ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের সংবিধান দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় শ্রিংলা

মিয়ানমারে শান্তি দেখতে চায় ভারত

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ২৭ নভেম্বর ২০১৬

মিয়ানমারে শান্তি দেখতে চায় ভারত

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে বলে প্রত্যাশা করে ভারত। এছাড়া সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা ইস্যুর দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা করে দেশটি। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়নে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এসব কথা বলেন। ভারতের হাইকমিশনার বলেন, ভারত তার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে শান্তি দেখতে চায়। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় থাকবে এটাও প্রত্যাশা করে ভারত। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মিয়ানমারের সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিদেশী কূটনীতিকদের সামনে তুলে ধরেছেন। সীমান্তে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়ে আমরা অবহিত হয়েছি। আমরা শান্তি চাই। শুধু ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্তেও আমরা শান্তি চাই। তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলের শান্তির জন্য সকল পক্ষকে একসঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। ভারতের সংবিধান দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন ও বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ইমেরিটাস ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ল কমিশনের সদস্য ড. শাহ আলম, মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান খান ও বাংলাদেশ-মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুবীর কুশারী। আলোচনা অনুষ্ঠানে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সংবিধানের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিষয়ে সামঞ্জস্য রয়েছে। দুই দেশের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ রয়েছে। এটা অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। তিনি বলেন, ভারতের সংবিধান প্রণেতা ড. আম্বেদকর অনেক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সংবিধান রচনা করেছিলেন। কেননা ভারতের বহু ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের আশা আকাক্সক্ষা বিবেচনায় নিয়ে তাকে এই সংবিধান প্রণয়ন করতে হয়েছিল বলেও তিনি জানান। অধ্যাপক ইমেরিটাস ড. একে আজাদ চৌধুরী বলেন, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশের সংবিধান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই ভারতের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল। সে কারণে এই সংবিধান অনেক আধুনিক। এটা বিশ্বের মধ্যে একটি শক্তিশালী সংবিধান। ভারতের বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে সংবিধান প্রণয়ন করাটা ছিল কঠিন একটি কাজ। তবে তারা সেই কঠিন কাজটি খুব ভালভাবে করতে সক্ষম হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ড. শাহ আলম বলেন, চলতি বছর ভারতের ৬৮তম সংবিধান দিবস পালিত হচ্ছে। এই সংবিধান প্রণয়নের সময় ভারতের রাজনীতিবিদ জওহরলাল নেহেরু, রাজেন্দ্র প্রসাদ, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, ড. আম্বেদকরের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তিনি বলেন, ভারতে রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে ভারসাম্য কিভাবে বজায় থাকবে, সেটা এই সংবিধানে খুব ভালভাবে ব্যাখ্যা দেয়া আছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কিভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, তারও দিক নির্দেশনা দেয়া রয়েছে ভারত সংবিধানে। কোন দেশের একটি আদর্শ সংবিধান কেমন হতে পারে, সেটা ভারতের সংবিধান পর্যালোচনা করলেই আমরা বুঝতে পারব। ড. মিজানুর রহমান খান বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ভারতের সংবিধান সারাবিশ্বেই একটি শক্তিশালী সংবিধান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এই সংবিধানের অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। এটি একটি স্বতন্ত্র সংবিধান। তিনি বলেন, ভারতের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে। এটা তাদের জন্য বিশাল একটি অগ্রগতি। তবে ১৯৭৬ সালের পর থেকে আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে সরে এসেছি। আমরা তখন ইসলামী রাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকেছি। অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে সুবীর কুশারী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সুদৃঢ় বন্ধন রয়েছে। এই বন্ধন আরও শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি কাজ করে চলেছে। সে অনুযায়ী ভারতের সংবিধান দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
×