের। গঠনের দিক থেকেও কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। কারও কারও মনে হতে পারে, অন্য ফুল। আসলে তা নয়। সবই চন্দ্রমল্লিকা। দেখা হয়েছে? এখন যে কোন বাগানে একবার তাকালেই হলো। চোখে পড়বে। শীতকালটাই যে চন্দ্রমল্লিকার! জাপানে অষ্টম শতকে এ ফুলের চাষ শুরু হয়। দেশটির চন্দ্রমল্লিকা জাতীয় ফুল। জাপান থেকে ধীরে ধীরে ফুলটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রবেশ করে আশপাশের দেশগুলোতে। পনেরো শতকে চাষ শুরু হয় চীনে। চীন ও কোরিয়া ফুলটিকে বিশেষভাবে আপন করে নিয়েছে। দেশগুলো ফুলটিকে নিজেদের জ্ঞান করে। চন্দ্রমল্লিকা ১৭ শতকে আসে ইউরোপে। বর্তমানে প্রায় সকল দেশেই হয়। বিদেশে পরিচিত ক্রিসানথেমাম নামে। বাংলাদেশে চন্দ্রমল্লিকা। চন্দ্র বা চাঁদ থেকে চন্দ্রমল্লিকা নাম। চাঁদের মতোই সুন্দর ও আকর্ষণীয়। ডাকা হয় চন্দ্রমুখী নামেও। কুঁড়ি আসা শুরু হয় অক্টোবরে। নবেম্বর থেকে ফুল। এখন জানুয়ারি। বাগানে তো বটেই, সব দোকানে সাজানো আছে চন্দ্রমল্লিকা। যারা চেনেন না তারাও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। কেনেন। ঘর সাজান। কোনটি বলের মতো দেখতে। পাপড়ি ভেতরের দিকে মোড়ানো। কোনটির পাপড়ি বাইরের দিকে। ঝুলন্ত। কিছু ফুলের মাঝখানটা আবার চাকতির মতো। অনেকে বিভ্রান্ত হন। ভাবেন সূর্যমুখী। তারাপদ রায় তো লিখেছিলেন- কোনটা যে চন্দ্রমল্লিকার ফুল/ আর কোনটা যে সূর্যমুখী- বার বার দেখেও/ আমার ভুল হয়ে যায়,/ আমি আলাদা করতে পারি না...। চন্দ্রমল্লিকার অনেক রং। সাদা, হলুদ, মেরুন, হালকা গোলাপী, কালচে লাল- সবই গায়ে মেখে আছে। সাদা রং চন্দ্রমল্লিকা শুদ্ধতার প্রতীক। পবিত্র একটি আবহ তৈরি করে। এ বিবেচনায় প্রিয়জনের কফিনে, সমাধির উপর ছড়িয়ে দেয়া হয় সফেদ চন্দ্রমল্লিকা। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে এ দৃশ্য বেশি চোখে পড়ে। ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, ক্রোয়েশিয়ায় সাদা চন্দ্রমল্লিকায় শেষ বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। মৃত ব্যক্তির স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বা প্রার্থনাসভায়ও সাদা ফুলটি অপরিহার্য। এইটুকুন জেনে কেউ কেউ ভেবে বসতে পারেন, সাদা চন্দ্রমল্লিকা গভীর শোক বেদনা আর পরিতাপের কালেই প্রাসঙ্গিক। আদতে তা নয়। বিয়ের অনুষ্ঠানেও চন্দ্রমল্লিকার বিশেষ ব্যবহার হয়ে আসছে। নব দম্পতির শুভ কামনায় সাদা চন্দ্রমল্লিকা উপহার দেয়া হয়। জন্মদিনসহ আনন্দঘন উৎসব অনুষ্ঠানে অনিবার্য হয়ে ওঠে ফুলটি। জাপানে শুধু এই ফুলে বড় একটি উৎসব হয়। উৎসবের নাম- ফ্যাস্টিভ্যাল অব হ্যাপিনেস। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা জানান, চীন ও জাপানের প্রজাতি চন্দ্রমল্লিকা সংকরণ ও নির্বাচনের মাধ্যমে ইউরোপ ও আমেরিকায় শ্রীবৃদ্ধি ঘটানো হয়। পাপড়ির গঠন ও ফুলের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চন্দ্রমল্লিকা কয়েকটি শ্রেণীর হয়ে থাকে। হেয়ারি, কেয়ারি, জাপানীজ, ইনকারভড, পমপরা ইত্যাদি এ ফুলের উন্নত জাত। বর্তমানে শুধু থাইল্যান্ডে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার জাতের চন্দ্রমল্লিকা হয়। বাংলাদেশে অতো নেই। তবে বেশ কয়েকটি রঙের মধ্য থেকে পছন্দেরটি বেছে নেয়া যায় অনায়াসেই। আপনার কোনটি?
×