ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অযত্নে গচ্চা ১৬ লাখ টাকা শহর রক্ষা বাঁধে ফুলহীন রাসিকের বাগান

প্রকাশিত: ০৮:১৯, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

অযত্নে গচ্চা ১৬ লাখ টাকা শহর রক্ষা বাঁধে ফুলহীন রাসিকের বাগান

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরীর শহর রক্ষা বাঁধে দুই বছর আগে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বাগান তৈরি করা হলেও ফুল ফোটেনি সেখানে। অযতœ অবহেলার কারণে পুরো প্রকল্পই ভেস্তে গেছে। তৈরির দুই বছরের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে সে বাগান। এতে প্রকল্পের ১৬ লাখ টাকা গচ্চা গেছে। তবে সেই বাগান নতুন করে ঢেলে সাজাতে এবার আরও তিন কোটি টাকা খরচার উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। রাজশাহী নগরীর শাহমখদুম কলেজ থেকে পঞ্চবটি এবং তালাইমারী শহীদ মিনার হয়ে বাদুড়তলা মসজিদ পর্যন্ত বাঁধের উত্তর ঢালে নতুন করে গড়ে তোলা হবে দৃষ্টিনন্দন বাগান। এর আগে ২০১৪ সালের শেষের দিকে একই জায়গায় তৈরি হয়েছিল বাগান। আর এজন্য উজাড় করা হয় বাঁধের ঢালের ১৪টি শিশুগাছসহ আরও কয়েকটি গাছ। সে সময় এলাকাজুড়ে নেটসহ দেয়া হয় বাঁশের বেড়া। বসানো হয় দেড় শতাধিক বড় বড় টব। কয়েকটিতে লাগানো হয় ফুলগাছ। কিন্তু ছয় মাসের মাথায় ফুল ফোটার আগেই বেড়া ভেঙ্গে বাগানে চড়তে শুরু করে গরু-ছাগল। ধীরে ধীরে উজাড় হয়ে যায় বাগান। ফলে নগর সৌন্দর্য আর শোভা পায়নি। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, সে সময় ফুলবাগান রক্ষার জন্য বাঁশের বেড়া, আরসিসি খুঁটি ও নেট দিয়ে বেষ্টনী নির্মাণ করা হয়। তবে সেটাতে সফল হওয়া যায়নি। একই প্রকল্পে এ বছরের জানুয়ারিতে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তির ডব্লিউবি-৫৩ (৫৩) নম্বরের এ কাজে ব্যয় হয় ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫৮ টাকা। এ কাজ বাস্তবায়ন করেন রাসিক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব। অভিযোগ রয়েছে, কোন দরপত্র ছাড়াই মেয়র তার সহকারী বিপ্লবকে দিয়ে কাজটি করিয়েছিলেন। পরে লোক দেখানো দরপত্র আহ্বান করা হয়। আর এতেই লুটপাট হয়ে যায় পুরো বাগান। বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, বাগানের বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও ভাঙ্গা চোরা বেড়া থাকলেও নেই ফুলগাছ। কিছু ফুলগাছ থাকলেও পরিচর্যা না থাকায় ঢেকে গেছে ঘাসে। এরই ভেতর চড়ে বেড়াচ্ছে গরু, ছাগল-ভেড়া। বাঁধের ধারের বাসিন্দারের কেউ কেউ আবার বেড়ায় গরু-ছাগল বেঁধে রেখেছেন। পুরো এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আর্বজনার স্তূপ। গাছপালাহীন বাগানের ভেতর বসানো রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের আদেশ সংবলিত সাইনবোর্ড। তাতে উল্লেখ রয়েছে, বেড়ায় হেলান দিয়ে বসলে দিতে হবে ৫০০ টাকা জরিমানা। বাগানের ভেতরে গরু ঢুকলে ৫০০ টাকা, ছাগল ঢুকলে ২০০ টাকা এবং হাঁস ঢুকলে ১০০ টাকা করে জরিমানা গুনতে হবে মালিককে। এছাড়া কোনভাবে বেড়া ভেঙ্গে ফেললে জরিমানা হিসেবে বেড়ার দাম পরিশোধ করতে হবে। যেখানে বাগানের অস্তিত্ব নেই সেখানে রাসিকের এমন সাইনবোর্ড কা-ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। নগরীর বোসপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম জানান, ফুল বাগান তৈরির নামে লুটপাট হয়েছে এখানে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে উজাড় হয়ে গেছে ফুল বাগান। এছাড়া বাঁধের ঢাল আলগা হয়ে পড়ায় গত বর্ষায় মাটি নেমে গিয়ে রাস্তার পাশের ড্রেন ভরাট হয়ে গেছে। সিটি কর্পোরেশন সাইনবোর্ড ঝুলিয়েই নিজেদের দায় সেরেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, সে সময় মেয়র বুলবুল (বরখাস্তকৃত) নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সৌন্দর্য বর্ধনের ওই কাজটি করেন। কিন্তু বেড়া বাঁশের তৈরি হওয়ায় বছর ঘুরতেই নষ্ট গেছে। বেড়া না থাকায় ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে গেছে ফুল বাগানও। তবে এ বাগান নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এবার ওই এলাকার ৫০০ মিটারজুড়ে স্টিলের বেড়া দেয়া হবে। আলোকায়নসহ লাগানো হবে বাহারী ফুলগাছ। থাকবে ড্রেনসহ ফুটপাথও। প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কাজ শুরু হবে ডিসেম্বরের শেষ দিকেই। রাসিকের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন খাত থেকে আসছে এর অর্থায়ন। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নগরীর সবুজায়ন এগিয়ে যাবে আরেক ধাপ বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। রাসিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম বাঁধের ঢালে বাগান তৈরির আগের পরিকল্পনাটিকেই ভুল বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, বাঁশের বেড়া দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে বাগান রক্ষা করা সম্ভব নয়, ঠিক তা-ই হয়েছে। এখানে শুধু অর্থের অপচয় হয়েছে। তবে এখন পুরো এলাকাটি নতুন করে পরিকল্পনায় নেয়া হচ্ছে। বাঁধ রক্ষা ছাড়াও এলাকাটি সাজানো হবে দৃষ্টিনন্দন করে।
×