ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

থাই শাটলার থানইয়াসুদা ওঙ্গিয়া বললেন, এদেশে এসে এই প্রথম বড় ধরনের কোন সাফল্য পেলাম

বাংলাদেশকে সারাজীবন মনে রাখবেন ওঙ্গিয়া

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশকে সারাজীবন মনে রাখবেন ওঙ্গিয়া

রুমেল খান ॥ গত ১০ নবেম্বর পালন করেছেন নিজের অষ্টাদশ জন্মদিন। মায়াবী চেহারা। যেকোন পরিস্থিতিতে মুখে হাসি যেন লেগেই থাকে। স্বভাবে কিঞ্চিত লাজুক হলেও মিশুকই বলতে হবে। কেননা ইন্টারভিউয়ের জন্য একটু সময়ই চাইতেই বিনা দ্বিধায় রাজি হয়ে গেলেন থানইয়াসুদা ওঙ্গিয়া। সুদর্শনা এই থাই শাটলার ঢাকায় সদ্যসমাপ্ত ‘ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ওপেন আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন চ্যালেঞ্জ’ আসরে অংশ নিয়ে মিশ্র দ্বৈতে রানারআপ হন। দেশে ফিরে যাওয়ার আগে দৈনিক জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে জানান, ‘বাংলাদেশে এসে এই প্রথম বড় ধরনের কোন সাফল্য পেলাম। চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও ক্যারিয়ারে এই প্রথম ফাইনালে খেলেছি। খুব ভাল লেগেছে। আর এ কারণেই বাংলাদেশকে সহজে ভুলব না।’ বয়স যখন ১২, তখন থেকেই ওঙ্গিয়া খেলতে শুরু করেন ব্যাডমিন্টন। তখন ২০১০ সাল। ব্যাডমিন্টনে কিভাবে এলেন? ওঙ্গিয়ার স্মৃতিচারণ, ‘বাবা ব্যাডমিন্টন খেলা খুব পছন্দ করতেন। তবে নিজে শাটলার হতে না পারার আক্ষেপ ঘোচাতে চেয়েছিলেন তার মেয়েকে শাটলার বানিয়ে। তার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই চেষ্টা করছি। তাছাড়া আমার নিজেরও খেলাটা অনেক পছন্দের ছিল।’ ওঙ্গিয়ার এক ভাই ও এক বোন আছে। ওঙ্গিয়াই সবার বড়। তারাও ব্যাডমিন্টন খেলে। এ পর্যন্ত প্রায় ১০টির মতো আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন। বড় রকমের সাফল্য পেয়েছেন এবার বাংলাদেশে এসেই। মিশ্র দ্বৈতের ফাইনালে ভারতের সাতউইকসাইরাজ রানকিরেড্ডি-মণীষাকে জুটির কাছে ২১-১২, ২১-১২ পয়েন্টে হেরে যান ভিয়েতনামের ভিরিয়াংকুরা তানুপাত-থানইয়াসুদা ওঙ্গিয়া জুটি। এছাড়া মহিলা দ্বৈতে প্রথম রাউন্ডেই ওঙ্গিয়া হেরে বিদায় নেন। তার জুটি ছিলেন স্বদেশী নুতপ্রায়ে প্রমদেজ। এছাড়া থাইল্যান্ডের ঘরোয়া আসরগুলোতে একক, দ্বৈত এবং মিশ্র দ্বৈতে এ পর্যন্ত ২০টিরও বেশি শিরোপা জিতেছেন থাইল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে পড়া ওঙ্গিয়া। ব্যাডমিন্টন নিয়ে কোন লক্ষ্য? ‘অবশ্যই। আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন অলিম্পিকে অংশ নেয়া এবং দেশের জন্য স্বর্ণপদক জেতা। সে লক্ষ্যেই এখন থেকে নিজেকে তৈরি করছি।’ ওঙ্গিয়ার চোখেমুখে যেন পরিলক্ষিত হলো দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়। প্রিয় শাটলার? ‘আমার কোচ ওয়াসাপন উত্তমাং (পাশেই বসা ছিলেন, শুনে হেসে ফেললেন ওয়াসাপন!)’। ক্যারিয়ারে স্মরণীয় কোন ম্যাচ? ‘থাইল্যান্ডে একটি টুর্নামেন্টে এককের একটি ম্যাচে খেলার সময় এ্যাঙ্কেল ইনজুরিতে পড়ি। তারপরও মনের জোরে ম্যাচটি খেলি এবং জিতেও যাই।’ ব্যাডমিন্টন ছাড়া অন্য প্রিয় খেলা? ‘সাঁতার। মজার বিষয়Ñ আমি ঠিকমতো সাঁতরাতে পারি না। শুধু মজা পাওয়ার জন্য অল্প জলে নেমে গোসন করি আর কি! এছাড়া থাই কিক বক্সিংও খুব ভাল লাগে। মাঝে মধ্যে নিজের ভাই-বোনদের শাস্তি দিতে তাদের কিক বক্সিং মেরে ঘায়েল করি। হা হা হা!’শখ? ‘ঘুম, ঘুম এবং ঘুম! কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা না ঘুমালে আমার ভালই লাগে না। অবশ্য আমার এই ঘুমকাতুরে অভ্যাসের জন্য কোচসহ সতীর্থরা আমাকে অনেক খেপায়!’ মজার সুরে বললেন ওঙ্গিয়া। বাংলাদেশে এই প্রথম আসা তার। এর আগে ভিয়েতনাম, ব্রুনেই, ফিলিপিন্স, ভারত ও মালয়েশিয়ায় গিয়ে খেলেছেন তিনি। ২০১৪ সাল থেকে থাইল্যান্ডের সিরিকুল ব্যাডমিন্টন একাডেমিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন ওঙ্গিয়া। সবশেষে বাংলাদেশ সম্পর্কে ওঙ্গিয়ার মূল্যায়ন, ‘এখানকার মানুষগুলো খুবই ভাল, মিশুক এবং অতিথিপরায়ণ। তবে রাস্তাঘাটের ধুলোবালি, ময়লা, ট্রাফিক জ্যাম, ভিক্ষুক এবং শব্দদূষণ ভাল লাগেনি। এখানকার খাবার খাওয়া হয়নি। কারণ আমরা নিজেরাই রুমে থাই খাবার রান্না করে খেয়েছি। আবহাওয়া বেশ সহনীয়। আবারও বলছি, বাংলাদেশকে আমার সবসময়ই মনে থাকবে। হয়তো আবারও আসব এই দেশে।’
×