ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আজ একনেকে অনুমোদন

সওজের যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৫৮৬ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩ জানুয়ারি ২০১৭

সওজের যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৫৮৬ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব

আনোয়ার রোজেন ॥ দেশের জাতীয় সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ)। ফলে প্রয়োজনীয় মেরামত কাজও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। তাই দ্বিতীয় পর্যায়ে ভারতের কাছ থেকে নেয়া ২০০ কোটি ডলার রাষ্ট্রীয় ঋণ হতে (এলওসি) এ খাতে যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এজন্য প্রায় ৫৮৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে ভারত দেবে প্রায় ৪৭২ কোটি টাকা। শর্ত অনুযায়ী, প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা ভারত থেকে আমদানি করা হবে। আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে। বাজারদর যাচাই ছাড়াই যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাবসহ নানা অসঙ্গতির কারণে প্রকল্প প্রস্তাবটি এতদিন ঝুলেছিল। সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করবে সওজ। পরিকল্পনা কমিশন ও সওজ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৪৪ ধরনের এক হাজার ৯৩টি নির্মাণ যন্ত্রপাতি ও ৩৬ সেট কারিগরি সরঞ্জাম কেনা হবে। এর মধ্যে রয়েছে- তিন টন ডাম্প ট্রাক ২১টি, ৩-৫ টন ট্রাক ৩৪৫টি, ওয়াটার ট্যাঙ্ক ২১টি এবং মোটরসাইকেল ২৫০টি। এছাড়া ঋণের অর্থে স্টিল রোলার ৬৭টি, সয়েল কম্প্যাক্টর ২৩টি, পে লোডার ৬৭টি, এক্সক্যাভেটর ৬৭টি, মোটর গ্রেডা ২৫টি, ব্যাকহো লোডার ১৭টি, বুলডোজার ১৯টি, রেকার ৬৫টি। সওজ সূত্র জানায়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ দেশের মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা মহাসড়ক নির্মাণ, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে ৬৫টি রোড ডিভিশন, ১৩৭টি রোড সাব-ডিভিশন, ১৮টি মেকানিক্যাল ডিভিশন ও ২১টি মেকানিক্যাল সাব-ডিভিশন অন্তর্ভুক্ত। এ ডিভিশন ও সাব-ডিভিশনসমূহ দেশের প্রায় ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার মহাসড়ক, ১৮ হাজার ২৫৮টি ব্রিজ এবং ফেরি ও পন্টুন নির্মাণ, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের সাথে যুক্ত। ডিভিশন ও সাব-ডিভিশনসমূহে আধুনিক এবং অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি না থাকায় সড়ক নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজ দ্রুত ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ হতে ভারতীয় ক্রেডিট লাইনের (এলওসি) অর্থায়নে প্রাথমিকভাবে মোট ৬৯৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। এর বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৬ সালের এপ্রিল হতে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর ২০১৬ সালের ২ মে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৫৮৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৭ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য খোরশেদ আলম চৌধুরী পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আধুনিক এবং অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরকে শক্তিশালীকরণসহ নতুন সড়ক, মহাসড়ক ও সেতু নির্মাণ, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, ভারতের কাছ থেকে ২০০ কোটি ডলার ঋণ নেয়া হচ্ছে, যা দেশের অবকাঠামো বিশেষ করে রেল-বিদ্যুত ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে। এর আগেও ২০১০ সালে ভারতের মনমোহন সিংয়ের সরকার ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল বাংলাদেশকে। নতুন করে নেয়া ঋণের সুদের হার ও শর্ত চলমান ১০০ কোটি ডলারের ঋণের মতোই।
×