ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যে কোন সময় এসব বাড়ি ধসে পড়ে শত শত প্রাণহানির আশঙ্কা;###;এসব বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করছে দেশী-বিদেশী পলাতক সন্ত্রাসী, অস্ত্র, গোলাবারুদ, মাদক, জাল মুদ্রা, দেহ ব্যবসা ও নারী পাচারের সঙ্গে জড়িতরা

পল্লবী মোহাম্মদপুরে বিহারী ক্যাম্পে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ থেমে নেই ॥ অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৭ নভেম্বর ২০১৬

পল্লবী মোহাম্মদপুরে বিহারী ক্যাম্পে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ থেমে নেই ॥ অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য

গাফফার খান চৌধুরী ॥ উর্দুভাষী অবাঙালীদের ঢাকার ক্যাম্পগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল বাড়ি নির্মাণ থেমে নেই। অল্প জায়গার ওপর ইট, বালু, সিমেন্ট আর হালকা রড দিয়ে কোনমতে গড়ে তোলা হচ্ছে এসব বহুতল বাড়ি। যে কোন সময় এসব বাড়ি ধসে পড়তে পারে। প্রাণহানি ঘটতে পারে শত শত মানুষের। এমন ঘটনা ঘটলে স্বাভাবিক কারণেই ক্যাম্প নিয়ে কাজ করা এনজিও এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। ঢাকার ক্যাম্পগুলোতে এ ধরনের বাড়ির সংখ্যা অন্তত চার শতাধিক। অধিকাংশ বাড়িই চার ও পাঁচতলা। বাড়ির মালিকদের দাবি, লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে বহুতল বাড়ি তৈরি করছেন। প্রকৃতপক্ষে বাস্তব অবস্থাটা ভিন্ন। বহুতল এসব বাড়ির মালিকরা বসবাস করছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফ্ল্যাটে। আর এসব বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করছে দেশী-বিদেশী পলাতক সন্ত্রাসী, অস্ত্রগোলাবারুদ, মাদক, জালমুদ্রা, দেহ ব্যবসা ও নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত। যা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। জায়গা দখল করে বাড়ি নির্মাণ আর মাদক ব্যবসার সূত্রধরে সংঘর্ষের ঘটনায় রাজধানীর পল্লবী ও মোহাম্মদপুর থানা ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন আদালতে হাজার হাজার মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাগুলোর তদন্ত করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য। মাদকদ্রব্যের ব্যবসা, রাস্তা ও রাস্তা দখল করে বহুতল বাড়ি নির্মাণের জেরে ক্যাম্পগুলোতে দাঙ্গা হাঙ্গামার ঘটনা নিত্যদিনের। গত ১০ নবেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে অভিযানকালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শেষ পর্যন্ত পুলিশকে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হয়েছে। এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। এর মাত্র সপ্তাহখানেক আগেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানকালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চলতি বছরের ১৭ মার্চ ক্যাম্পটিতে মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্ব আর আধিপত্য বিস্তারের সূত্র ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রায় ১৪ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। ব্যাপক দাঙ্গাহাঙ্গামার কারণে হার্টএ্যাটাকে এক বৃদ্ধার মৃত্যুও হয়। এর আগে গত ৮ নবেম্বর জেনেভা ক্যাম্পে গলির জায়গা দখল করে সালাহ উদ্দিন নামের এক কাঠ ব্যবসায়ী বাথরুম, নিজস্ব বহুতল বাড়ির সিঁড়ি নির্মাণ ও ছাগল লালন পালনের জন্য ঘর তৈরি করলে কয়েক দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে। তাতে মহিলাসহ কয়েকজন আহতও হন। ক্যাম্পের ব্যবসায়ী শাহেদের ছোট ভাই রাজু ও সালাহ উদ্দিনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়। সালাহ উদ্দিনের এমন