ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রণালয়গুলো ঝামেলামুক্ত থাকবে

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগে সমন্বিত কর্তৃপক্ষ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগে সমন্বিত কর্তৃপক্ষ হচ্ছে

তপন বিশ্বাস ॥ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জন্য সমন্বিত নিয়োগ কর্তৃপক্ষ করতে যাচ্ছে সরকার। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) আদলে এটি গঠিত হলে কোন মন্ত্রণালয়কে আর নিয়োগের ঝামেলা পোহাতে হবে না। জনবলের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় চাহিদাপত্র দেবে। বছরের চাহিদা মোতাবেক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। এ লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় খসড়া তৈরি করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, উদ্যাগটা ভাল। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন নিয়োগ প্রক্রিয়া বিলম্বিত না হয়। তিনি বলেন, নির্ধারিত বা শুধুমাত্র বাঁধাধরা সময় নয়, প্রয়োজন হলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে এবং তা দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। প্রশাসনের র্শীষ এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, এটি সহজ কাজ হবে না। আড়াই-তিন হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে পিএসসি হিমশিম খায়। একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ কর্মচারী নিয়োগ দিতে হলে জনবল অনেক বেশি হতে হবে। এছাড়া সাধারণ, টেকনিক্যাল আলাদাভাবে প্রশ্ন করতে হবে। এর পর খাতা দেখারও বিষয় রয়েছে। বোর্ডের পাবলিক পরীক্ষায় (এসএসসি ও এইচএসসি) তো প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা একসঙ্গে নেয়া হয়। তারা পারলে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ পারবে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পারবে না এমনটি বলছি না। তবে কাজটা কঠিন। অপর এক কর্মকর্তা বলেন, নিয়োগ কর্তৃপক্ষ গঠিত হলে তাদের কাজ শুধু নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। সারা বছর তাদের কাজ হবে এটি। তাই এটি করা খুব একটা কঠিন হবে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, পরীক্ষার খাতা দেখার জন্য সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব ও যুগ্মসচিব পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের দিয়ে পরীক্ষার খাতা দেখানো যেতে পারে। সূত্র জানায়, সরকারী চাকরিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে নিয়োগের লক্ষ্যে ভিন্ন ভিন্নভাবে সারা বছর নিয়োগ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে নিয়োগের আবশ্যিকতা থাকলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অদক্ষ কর্মকর্তার কারণে নিয়োগ প্রদান করা সম্ভব হয় না। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে নিয়োগের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরেও ভুলের কারণে তা বাতিল করার নজির রয়েছে। এ জাতীয় ঘটনার শিকার হয়ে চাকরির বয়সসীমা পার করে কেউ কেউ চিরতরে সরকারী চাকরি করার সুযোগও হারাচ্ছেন। এছাড়া নিয়োগের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও স্বজনপ্রীতির কারণে মেধাবিরা চাকরি না পেয়ে অযোগ্যরা চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পিএসসির আদলে কর্তৃপক্ষ গঠিত হলে সে ক্ষেত্রে একদিকে যেমন মেধাবিরা চাকরি পাবেন তেমনি চাকরি প্রত্যাশীদেরও হয়রানি কমবে। সূত্র জানায়, খসড়ায় কর্তপক্ষের চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব করা হয়েছে সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে। যুগ্মসচিব বা অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের আরও ২০ কর্মকর্তাকে সদস্য করার সুপারিশও রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শূন্য পদের বিপরীতে কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। যে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগে জনবলের প্রয়োজন তারা তাদের চাহিদাপত্র এই কর্তৃপক্ষকে দেবে। চাহিদার ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ গ্রুপ(সাধারণ, ট্যাকনিক্যাল ইত্যাদি) তৈরি করবে। গ্রুপ অনুযায়ী প্রশ্নপত্র বা পরীক্ষা নির্ধারণ করা হবে। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে কর্তৃপক্ষ সকল গ্রুপের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করবে। মার্চ-এপ্রিল মাসের মধ্যে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করে মেধাক্রমে চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করবে। সূত্র জানায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কোন্ পদে কোন্ কোন্ মন্ত্রণালয়ে কত কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হবে তা উল্লেখ থাকবে। চাইরপ্রার্থীরা কোন্ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কোন্ পদে চাইর পেতে চায়(বিসিএসএ যেমন করে ক্যাডারের পছন্দ দেয়া হয়) তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উল্লেখ করবে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রাপ্ত মোট নম্বরের ভিত্তিতে মেধা তালিকা নির্ধারণ করা হবে। মেধাতালিকা ভিত্তিতে পছন্দের মন্ত্রণালয়ে চাকরির জন্য মনোনীত হবে। মনোনীতরা গেজেট বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে সরকারী চাকরিতে যোগদান করবে এই পদের কর্মচারীরা। সূত্র জানায়, নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছ করার জন্য মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। লিখিত পরীক্ষার খাতার ওপর কোড নম্বর বসিয়ে প্রথম পাতা খুলে রাখা হবে। এর পর খাতা দেখার জন্য তা পরীক্ষকের নিকট পাঠানো হবে। এতে লিখিত পরীক্ষার খাতাটি কার তা নিরূপণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। এতে একদিকে যেমন কোন নাম থাকবে না তেমনি থাকবে না রোল নম্বরও। শুধু একটি কোড নম্বর থাকবে। এই কোড নম্বরের তালিকা থাকবে নিয়োগ কর্তৃপক্ষের প্রধানের তত্ত্বাবধানে। এটি না দেখে কোন্ খাতা কার তা যাচাই করা সম্ভব হবে না। মৌখিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে বোর্ডের কোন সমস্যা জানতে পারবেন না কোন প্রার্থী ঠিক কত নম্বর পেয়ে মৌখিক পরীক্ষার জন্য কৃতকার্য হয়েছে। সূত্র জানায়, ধরা যাক ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় এক প্রার্থী ৭০ নম্বর পেয়েছেন এবং অপর এক প্রার্থী ৫৫ বা ৬০ নম্বর পেয়ে মৌখিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত হয়েছেন। সে ক্ষেত্রে কম নম্বর পাওয়া (৫৫ বা ৬০ পাওয়া) কোন ব্যক্তিকে মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে কোন সদস্য স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চাকরি পায়িতে দেয়ার চেষ্টা করেও কিছু করতে পারবেন না। তার পছন্দের কোন প্রার্থীকে যোগ্যতার তালিকায় স্থান দিতে হলে আগে জানতে হবে তার প্রার্থীকে ঠিক কত নম্বর দিতে হবে। পাশাপাশি অন্য কোন প্রার্থীকে কত কম নম্বর দিতে হবে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের যোগফলের ভিত্তিতে চূড়ান্ত মেধা তালিকা তৈরি করা হবে। তাই স্বজনপ্রীতি করার তেমন সুযোগও থাকছে না।
×