ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্প-সাই ইং-ওয়েন ফোনালাপ

অনিশ্চয়তায় চীন-মার্কিন সম্পর্ক

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬

অনিশ্চয়তায় চীন-মার্কিন সম্পর্ক

যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কূটনৈতিক প্রটোকল ভেঙ্গে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে যেভাবে কথা বলেছেন তা চীন মার্কিন সম্পর্ককে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলতে পারে। পরমাণু কর্মসূচীতে উত্তর কোরিয়ার ওপর জাতিসংঘ অতি সম্প্রতি যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। খবর গার্ডিয়ান ও ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল অনলাইনের। ট্রাম্প শুক্রবার সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে যেভাবে ফোনালাপ করেছেন এটি যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী সরকারের পলিসি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র চীন বিষয়ে যে কূটনৈতিক নীতি অনুসরণ করে এসেছে ট্রাম্প যেন তা ভেঙ্গে দিলেন। শনিবার বেজিংয়ের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ট্রাম্প-ওয়েন ফোনালাপের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন ও উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবত করাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বেজিং-ওয়াশিংটন সম্পর্ক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তাদের ফোনালাপের পর চীন এ বিষয়ে নীরব থেকে বা শুধু তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সমালোচনার মধ্যেই প্রতিক্রিয়া সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পরে ট্রাম্পের দায়িত্ব হস্তান্তর টিমের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলে বেজিং। তারা বলেন, ট্রাম্প যদি তাইপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর পথে পা বাড়ান তবে দুদেশের সম্পর্ক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। বেজিং-ওয়াশিংটন পারস্পরিক সহযোগিতার সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্য, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার মতো অনেকগুলো আন্তর্জাতিক ইস্যুর সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে ট্রাম্প যেদিন সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে কথা বলেছেন তার একদিন আগেই নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার ওপর সর্বশেষ দফা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য ওয়াশিংটনের একান্ত প্রয়োজন বেজিংয়ের সহযোগিতা। উত্তর কোরিয়ার যেন পরমাণু কর্মসূচী ত্যাগ করে সে লক্ষ্যে দেশটির ওপর নিজের প্রভাব খাটানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই চীনকে চাপ দিয়ে আসছিল। চীন উত্তর কোরিয়ার প্রধান বাণিজ্য সহযোগী, অংশীদার ও পৃষ্ঠপোষক। উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শীর্ষ নিরাপত্তা অগ্রাধিকার, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন ট্রাম্পের কর্মকর্তাদের এমন ধারণা দিয়ে রেখেছেন বলে ওয়াশিংটনের সূত্রগুলো জানিয়েছে। জাতিসংঘ আরোপিত সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য উত্তর কোরিয়ার কয়লা শিল্প খাত। উত্তর কোরিয়ার কয়লার প্রধান ক্রেতা চীন। চীনের জিলিন ইউনিভার্সিটির চীন-উত্তর কোরিয়া সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ওয়াং শেং বলছেন, ‘তাইয়ানের মতো চীনের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র নাক গলাবে আর চীন উত্তর কোরিয়া ইসুতে সহযোগিতা করবে, এটি আশা করা ঠিক নয়।’ অন্যদিকে ট্রাম্পের সমর্থকরা বলছেন যে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে অবনতি ঘটুক প্রকৃত প্রস্তাবে ট্রাম্প সেটি চান না। বরং তাইওয়ানের নেতার সঙ্গে কথা বলে এ বার্তাই দিলেন যে বেজিংয়ের আঞ্চলিক শক্তি হয়ে ওঠার চেষ্টা ওয়াশিংটন প্রতিরোধ করবে। তাইওয়ান ইস্যুতে চীন-মার্কিন সম্পর্কে এমন এক সময় অনিশ্চয়তা ছায়া ফেলছে যখন আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক কঠিন সময় পার করছেন। আগামী কিছুদিনের মধ্যে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব পর্যায়ে পাঁচ বছরের জন্য রদবদল ঘটতে যাচ্ছে। ১৯৭৯ সালে ওয়াশিংটন তাইপের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে দ্বীপটির ওপর বেজিংয়ের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়েছে। তবে মার্কিন আইন অনুসারে তাইওয়ান রক্ষার দায়বদ্ধতা ওয়াশিংটনের রয়েছে। এই আইন বলে ট্রাম্প তাইওয়ানে অস্ত্র বিক্রি শুরু করেন কি না এ নিয়ে বেজিং উদ্বিগ্ন। তাইওয়ান নিয়ে এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। এদিকে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোন কল নিয়ে চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত ইংরেজী দৈনিক চায়না ডেইলি মন্তব্য করেছে ‘এ ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা অনভিজ্ঞ, পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে তারা আনাড়ি।’ রবিবার প্রকাশিত চায়না ডেইলির সম্পাদকীয়তে একথা বলা হয়। পত্রিকার সম্পাদকীয়তে যাই চীন এখনও পর্যন্ত অফিয়িালি কোন কড়া প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
×