ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মায়ের সঙ্গে শেষ কথা হলো না রোকসানার

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

মায়ের সঙ্গে শেষ কথা হলো না রোকসানার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মায়ের সঙ্গে শেষ কথা হলো না রোকসানার। কিছু সময়ের জন্য শেষ দেখা হয়েছিল তার। দুদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। বার্ন ইউনিটে আবাসিক সার্জন ডাঃ পার্থ শংকর পাল জানান, রোকসানার শ্বাসনালীসহ ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। এদিকে এ নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে দুই নারী শ্রমিকের মৃত্যু হলো। নিহত রোকসানার বড় ভাই রাজধানীর উত্তরার একটি ছোট কোম্পানিতে কর্মরত জুলফিকার রহমান জনি, তাদের বাবার নাম তোরাব আলী। গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘি গ্রামে। তিনি জানান, মাকে দেখার দুদিন ধরে প্রতীক্ষায় ছিলেন ছোট বোন রোকসানা। বৃহস্পতিবার ভোরে গ্রামের বাড়ি থেকে হাসপাতালে আসেন তার মা জুলেখা বেগম। পরে মেয়েকে দেখতে আইসিউতে ঢুকেন তার মা জুলেখা। মাকে কয়েক পলক দেখার পর কথা বলতে চেয়েছিল রোকসানা। কিন্তু ততক্ষণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রোকসানা। জুলফিকার রহমান জনি সংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বুধবার থেকে তার বোন রোকসানা বার্ন ইউনিটের আইসিউতে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে কেবলই মা মা বলে ডাকছিল। তাকে (মাকে) বার বার খুঁজছিল। ছোট বোন রোকসানা বলেন, গ্রামের বাড়িতে বগুড়ায় তাদের মাকে খবর দেয়া হয়েছে। তিনি আসছেন। এরপর রোকসানাকে মানাতে পারছিলেন না। যন্ত্রণায় কাতর কণ্ঠে মাকে দেখা জন্য কাকুতি-মিনতি করছিলেন। জুলফিকার কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, কিছুক্ষণের জন্য মা আইসিইউতে ঢুকে রোকসানাকে দেখেছিলেন। কথা বলার অনেক চেষ্টাও করেছিলেন রকি। তবে শেষ পর্যন্ত পারেননি। এরপরই বোন রোকসানা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এদিকে ছোট মেয়ে রোকসানার মৃত্যুতে শোক পাথর হয়ে গেছেন ষাটোর্ধ মা জুলেখা বেগম। কিছু সময়ের জন্য মেয়ে রোকসানার সঙ্গে শেষ দেখা হলো। কিন্তু চোখের সামনে মেয়ে মৃত্যু দেখে জুলেখা বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। এ সময় জুলেনা বেগম বার বার বিলাপ করে বলছিলেন, আমার সোনা ময়না, তোমাগো মতোই সুন্দর ছিল, আমার সোনা ময়নার কি হলো, একটু পানিও খাইতে পারল না। ওর বড় বোনের (তাসলিমা) কাছে ইশারায় পানি চাইল। চামচ দিয়া পানি খাওয়াইতে গেলে আমার সোনা (রোকসানার) গলা থেকে পানি বের হইয়া যায়। মায়ের পাশেই ছোট বোন হারানোর শোকে বাকরুদ্ধ অবস্থায় মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন রোকসানার বড় বোন তাসলিমা। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে আশুলিয়ায় দগ্ধ কিশোরী নারী শ্রমিকদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখতে আসেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক। তিনি বলেছেন, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার খোঁজখবর রাখছে সরকার। দগ্ধদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখব। কি কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দগ্ধদের চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে। এখানকার চিকিৎসকরা তাদের সর্বক্ষণিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। চিকিৎসায় কোন প্রকার ত্রুটি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। তাদের চিকিৎসার জন্য সব ধরনের ওষুধের ব্যবস্থা এখানে রয়েছে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেলে আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় কালার ম্যাচ বিডি লিমিটেড কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৩৯ দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০ নারী শ্রমিক ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ওইদিন মধ্যরাতে আঁখি (১৩) নামে এক কিশোরী শ্রমিক মারা যায়। বর্তমানে হাসপাতালে আরও ১৮ জন নারী শ্রমিক চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিদের এনাম মেডিক্যালসহ স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
×