ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দুদিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি

দঃ এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ চাই

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

দঃ এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ চাই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শুধু বহির্মুখী না হয়ে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার অব্যবহৃত সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি বলেন, পুঁজি ও বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রবাহের সুফল পেতে এ অঞ্চল বহির্মুখী হচ্ছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার ভেতরে আন্তঃআঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা থেকে সুফল পেতে এখনও অনেক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর বাকি আছে। অধিকতর গতিশীল ও উদীয়মান দক্ষিণ এশিয়া গড়তে আরও সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী নবম দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হলো ২০৩০ সালের দক্ষিণ এশিয়া পুনর্ভাবনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ থেকে উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিভিন্ন খাতে নিবিড় সহযোগিতা সরকারের এ লক্ষ্য পূরণে ভূমিকা রাখবে। এ সময় জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দের লক্ষ্য পূরণেও দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর একসঙ্গে কাজ করা দরকার বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি। আবদুল হামিদ বলেন, আমরা এমন একটা দক্ষিণ এশিয়া চাই যেখানে কোন দারিদ্র্য থাকবে না, যেখানে সম্মানজনক পেশা ও কাজের সুযোগ থাকবে, যেখানে থাকবে সম্পদের সুষম বণ্টন এবং সরকার হবে অংশগ্রহণমূলক; যেখানে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাস করবে। এমন একটি দক্ষিণ এশিয়া গড়তে আমাদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও উপকরণ একত্র করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান, সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর পলিসি স্টাডিজের চেয়ার দীপক নাইয়ার, নেপালের বাণিজ্যমন্ত্রী রোমি গাউছান থাকালি, শ্রীলঙ্কার স্পেশাল এ্যাসাইনমেন্ট মিনিস্টার সারাথ আমুনুগুমা, পাকিস্তানের এমপি রানা মুহাম্মদ ও সিপিডির গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ‘ইজ পলিটিক্যাল লিডারশীপ ইন সাউথ এশিয়া রেডি ফর ইমপ্লিমেন্টিং দি ২০৩০ এজেন্ডা’ শীর্ষক সেশনের সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে কিভাবে আঞ্চলিক সহযোগিতা কাজে লাগানো যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতার কৌশল ও ক্ষেত্রগুলো সামনের দিকে এগিয়ে আনার সম্ভাব্য উপায় ও প্রতিবন্ধকতাগুলোর ওপর মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। সার্ক সম্মেলন স্থগিত হওয়া শুধু পাকিস্তানের জন্যই নয়, এটা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য হতাশা বয়ে আনবে বলে জানান পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত পার্লামেন্টারি সচিব ও পার্লামেন্ট সদস্য রানা মাহমুদ আফজাল খান। সংলাপ ছাড়া এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। ভুটানের পার্লামেন্ট সদস্য চিয়দা জামসো বলেন, অঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে এবং কার্যকর উপায় খুঁজে বের করতে সার্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহন ও মাধ্যম হতে পারত। কিন্তু সেটি সঠিক পথে নেই। এ অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অর্থনৈতিক সামাজিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে গঠিত এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নে মোটেও প্রস্তুত নয়। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাজনৈতিক শক্রতা, তীব্র প্রতিযোগিতা, নেতৃবৃন্দের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসহীনতা এখন এ অঞ্চলের প্রধান বাধা বলে অভিহিত করেন তিনি। টেকসই ও দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্রের দ্রুত সম্প্রসারণ এবং সুশাসনÑ এ তিনটি লক্ষ্যে বাস্তবায়নে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের গুরুত্বারোপ করতে হবে বলে জানান শ্রীলঙ্কার বিশেষ কার্যসম্পাদন (এ্যাসাইনমেন্ট) মন্ত্রী সারথ আমুনুগামা। এবারের সম্মেলনের সহআয়োজক হলোÑ ভারতের রিসার্চ এ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজ, পাকিস্তানের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট পলিসি ইনস্টিটিউট, শ্রীলঙ্কার ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজ অব শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ এশিয়া ওয়াচ অন ট্রেড, ইকোনমিকস এ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন সমস্যা এবং এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ২০০৮ সালে সাউথ এশিয়া ইকোনমিক সামিট (এসএইএস) আত্মপ্রকাশ করে। জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আজ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। দক্ষিণ এশিয়া অনেক সম্ভাবনাময় অঞ্চল, আবার অনেক চ্যালেঞ্জেরও। তবে নানা প্রেক্ষাপটে সার্ক পিছিয়ে গেছে। আবার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কারণে সার্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক সম্মেলন সার্কের আওতায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। এ অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর পরই দক্ষিণ এশিয়ার গড় মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেশি। ২০১৬ সালের এ অঞ্চলে গড়ে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। কিন্তু আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য মাত্র ৫ শতাংশের মতো। নিজেদের বাণিজ্য বাড়িয়ে নেয়ার বিশাল সুযোগ আছে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো করছে। সার্কের প্রয়োজনীয়তা আছে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দূর করতে হলে সার্ক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ ও গণতন্ত্রায়নের অভাবে মানবাধিকার, আইনের শাসন ও বাক্স্বাধীনতা ক্ষুণœ হচ্ছে। কয়েকটি রাজ্যকে সংযুক্ত না করে বাংলাদেশের উচিত হবে কয়েকটি দেশের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব সার্কের অন্যদেশগুলোকে এশিয়ার অন্য জোটগুলোর মধ্যে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়াতে পারে বলে মনে করেন ভারতের মিডিয়াস্কেপ প্রাইভেট লিমিটেডের প্রধান সম্পাদক শেখর গুপ্ত। তেমন শঙ্কার কথাও জানান আফগানিস্তানের অর্থমন্ত্রীর উপদেষ্টা নাজির কাবিরি। তিনি বলেন, আমরা এখন সেন্ট্রাল এশিয়ার দিকে নজর দিচ্ছি। এ জোট থেকে অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সুযোগ-সুবিধা বেশি পাওয়া যাবে। আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ দমনে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ অঞ্চলের মানুষের অভিন্ন স্বার্থগুলোকে সমন্বিত করে দূরত্ব ও দ্বন্দ্বগুলোকে দূর করতে হবে জানিয়ে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার পাশাপাশি এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে এ অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ কি অবহিত আছে? সমস্যার মূলে গিয়ে আমাদের সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
×