কর্মকা-ে অতিষ্ঠ হয়ে ক্যাম্পের বাসিন্দারা জোটবদ্ধ হয়ে তাড়া করলে সালাহ উদ্দিন পরিবার নিয়ে পালিয়ে যান। সম্প্রতি আবার ক্যাম্পে ফিরেছেন। একই গলিতে সালাহ উদ্দিনের একটি তিন তলা ও একটি চারতলা বাড়ি রয়েছে। ক্যাম্পের সামনে রাস্তা দখল করে বহুদিন ধরেই কাঠের ব্যবসা করছেন। দুটি দোকান রয়েছে কাঠের। মোহাম্মদপুর থানার ওসি মীর জামাল উদ্দিন বলছেন, সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বার বার রাস্তা থেকে কাঠ সরিয়ে দিলেও সালাহ উদ্দিন প্রতিবারই রাস্তা দখল করে কাঠের ব্যবসায় জড়িত। এতে রাস্তায় প্রায় প্রতিদিনই যানজটের সৃষ্টি হয়। যদিও সালাহ উদ্দিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, তিনি অবৈধ কোন কিছুর সঙ্গে জড়িত নন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার ক্যাম্পগুলোতে একাধিক চক্র রয়েছে। চক্রগুলো ক্যাম্পে বসবাসকারী অপেক্ষাকৃত দরিদ্র পরিবারগুলোকে টার্গেট করে। তারা দরিদ্র পরিবারটির বসবাসের জন্য থাকা কক্ষটি ভেঙ্গে বহুতল বাড়ি নির্মাণের প্রস্তুাব দেয়। এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে অলিখিত চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক চক্রটি প্রথমে ওই কক্ষের মালিককে নগদ ৪০/৫০ হাজার টাকা দেয়। এরপর বাড়ি নির্মাণ করে মূল মালিককে নিচতলায় থাকতে দেয়। আর উপরে থাকা কক্ষগুলো ভাড়া দেয়। এসব বাড়ির ভাড়াটিয়াদের অধিকাংশই মাদক, দেহ ব্যবসা ও নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি ভারত সীমান্তে সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে ধরা পড়া বিখ্যাত ভারতীয় সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব ও টি-সিরিজের মালিক গুলশান কুমার হত্যা মামলার পলাতক আসামি মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ আব্দুর রউফ দাউদ মার্চেন্ট দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে উর্দুভাষী অবাঙালীদের ক্যাম্পে আরেক মাফিয়া ডন ছোটা শাকিলের সহযোগী জাহিদ শেখের সঙ্গে ছিলেন। জাহিদ শেখ মোহাম্মদপুরের উর্দুভাষী ক্যাম্পে বহু দিন ধরেই বসবাস করছিলেন। ২০০৯ সালে গ্রেফতার হন তিনি। জাহিদ শেখের প্রধান কাজই ছিল বিদেশী মোস্টওয়ান্টেড সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশের পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়ে তাদের বাংলাদেশে বসবাসের ব্যবস্থা করা। এসব সন্ত্রাসীর অধিকাংশই উর্দুভাষী ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করত। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, দেশী-বিদেশী সন্ত্রাসীদের ক্যাম্পে থাকার জায়গা করে দিয়ে চক্রটি মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের দিয়ে নানা অপকর্মও করায়। আর যার কাছ থেকে জায়গা নিয়ে বাড়ির ওপর কয়েক তলা করে, তাদের প্রথম প্রথম কিছু দিন ভাড়া হিসেবে নিয়মিত টাকাও দেয়। এরপরই চক্রটি শুরু করে তাদের নোংরা চক্রান্ত। সিন্ডিকেটটি ওই বাড়িতে অবৈধ ব্যবসা চলে বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানায়। যথারীতি অভিযানে বাড়ির মালিক নিজ বাড়িতে মাদক ব্যবসায়ীদের জায়গা দেয়ার অপরাধে গ্রেফতার হন। অনেক সময় বাড়ির মালিককে দীর্ঘদিন কারাগারেও থাকতে হয়। এমন সুযোগে চক্রটি বাড়ির দখল নিয়ে নেয়। আবার এমন চক্রান্তে কাজ না হলে অনেক সময় বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, দেহ ব্যবসাসহ অন্যান্য অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছে অভিযোগ করে। অনেক সময় বাড়িতে মাদক রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ধরিয়ে দেয়। বাড়ির মালিক গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেলে বাড়ি তারা দখলে নিয়ে