ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আর্থিক প্রযুক্তিতে বিপ্লব ঘটানোর পথে ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৬ নভেম্বর ২০১৬

আর্থিক প্রযুক্তিতে বিপ্লব ঘটানোর পথে ভারত

এ মাসের গোড়ার দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৫০০ ও ১০০০ রুপীর নোট বাতিল ঘোষণা করেন। কালো টাকার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতেই তিনি ওই সিদ্ধান্ত নেন। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্তে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। সাধারণ মানুষের সমস্যা হলেও আর্থিক প্রযুক্তি খাতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে অনেকে ধারণা করছেন। খবর বিবিসির। মোদি ৮ নবেম্বর আকস্মিকভাবে ঘোষণা দেন যে, ‘আজ রাত থেকে সব ৫০০ ও ১০০০ রুপীর নোট বাতিল হচ্ছে।’ ওই সময় মুম্বাইয়ের সবজি বিক্রেতা ভিশাল গুপ্তা রাস্তার পাশে তার ছোট দোকানটি বন্ধ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে রাস্তা ফাঁকা হয়ে গিয়ে সব লোক যেন এটিএম বুথগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। প্রত্যেকেই যার যার সামর্থ্যমতো বুথ থেকে টাকা তুলে নিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার কাজটি দ্রুত সেরে নেন। গুপ্তা বলছেন, ‘যদিও আমি দোকান বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম কিন্তু মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে দোকানের সব সবজি বিক্রি হয়ে যায়। এমন ঘটনা আগে কোনদিনই হয়নি।’ কিন্তু পরের দিন তার দোকানে কিছু বেচাকেনা হয়নি। অল্পকিছু ক্রেতা সবজি কিনতে এসেছিল। কিন্তু খুচরা পয়সা না থাকায় তাদের কাছে বাকিতে বিক্রি করতে হয়। মোট কথা, সেদিন তার কোন আয় হয়নি। এর পাঁচ দিন তিনি কোন কাস্টমারই পাননি। ফলে একদিকে তার কোন উপার্জন হয়নি। অন্যদিকে সবজিগুলো পচে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন গুপ্তা। তার মোট ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার রুপীর (১৫০ ডলার) উপরে হয় বলে তিনি বিবিসিকে জানিয়েছেন। ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্য মূলত নগদ অর্থনির্ভর। যে দুটি নোট মোদি বাতিল করেছেন নগদ বাণিজ্যের ৮৬ শতাংশ ওগুলোর মাধ্যমে হতো। অর্থ উপার্জনের জন্য গুপ্তা শেষ পর্যন্ত একটি বিশেষ ওয়ালেট এ্যাপ ডাউনলোড করেন। পেটিএম নামের ওই এ্যাপটি স্মার্টফোনভিত্তিক অর্থ লেনদেনের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গুপ্তা বলছেন, ‘এখন অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা ভাল। এখন আমি প্রতিদিন চার-পাঁচজন কাস্টমারের কাছে সওদা বিক্রি করতে পারছি। তারা মোবাইলের মাধ্যমে দাম পরিশোধ করছে।’ গুপ্তার মতো অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এখন বেঁচে থাকার তাগিদে বাধ্য হয়ে মোবাইল ও কার্ডের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করছেন। নোট বাতিলের সরকারী সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি যাই হোক আর্থিক প্রযুক্তি ফার্মগুলো একচেটিয়া ব্যবসা করে নেয়ার সুযোগ পেয়েছে। নোট বাতিলের পর মোবাইল পেমেন্ট কোম্পানিগুলোর ব্যবসা সাতগুণ বেড়ে গেছে। এর মাধ্যমে এখন দেশটিতে দৈনিক ৫০ লাখ আর্থিক লেনদেন হচ্ছে। মোবাইল পেমেন্ট প্লাটফর্মগুলোকে সহায়তা করছে চীনের ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা। আশা করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে ভারত নগদ অর্থের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।
×