ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়েমেনে কারাগার ও আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় নিহত ৬৪

শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হাদির

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৩১ অক্টোবর ২০১৬

শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হাদির

ইয়েমেনের যুদ্ধ অবসানে জাতিসংঘের একটি শান্তি প্রস্তাব শনিবার প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আব্দুরাব্বু মনসুর হাদি। এদিকে ইয়েমেনের একটি কারাগারে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব জোট বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৪৭ জন বিদ্রোহী, কারাবন্দী ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। খবর এএফপি ও বিবিসির। হাদি সরকারের অনুগত বাহিনী ২০১৪ সাল থেকে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে ভয়াবহ যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। একই বছরের শেষের দিকে হুতি বিদ্রোহীরা দেশটির রাজধানী সানা দখল করে হাদি সরকারকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ২০১৫ সালের মার্চে যখন বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি আরব সামরিক অভিযান শুরু করে তখন থেকে এই সংষর্ঘ আরও বেড়ে যায়। যুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার লোক নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি স্থগিত হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করতে এবং ইয়েমেনের যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে অস্ত্রবিরতি বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক শান্তি প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইসমাইল ঔলদ শেখ আহমেদ। প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রেসিডেন্ট হাদি, এমনকি তিনি এটি গ্রহণও করেননি। শেখ আহমেদ সৌদি রাজধানী রিয়াদে হাদির সঙ্গে দেখা করে এই প্রস্তাব দেন। রাজধানী সানা বিদ্রোহীরা দখল করে নেয়ার পর ইয়েমেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এডেনে সাময়িকভাবে সরকারী দফতরগুলো স্থানান্তর করা হয়েছে। আর হাদি সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তাদের নিয়ে রিয়াদে অবস্থান করছেন। এই প্রস্তাবে শান্তির জন্য একটি ‘রোডম্যাপ’ প্রণয়ন করা হলেও তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি, তবে এতে ইয়েমেনের ভবিষ্যত সরকারে হুতি বিদ্রোহীদের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে রিয়াদ থেকে হাদি বলেছেন, রোডম্যাপে শুধু আরও দুর্ভোগ ও যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দরজা খুলে দেয়া হয়েছে এবং এটি শান্তির জন্য নয়। প্রস্তাবে অভ্যুত্থানের নেতাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে এবং ইয়েমেনি জনগণকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। ইয়েমেনের প্রধান প্রধান শহরগুলো থেকে হুতিদের নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করার বিনিময়ে প্রস্তাবে প্রেসিডেন্টের কিছু ক্ষমতাও হ্রাস করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে হাদির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান নিয়ে তার আরব জোট মিত্রদের প্রতিক্রিয়া এখনও স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে জোটের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাত বৃহস্পতিবার এই প্রস্তাবের প্রশংসা করে বলেছিল, এটি হবে ইয়েমেন সঙ্কটের একটি রাজনৈতিক সমাধান। সৌদি আরব ও বিদ্রোহীরা এ বিষয়ে এখনও কোন মন্তব্য করেনি। ইয়েমেনের যুদ্ধরত পক্ষগুলো এই সংঘর্ষ অবসানের জন্য ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। এই সংঘর্ষের ফলে দরিদ্র পীড়িত দেশটিতে অপুষ্টি ও রোগের বিস্তার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও বেসামরিক উচ্চ মৃত্যুহারের কারণে বিমান হামলা নিয়ে জোট বাহিনীও চাপের মধ্যে আছে। এদিকে ইয়েমেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় বন্দর শহর হুদেইদাহর আল জায়িদিয়ায় শনিবার একটি নিরাপত্তা দফতরে হামলাটি চালানো হয়। ওই দফতরের একটি ভবন কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। জোট বাহিনীর বোমা এই ভবনটিতে আঘাত করে বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তা ও চিকিৎসা কর্মকর্তারা। ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এতে ৪০ জনেরও বেশি বন্দী নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কারাবন্দীদের পাশাপাশি বিদ্রোহীরাও রয়েছে। হামলার সময় বহু বিদ্রোহী ওই ভবনে ছিল। হুতি নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম নিহতের সংখ্যা ৪৩ জন বলে জানিয়েছে। হুদেইদাহ শহরটি হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে আছে। এছাড়া ইয়েমেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় তৃতীয় বৃহত্তম নগরী তায়েজের সালো শহরের তিনটি আবাসিক ভবনে চারবার বিমান হামলা চালানো হয়। এতে ১৭ জন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছে। সরকারের প্রতি অনুগত স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, জোট বাহিনী ভুল করে এই হামলা চালিয়েছে। ওই ভবনগুলোতে অবস্থান করা সবাই নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে সাত নারী ও এক শিশু রয়েছে। চলতি মাসের প্রথমদিকে সানায় জানাজার নামাজ চলাকালীন জোট বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ১৪০ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হন। বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখে এ হামলার জন্য ‘ভুল গোয়েন্দা তথ্যকে’ দায়ী করে সৌদি জোট।
×