নেয়। এভাবে বহু নিরীহ বাসিন্দাকে ঢাকার ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে হয়েছে। অনেককে জেলের ঘানি টানতে হয়েছে। এমন চক্রের কবলে পড়ে আছেন অনেক উর্দুভাষী অবাঙালী পরিবার। ক্যাম্পগুলোতে থাকা অনেক প্রভাবশালী উর্দুভাষী অবাঙালী একাধিক বহুতল বাড়ির মালিক। এসব বাড়ির মালিকানার বিষয়ে কোন দলিলাদি নেই। এমন সুযোগটিকেই কাজে লাগায় চক্রটি। তারা বাড়িতে ভাড়াটিয়া তুলে দিয়ে নিজেরা পরিবার নিয়ে বাইরে বসবাস করে। তার বাড়ি থেকে অবৈধ কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে কেউ গ্রেফতার হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার টিকেটিও ছুঁতে পারে না। তিনি ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। মোহাম্মদপুর থানার ওসি মীর জামাল উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, ক্যাম্প সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে দায়েরকৃত মামলাগুলো খুবই জটিল। কারণ এসব মামলার প্রকৃত কারণ অনেক গভীরে। প্রতি মাসে কোর্টে দায়েরকৃত মামলা, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মামলা, মাদক, ক্যাম্পবাসীদের মারামারি, জায়গা জমি দখল, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ সংক্রান্ত সবমিলিয়ে অন্তত অর্ধশত মামলা দায়ের হয়। এত মামলার তদন্ত করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় তাদের। তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পগুলো এতটাই ঘনবসতি যে, সেখানে অভিযান চালানো খুবই কঠিন। এসব ক্যাম্পে কারা বসবাস করছে তাদের সঠিক পরিচয় শনাক্ত করা দুরূহ ব্যাপার। এমন সুযোগে স্বাভাবিক কারণেই দেশী-বিদেশী সন্ত্রাসী, মাদক, দেহ ব্যবসায়ী ও নারী শিশু পাচারকারীদের সেখানে আশ্রয় নিয়ে থাকাটাই স্বাভাবিক। পল্লবী থানার ওসি মোঃ দাদন ফকির জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতি মাসে ক্যাম্পের মাদক সংক্রান্ত অন্তত ৪০টি মামলা দায়ের হয়। এছাড়া ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, মারামারি, জমিজমা সংক্রান্ত আরও অন্তত ২০টি মামলা হয়। সবমিলিয়ে অন্তত ৬০ থেকে ৬৫টি মামলা হয় ক্যাম্পকেন্দ্রিক বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ক্যাম্পগুলোতে বহুতল ভবন রয়েছে। তবে তা তিন তলার বেশি নয়। পল্লবীর ক্যাম্পগুলোতেও প্রায় মোহাম্মদপুরের মতো সমস্যা। তবে মারামারি আগের চেয়ে পুলিশী তৎপরতার কারণে কমে গেছে। জানা গেছে, উর্দুভাষী অবাঙালীদের ক্যাম্পগুলো সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন। নিয়মানুযায়ী ক্যাম্পে কেউ অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ, দোকানপাট তৈরি, পানি ও বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ, মাদকসহ সব ধরনের অবৈধ ব্যবসা করতে পারবে না। অথচ তার কোন বালাই নেই। জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী ক্যাম্পের বিদ্যুত ও পানির বিল সরকারকে দিতে হয় না। এমন সুযোগে ক্যাম্প থেকে আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবৈধ পানি ও বিদ্যুত সংযোগ দিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা উপার্জন করছেন ক্যাম্পের এক শ্রেণীর অসাধু নেতৃবৃন্দ। প্রতি মাসে শুধু এ খাতেই মোহাম্মদপুরের ক্যাম্পগুলোতে সরকারের অন্তত ১০ কোটি টাকার বিদ্যুত অপচয় হচ্ছে। অথচ এসব ব্যাপারে যেসব জেলায় ক্যাম্প রয়েছে, সেসব জেলার প্রশাসকের কাছে মন্ত্রণালয়ের লিখিত নির্দেশনাও রয়েছে। তবে সেসব নির্দেশনার তেমন কোন বাস্তবায়ন লক্ষ্য করা যায়নি। ঢাকা জেলা প্রশাসকের তরফ থেকে ক্যাম্পে বসবাসকারীদের পাশাপাশি বহিরাগতদের শনাক্ত করতে ছবিসহ পরিচয়পত্র প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছিল। যারা ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তাদের বাইরে যারা রয়েছেন, তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতেই এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সে নির্দেশনার কোন বাস্তবায়ন লক্ষ্য করা যায়নি। প্রতিটি ক্যাম্পে এ সংক্রান্ত কমিটি রয়েছে। কমিটিকে নিয়মিত জেলা প্রশাসকের কাছে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। সেসবের কোন বালাই নেই। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের জোন-এ’র চেয়ারম্যান এস কে গোলাম জিলানীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, মাদকসহ যে কোন ধরনের বেআইনী কর্মকা-ে জড়িতদের বিষয়ে তারা সজাগ রয়েছেন। অবৈধ কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মিত অবহিত করে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করছেন। প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান আলাদা হয়ে যায়। ওই সময় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মুসলমানরা মুসলিম দেশে বাস করতে আগ্রহ দেখায়। আগ্রহীদের তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কৌশলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বর্তমানে বাংলাদেশে থাকার ব্যবস্থা করে। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে ও ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অবাঙালী উর্দুভাষী অবাঙালীরা পাকিস্তানের পক্ষ নেয়। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আন্তর্জাতিক রেডক্রস বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় উর্দুভাষী অবাঙালীদের বসবাসের জন্য ক্যাম্প স্থাপন করে, যা জেনেভা ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত। ১৯৯২ সালে মক্কাভিত্তিক এনজিও রাবেতা আল ইসলাম বাংলাদেশে বসবাসকারী উর্দুভাষী অবাঙালীদের ওপর জরিপ করে। সেই জরিপ মোতাবেক দেশের ১৭টি জেলায় ৭০টি ক্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুরে ৬টি ও মিরপুরে ২৫টি। বাকি ৩৯টির মধ্যে বগুড়া, গাইবান্ধা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, ঠাকুরগাঁও, জামালপুর ও নীলফামারিতে ১টি করে, নারায়ণগঞ্জে ৩টি, যশোরে ৯টি, রংপুরে ২টি, রাজশাহীতে ২টি, চট্টগ্রামে ৫টি, ঈশ্বরদীতে ৪টি ও খুলনায় ৫টি। জরিপ অনুযায়ী ওই সময় ক্যাম্পের জনসংখ্যা ছিল প্রায় আড়াই লাখ। বর্তমানে জনসংখ্যা অন্তত ৫ লাখ। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতার সূত্র ধরে ১৯৯২ সালের ১০ জানুয়ারি প্রথম দফায় ৫৬টি পরিবারের ৩২৫ সদস্য পাকিস্তানে যেতে সক্ষম হয়। তাদের রাখা হয় পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মিয়া চন্নু জেলায় অবস্থিত পুনর্বাসন কেন্দ্রে। এরপর ক্যাম্পবাসীদের পাকিস্তান যাওয়ার প্রক্রিয়া থেমে যায়। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশে থাকা উর্দুভাষী অবাঙালীদের পাকিস্তানে নিয়ে যাবে না বলে জানিয়ে দেয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে পরবর্তীতে ক্যাম্পের অনেকেই ভোটার তালিকাভুক্ত হন। উর্দুভাষী অবাঙালীদের সংগঠন মোহাজির ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অসি আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ক্যাম্পের বাসিন্দারা পাকিস্তান যেতে নারাজ। বর্তমানের ক্যাম্পবাসীদের মধ্যে অন্তত দেড় লাখ ভোটার। আবার অনেকেই জন্মসূত্রে এদেশের নাগরিক। তিনি এদেশেই উর্দুভাষী অবাঙালীদের পুনর্বাসনের দাবি জানান। ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, উর্দুভাষী অবাঙালীদের পুনর্বাসনের বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য জোরালো তৎপরতা অব্যাহত আছে।
×