ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিজস্ব বিমানবাহী রণতরী ভারত সাগরে ভাসাবে এক দশকের মধ্যে

চীনের সমকক্ষ হতে দিল্লীর চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২ ডিসেম্বর ২০১৬

চীনের সমকক্ষ হতে দিল্লীর চেষ্টা

ভারতের প্রথম স্থানীয়ভাবে নির্মিত বিমানবাহী জাহাজকে আমেরিকান নৌবাহিনীর প্রকৌশলীরা চালু করার অযোগ্য বলে দেখতে পান। তারা জাহাজটিকে যুদ্ধের জন্য প্রায় প্রস্তুত অবস্থায় দেখতে পাওয়ার প্রত্যাশা করেছিলেন, যাতে সেটি ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় সহায়ক হয়। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের। খবরে বলা হয়, প্রকৌশলরা ফেব্রয়ারিতে কোচি বন্দরে বিমানবাহী জাহাজটি পরিদর্শন করেন। তারা বলেন, এটি এক দশকেরও মধ্যে চালু করার উপযোগী হবে না। তারা এর অন্যান্য ত্রুটিও দেখতে পান, এটির আত্মরক্ষা করার মতো কোন ক্ষুদ্র ক্ষেপণাস্ত্র নেই, বিমান উড়তে দেয়ার সীমিত সামর্থ্যই এর রয়েছে এবং জাহাজটি যুদ্ধের সময় কিভাবে ব্যবহার করা হবে, সেই সম্পর্কে এর কোন সুনির্দিষ্ট কৌশল নেই। এসব কিছু দেখতে পেয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা শঙ্কিতই হন, কারণ তারা চীনের বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ শক্তি হিসেবে ভারতের সমর্থন পাওয়ার আশা করছিলেন। ওই বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ কথা জানান। ভারত মহাসাগরে চীনের শক্তি বৃদ্ধিরোধ করতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একযোগে কাজ করছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত এ্যাডমিরাল অরুণ প্রকাশ বলেন, চীনা নৌবাহিনী শীঘ্রই বিশ্বে সর্ববৃহৎ নৌবাহিনী হবে। আর তারা শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা করে ভারত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তারের দিকে দৃষ্টি রাখছে। এ নিয়ে ভারতীয় নৌবাহিনী উদ্বিগ্ন। ভারতের সঙ্গে বিমানবাহী জাহাজ তৈরির প্রযুক্তি বিনিময়ের মার্কিন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মার্কিন টিম ভারতীয় জাহাজটি পরিদর্শন করেন। ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তারাও পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে সেপ্টেম্বরে ভার্র্জিনিয়ার এক আমেরিকান জাহাজ নির্মাণ ইয়ার্র্ড পরিদর্শন এবং পেন্টাগনে সামরিক ব্রিফিংয়ে যোগ দেন। এসব বৈঠকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এমন ব্যক্তিরা একথা জানান। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক রাজনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে। দুটি দেশ জাপানের সঙ্গে যৌথ নৌমহড়ায় অংশ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নয়াদিল্লীর কাছে এ্যাটাক হেলিকপ্টার থেকে শুরু করে কামান পর্যন্ত সবকিছু বিক্রি করতে রাজি হয়েছে। ওয়াশিংটন ভারতে উন্নতমানের জঙ্গী বিমান তৈরি করতে লকাইড মার্টিন এ্যান্ড বোয়িং কোম্পানির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। আগস্ট মাসে দুটি দেশ সামরিক রসদ সরবরাহ সম্পর্কিত এক চুক্তি সই করে। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের নৌ চুক্তি এশিয়ার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিয়েছে। চীন যৌথ মহড়া নিয়ে কূটনৈতিকভাবে আপত্তি জানায়। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার সম্প্রতি দেশেই প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। কারণ, যুদ্ধের সময় বিদেশ হতে অস্ত্র গোলাবারুদ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, স্বনির্ভরতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। চীন এর সামরিক বাহিনী সম্প্রসারণের চেষ্টা ত্বরান্বিত করছে। চীন, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও পাকিস্তানে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোতে সামরিক উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করছে। দেশটি জিবুতিতে এর প্রথম বৈদেশিক সামরিক ফাঁড়ি নির্মাণ করছে। ভারত গত বছর ইরানে এক নতুন বন্দর নির্মাণে তহবিল যোগানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সামরিক কৌশল নিয়ে উদ্বেগ দেখাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভারতের বিমানবাহী জাহাজ, জঙ্গী বিমান ও পারমাণবিক সাবমেরিন আধুনিকায়ন করতে নয়াদিল্লী খুবই বিলম্ব করছে। ভারত ১৯৬০ এর দশক থেকে ব্রিটিশ নির্মিত বিমানবাহী জাহাজগুলো ব্যবহার করেছে এসেছে। সম্প্রতি এদের শেষটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১২ সালে ভারতের ক্রয় করা রুশ নির্মিত বিমানবাহী জাহাজটি এখনও চালু রয়েছে। ২০৩০-এর দশকে আরও দুটি বিমানবাহী জাহাজ নৌবাহিনীতে যুক্ত করার পরিকল্পনা ভারতের রয়েছে। এদের প্রথমটি আইএনএস বিভ্রান্ত এরই মধ্যে আংশিকভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু এর নির্মাণ কাজ এমনই বিলম্বিত হচ্ছে যে, তা তৈরি করতে একেবারে একদশক লাগতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন। দ্বিতীয় জাহাজ আইএনএস বিশালের নক্সা তৈরির কাজ এখনও চলছে।
×