ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বা ও জইশ-ই-মোহাম্মদ স্থিতি বিনষ্টকারী জঙ্গী সংগঠন ॥ হার্ট অব এশিয়া সম্মেলনে ঘোষণা

সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা চাই

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬

সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা চাই

আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলা করাই ভারতের অমৃতসর শহরে আয়োজিত হার্ট এশিয়া (এইচওএ) সম্মেলনের প্রধান ইস্যু ছিল। ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এ কথা জানান। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও সিএনএন-নিউজ এইটিনের। এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের সীমান্ত পেরিয়ে সক্রিয় সন্ত্রাসীদের প্রতি দেশটির সহায়তাদানের প্রতি সম্মেলনে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এইচওএ ঘোষণাপত্রে এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী শক্তি হিসেবে লস্কর-ই-তৈয়রা (এলইটি) ও জইশ-ই-মোহাম্মদের (জেইএম) নাম প্রথমবারের মতো ঘোষণা করা হয়। এতে সম্মেলনে পাকিস্তানের অবস্থান একঘরে হয়ে পড়ে। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আমরা আফগানিস্তানের গুরুতর নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং ইসলামিক স্টেট/দায়েশ ও এর শাখাগুলো, হাক্কানি নেটওয়ার্ক, আল কায়েদা, ইসলামিক মুভমেন্ট অব উজবেকিস্তান, ইস্ট টার্কিস্তান, ইসলামিক মুভমেন্ট, লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মোহাম্মদ, টিটিপি, জামাত-উল-আহরার, জুন্দুল্লাহ ও অন্যান্য বিদেশী সন্ত্রাসী যোদ্ধার উচ্চমাত্রায় হিংসাশ্রয়ী কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এতে বলা হয়, আমাদের অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ মদদ পেয়ে থাকে এ কথা স্বীকার করে আমরা সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ এবং অর্থ যোগানসহ সব ধরনের মদদদান অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। সন্ত্রাসবাদ আমাদের অঞ্চলে শক্তি, স্থিতিশীলতা ও সহযোগিতার প্রতি সবচেয়ে বড় হুমকি বলে আমরা স্বীকার করি। অসুস্থ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের অনুপস্থিতিতে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, আমরা আফগানিস্তানে তালেবান, আল কায়েদা, দায়েশ (ইসলামিক স্টেট) ও এর শাখাগুলোর সংঘটিত ব্যাপক সহিংসতায় উদ্বিগ্ন। বড় বড় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তি ও ব্লকসহ ৪০টি দেশের ওই দু’দিনের সম্মেলন শেষে এইওএর প্রকাশিত অমৃতসর ঘোষণায় এ অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি ও নিরাপদ আস্তানা ভেঙ্গে দেয়া এবং সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোর সব আর্থিক, কৌশলগত ও রসদ সহায়তাদান বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। এটি ছিল হার্ট অব এশিয়া কনফারেন্স ইস্তানবুল প্রসেস অব আফগানিস্তানের ষষ্ঠ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন এইচওএ আফগানিস্তানকে এর অন্তর্বর্তীকালে সহায়তাকারীর এক প্ল্যাটফর্ম। সীমান্ত পেরিয়ে ভারত ও অন্যত্র চালিত কয়েক দফা সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত এইচওএ সম্মেলনে আফগানিস্তান ও এ অঞ্চলের অনেক অংশের গুরুতর নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে খুবই উদ্বেগ ব্যক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মোহাম্মদ, তালেবান, হাক্কানি নেটওয়ার্ক, আল কায়েদা, ইসলামিক স্টেট ও এর শাখাসমূহ, টিটিপি, জামাত-উল-আহরার, জুন্দুল্লাহ ও অন্যান্য বিদেশী সন্ত্রাসী দলেরই মতো দলগুলোকে রুখতে ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা প্রয়োজন। ‘তালেবান এক মাসও টিকবে না’ ॥ ইয়াহু নিউজ জানায়, আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বলেছেন, তালেবান বিদ্রোহীরা প্রতিবেশী পাকিস্তানে তাদর আশ্রয়স্থল হারালে এক মাসও টিকতে পারবে না। তিনি কাবুলকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার পরিবর্তে প্রতিবেশী পাকিস্তানকে নিজের ভূখ-েই সন্ত্রাসী দলগুলোকে দমন করার আহ্বান জানান। গনির মন্তব্যে বোঝা যায়, গনি ২০১৪ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা চালালেও পাকিস্তানের সঙ্গে তার দেশের উত্তেজনা বৃদ্ধিই পাচ্ছে। তিনি পাকিস্তান সীমান্তের অদূরে ভারতীয় পাঞ্জাব রাজ্যের শহর অমৃতসরে ‘হার্ট অব এশিয়া’ সম্মেলনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। পাকিস্তান বলেছে, আফগানিস্তানে সহিংসতা বৃদ্ধি পেলেও অন্য দেশকে দোষারোপ করা কাজে আসবে না। গনি ওই সম্মেলনে বলেন, গত বছর বিশ্বে আফগানিস্তানেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তার দেশে স্থিতিশীলতা আনয়নে আঞ্চলিক দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করাই সম্মেলনের উদ্দেশ্য। গনি বলেন, এটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ কেউ এখনও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে। এক তালেবান নেতাই সম্প্রতি বলেন যে, পাকিস্তানে কোন আশ্রয় না পেলে তারা এক মাসও টিকতে পারত না। বিশ্লেষকরা বলেন, পাকিস্তান তার পশ্চাৎভূমি আফগানিস্তানে তার পরম প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি ঠেকাতে আফগান তালেবানকে সব সময়ই মদদ দিয়ে এসেছে। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান তিনবার লড়াই করে। পাকিস্তান ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, সে নিজেই সন্ত্রাসবাদের শিকার। দেশটির পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ বলেন, সত্য যে, আফগাস্তিানে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের অন্য দেশকে দোষারোপ না করে এক বাস্তবমুখী ও সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা উচিত।
×