ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

১২৮ রানের লিড বাংলাদেশের ॥ মিরাজের রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

১২৮ রানের লিড বাংলাদেশের ॥ মিরাজের রেকর্ড

মিথুন আশরাফ ॥ মেহেদী হাসান মিরাজ চট্টগ্রাম টেস্টের পর ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসেও কি দুর্দান্ত বোলিং করলেন। ৬ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়লেন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই উজ্জ্বল একটি অধ্যায় তৈরি করলেন। ক্রিকেট বিশ্বে প্রথম অফস্পিনার হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টের কোন না কোন ইনিংসে ৫ উইকেট বা তার বেশি উইকেট শিকার করলেন। তার এ অসাধারণ বোলিংয়ে দুই দলের প্রথম ইনিংস শেষে ইংল্যান্ডও বেশি রানে এগিয়ে যেতে পারল না। ২৪ রানে এগিয়ে গেল। এরপর বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ইমরুল কায়েসের অপরাজিত ৫৯ রানে ৩ উইকেটে ১৫২ রান করে ১২৮ রানে এগিয়ে রইল। আজ ম্যাচের তৃতীয়দিন। ইমরুল ব্যাট হাতে নামবেন। এরপর ব্যাটসম্যান হিসেবে আছেন- সাকিব, মুশফিক, সাব্বির, শুভাগত, মিরাজ। তামিম (৪০) ও দ্বিতীয়দিনের শেষ বলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৪৭) আউট হয়ে গেছেন। সকালের সেশনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সেশনটা যদি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা ভালভাবে অতিক্রম করতে পারেন, তাহলে ভাল কিছু হওয়া সম্ভব। যদি প্রথম ইনিংসের মতো ছন্নছাড়া হয়ে না পড়েন ব্যাটসম্যানরা, সেই ভালটা অবশ্যই ২৫০ রানের লিড হতে পারে। প্রথম ইনিংসে এত খারাপ হওয়ার পরতো ২২০ রান হয়েছে। এবার কম করে হলেও ২৫০ রান না হলে ইংল্যান্ডকে বিপাকে ফেলা অসম্ভবই বলা চলে। এত কঠিন পরিস্থিতি থেকেও যে ইংলিশরা প্রথম ইনিংসে ২৪৪ রান করে ফেলেছে। বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজ কাভার করতে আসা ডেইলি মেইলের সাংবাদিক লরেন্স বুথের বিশ্বাস, ‘যদি বাংলাদেশ ১৮০ রানের বেশি লিড নিতে না পারে, তাহলে অনায়াসেই জিতবে ইংল্যান্ড। আর যদি লিড ২৫০ রানের হয়ে যায়, তাহলে জিততে পারে বাংলাদেশ।’ ইংলিশ সাংবাদিকরাই মনে করছেন, ২৫০ রানের লিড হলে ইংল্যান্ডের জেতার আশা শেষ। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের স্কোরবোর্ডে যে ২৫০ রানের কম যোগ করা যাবে না, তা তো তারাই ভাল বুঝে। সেই হিসেবে জয়ের সম্ভাবনায় থাকার মতো রান করতে আর ১২২ রান লাগে বাংলাদেশের। ওকস কিন্তু বিপদ সঙ্কেত দিয়ে রেখেছেন। এখন যে অবস্থা আছে সেই হিসেবে তার বলা কথা এমন, যদি বাংলাদেশকে ২৫০ রানের মধ্যে বেঁধে রাখা যায়, তাহলে জয় সম্ভব। কিন্তু উইকেটের যে আচরণ, তাতে এই ২৫০ রানই জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়ে দাঁড়াতে পারে। এরচেয়ে যত বেশি হয়, তা তো আরও ভাল। উইকেট যে কখন কি আচরণ করছে, শুধু ‘ভেল্কি’ দিয়ে যাচ্ছে। সকালেই যেমন টপাটপ উইকেট পড়ল। বাংলাদেশের দুই স্পিনার মিরাজ ও তাইজুল মিলে মুহূর্তেই ৫ উইকেট তুলে নিলেন। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে ইংল্যান্ডের ৮ উইকেটের পতন ঘটে গেল। আগেরদিন ৩ উইকেটে ৫০ রান করে ইংলিশরা। এরসঙ্গে আরও ১১৩ রান করতেই নেই ৫ উইকেট। এরমধ্যে স্টোকস ও রুটকে আউট করেন তাইজুল। মিরাজ সাজঘরে ফেরান মঈন, বেয়ারস্টো ও আনসারিকে। তাতে করেই আগেরদিনের শিকার করা ২ উইকেটের সঙ্গে দ্বিতীয়দিন ৩ উইকেট শিকার করেন মিরাজ। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট শিকারের পর ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ৫ উইকেট শিকার করা হয়ে যায় মিরাজের। যেই আনসারিকে আউট করেন, সঙ্গে সঙ্গে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টেই কোন না কোন ইনিংসে প্রথম অফ স্পিনার হিসেবে ৫ উইকেট বা তার বেশি উইকেট শিকার করে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান। শুধু মিরাজই নন, স্পিনার হিসেবে আরও দুইজন এ কৃতিত্ব গড়েন। সর্বপ্রথম অস্ট্রেলিয়ার প্রয়াত লেগ স্পিনার ক্ল্যারি গ্রিমেট এই অর্জন নিজের করে নেন। এরপর ইংল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার নিক কুক একই গৌরব অর্জন করেন। ১৯২৫ সালে অভিষেক টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৫ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নেয়ার একবছর পর দ্বিতীয় টেস্ট খেলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেন গ্রিমেট। ৫৭ বছর পর ইংল্যান্ডের কুক ১৯৮৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও সমান উইকেট নেন। গ্রিমেট ও কুকের পর ৩৩ বছর পর শনিবার মিরাজ একই কীর্তি গড়েন। তবে অফস্পিনার হিসেবে ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম মিরাজ এমন গৌরব অর্জন করেন। স্পিনার বাদ দিয়ে পেসাররাও এমন কৃতিত্বের দাবিদার হয়েছেন। এরমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার চার্লি টার্নার, রডনি হগ, ইংল্যান্ডের রিচার্ড জনসন ও দক্ষিণ আফ্রিকার ভেরনন ফিল্যান্ডাররাও এমন কৃতিত্ব গড়েছেন। এদের মধ্যে ফিল্যান্ডার এখনও খেলেন। সবাইকে ছাপিয়ে এককভাবেই প্রথম অফ স্পিনার হিসেবে এমন গৌরবের মালিক হয়েছেন মিরাজ। তার বোলিংয়ে লিড নেয়ার আশাও জাগে। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির পর ক্রিস ওকস ও আদিল রশিদ মিলে নবম উইকেটে এশিয়ার মাটিতে ও বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৯৯ রানের জুটিটি গড়ে ফেলেন। ১৪৪ রানেই ৮ উইকেটের পতন ঘটানো যায়। আরও আগেই এই ৮ উইকেটের পতন ঘটত, যদি মুশফিক দুটি ক্যাচ লুফে নিতে ব্যর্থ না হতেন। এরপরও মনে করা হয়, প্রথম ইনিংসেই এবার বড় রানের লিড নেবে বাংলাদেশ। কিন্তু ওকস আর রশিদই প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ২৪৩ রানে ওকসকে (৪৬) আউট করে দেন মিরাজই। ৬ উইকেট নিজের ঝুলিতে ভরে নেন। আরেক রান যোগ হতেই ফিনকে সাজঘরে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে গুটিয়ে দেন তাইজুল। মিরাজ ৬ উইকেট নেন। তাইজুল নেন ৩ উইকেট। আর সাকিব নেন ১ উইকেট। তিন স্পিনারই ইংল্যান্ডকে শেষ করে দিল। দিনের শেষ সেশনটি পুরো খেলল বাংলাদেশ। তাতে করে অনেকটা পথ এগিয়েও রইল। এই এগিয়ে থাকা এখন যত বেশি সম্ভব বজায় রাখতে হবে। যদি আবার ছন্নছাড়া ব্যাটিং মিলে, তাহলে হারের সম্ভাবনাতেই পড়ে যাবে বাংলাদেশ। বোলাররা নিজেদের কাজ করে দিয়েছেন। ব্যাটসম্যানদের ওপরই এখন ভরসা। দ্বিতীয়দিনে এগিয়ে থাকা গেছে। এখন কি তৃতীয়দিনেও পারবে বাংলাদেশ ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ রাখতে? চট্টগ্রাম টেস্টের স্মৃতি ও ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসের স্মৃতি থেকে সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।
×