ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোপা জেতায় মহাখুশি সাকিব

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১১ ডিসেম্বর ২০১৬

শিরোপা জেতায় মহাখুশি সাকিব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একজন অধিনায়কের সেরা প্রাপ্তি যদি ধরা হয় শিরোপা জয়, তাহলে সাকিব আল হাসান এবার শুক্রবার শেষ হওয়া বিপিএলের সেরা অধিনায়ক। তার নেতৃত্বেই যে ঢাকা ডায়নামাইটস প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতেছে। অধিনায়ক হিসেবেও বিপিএলে প্রথমবার শিরোপা জিতেছেন সাকিব। আর এই শিরোপা জিতে মহাখুশি তিনি। শুক্রবার ফাইনাল ম্যাচে রাজশাহী কিংসকে ৫৬ রানে হারিয়ে নিজেই খুশির কথা জানিয়েছেন। এমনকি বিপিএলের এ সাফল্যকে যে কোন ঘরোয়া লীগ থেকে এগিয়েও রেখেছেন, ‘বিপিএলের সাফল্যই এগিয়ে। এই টুর্নামেন্টের আবহই আলাদা। ঢাকা লীগে কখনই এত দর্শক মাঠে আসে না। আর বিপিএল আন্তর্জাতিক ম্যাচের প্রায় কাছাকাছিই। অনেক আন্তর্জাতিক তারকা খেলেন। এটা অনেক বড় ব্যাপার। এখানে ভাল করতে পারলে ভাল লাগাও বেশি।’ দলীয় প্রাপ্তিতে অধিনায়ক সাকিবকে অনেক ওপরেই রাখা যায়। বিপিএলের চার আসর হয়েছে। এরমধ্যে দুইবার ফাইনাল খেলেছেন। ২০১৩ সালের দ্বিতীয় আসরে ম্যাচ গড়াপেটায় অভিযুক্ত হয়ে পরে বিপিএল থেকে বাদ পড়া দল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে ফাইনাল খেলেছেন। এবার ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে শিরোপা জেতার আনন্দ পেয়েছেন। সেই শিরোপা ঢাকা জিতেছে তারই নেতৃত্বে। কিন্তু এবার ব্যক্তিগত প্রাপ্তিতে সাকিব অনেক পিছিয়ে আছেন। সাকিব যে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন, তা সাকিবীয় মানের সঙ্গে যায় না। ব্যাট হাতে ১৪ ম্যাচের মধ্যে ১৩ ম্যাচে ব্যাটিং করে ২০.৫৪ গড়ে ২২৬ রান করেছেন। সেরা ২০ ব্যাটসম্যানের তালিকাতেও নেই সাকিব। বল হাতেও বিশেষ কোন ঝলক দেখাতে পারেননি। ১৪ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়েছেন। সেরা ১০ বোলারের তালিকাতেও সাকিবের নাম নেই। বাংলাদেশ সেরা অলরাউন্ডার সাকিব। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারও। বিশ্ব টি২০ টুর্নামেন্টগুলো দাপিয়ে বেড়ান বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটারও তিনি। অথচ তিনিই এবার কিনা নিজ দেশে হওয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি টি২০ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল টি২০) ব্যর্থ হয়েছেন। বলতে গেলে ফ্লপই হয়েছেন। দেশের তারকা ক্রিকেটারদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছেন সাকিব। একটি ম্যাচেও অর্ধশতক নেই। অপরাজিত ৪১ রানের বেশি স্কোরও করতে পারেননি। বল হাতে সাকিব নিভে ছিলেন। ২ উইকেটের বেশি কোন ম্যাচেই শিকার করতে পারেননি। অথচ বাংলাদেশ দলের টি২০ ফেরিওয়ালা যদি কাউকে বোঝায়, সেটি একমাত্র সাকিবই। যিনি কিনা ভারতের টি২০ টুর্নামেন্ট আইপিএল, ইংল্যান্ডের ফ্রেন্ডস লাইফ টি২০ টুর্নামেন্ট, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিপিএল, পাকিস্তানের পিএসএল ও শ্রীলঙ্কার এসএলপিএলে খেলেন। দেশের একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি এসব টুর্নামেন্টে খেলেন। আর কেউ সবগুলো টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পায়নি। সাকিব তাই দেশের টি২০ ফেরিওয়ালাই হয়ে উঠেছেন। কিন্তু সেই সাকিব কিনা দেশের মাটিতে হওয়া টি২০ টুর্নামেন্টে এবার ফ্লপ হয়েছেন। ২০১৫ সালের তৃতীয় বিপিএল আসর থেকেই সাকিব ফ্লপ হয়ে আসছেন। গত আসরে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ১১ ম্যাচ খেলে ১৭.০০ গড়ে ১৩৬ রান করে। সর্বোচ্চ স্কোর করেছেন ৩৩ রান। বল হাতে ১৮ উইকেট নিতে পেরেছেন। ব্যাটিংয়ে পুরোই ব্যর্থ হন সাকিব। তবে বল হাতে সেরা পাঁচজনের একজন হন। কিন্তু সাকিবের এমন পারফর্মেন্স কী আর মন ভরাতে পারে? তার কাছ থেকে যে আরও বেশি কিছু প্রত্যাশা ছিল। এবার চতুর্থ বিপিএল আসরেও সেই ব্যর্থ হওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন সাকিব। একটি মাত্র ম্যাচে ম্যাচ সেরা হতে পেরেছেন। এবার ব্যাট হাতে গত আসরের চেয়ে ভাল করলেও বল হাতে অনেক খারাপ করেছেন। অথচ প্রথম ও দ্বিতীয় আসরের সেরা পারফরমার ছিলেন সাকিব। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও নিজের করে নিতে পেরেছিলেন। প্রথম আসরে ২০১২ সালে খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের হয়ে ২৮০ রান করেন ও ১৫ উইকেট নেন। আর ২০১৩ সালে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে ৩২৯ রান করেন ও ১৫ উইকেট শিকার করেন। দুইবারই টুর্নামেন্ট সেরা হন। তবে পরের দুই আসরেই সাকিবের কাছ থেকে আর আহামরি কোন নৈপুণ্য মিলেনি। এরপরও সাকিব খুশি। কারণ ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে যে দলীয় প্রাপ্তির দিকে শুরু থেকেই নজর দিয়েছিলেন। তার লক্ষ্য শুরু থেকে একটাই ছিল। যেভাবেই হোক ঢাকা ডায়নামাইটসকে শিরোপা জেতান। তার সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। টুর্নামেন্টের শুরুতেই সাকিব বলে দিয়েছিলেন ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলকে শিরোপা জেতানোর লক্ষ্যেই এগিয়ে যাবেন। শুক্রবার রাতে মনেও করিয়ে দিলেন তা, ‘আগেই আমি বলেছিলাম, লক্ষ্য একটিই, কাপ জিততে চাই। সেটি অর্জন করতে পারা দারুণ ব্যাপার। গোটা দল যেভাবে খেলেছে, সেটি ছিল অসাধারণ। বড় বড় ক্রিকেটার থাকলেই শুধু চলে না, মাঠে পারফর্ম করতে হয়। সবার ভূমিকা থাকে, সেসব পূরণ করতে হয়। ভাল একটি দলীয় আবহ গড়তে হয়। যেখানে সবাই পারফর্ম করতে পারে। সবকিছু হয়েছে বলেই এই সাফল্য।’ আর এই সাফল্যে সাকিব মহাখুশিও।
×