ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ সিরিজ হারল

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

বাংলাদেশ সিরিজ  হারল

মিথুন আশরাফ ॥ ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার আউট হতেই পুরো স্টেডিয়াম নিশ্চুপ হয়ে গেল। কোন উল্লাস নেই। এমনকি ক্রিকেটাররাও উল্লাস করলেন না। মোসাদ্দেক হোসেনতো ঠোঁটে আঙ্গুল তুলে চুপ থাকলেন। বাটলারের বিপক্ষে জয়ই মিলল। কিন্তু ম্যাচ শেষে আসল জয়ী ক্রিকেটার হলেন বাটলারই। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৪ উইকেটে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিল ইংল্যান্ড। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের শিরোপা যে বাটলারের হাতেই শোভা পেল। অথচ সেই শিরোপা বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার হাতেও থাকতে পারত। যদি ইংলিশ স্পিনারদের মতো বাংলাদেশ স্পিনারদের বলেও ‘বিষ’ থাকত। কিন্তু শিশির এতটাই ম্যাচে প্রভাব ফেলল যে ‘টস জেতা মানেই এমন মৌসুমে ম্যাচ জেতা’ সেøাগানই দাড় হয়ে গেল। বাংলাদেশ দল যখন ব্যাটিং করল, রানও হলো; আবার উইকেটও গেল। এক লেগ স্পিনার আদিল রশিদই ৪ উইকেট তুলে নিলেন। তার স্পিন ঘূর্ণিতে বাংলাদেশও শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৭৭ রানের বেশি করতে পারল না। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হতে সবাই আশা দেখেছিলেন। কারণ, স্পিন যেহেতু ভাল হচ্ছে, তাহলেতো সাকিব ‘হিট’। কিন্তু পুরোটাই উল্টো হয়ে গেল। শিশির পড়তে শুরু করে দিল। সেই শিশিরে সাকিব টার্ন করার মতো যথেষ্ট আঙ্গুল বলে রাখতে পারলেন না। বলও টার্ন করল না। সাকিব ব্যর্থ হলেন। তাতে যেন বাংলাদেশও ব্যর্থ হয়ে গেল। ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৭.৫ ওভারে ২৭৮ রান করে জিতে গেল ইংল্যান্ড। প্রথম ওয়ানডেতে ২১ রানে জেতায় সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিল ইংল্যান্ড। মাঝখানে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩৪ রানে হেরেছিল। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ভুল এদিন অনেক বেশি হয়েছে। বিশেষ করে রশিদের বলে টার্ন হলেও অহেতুক আউটের শিকার হয়েছেন তামিম ইকবাল (৪৫), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৬) ও নাসির হোসেন (৪)। এ তিন ব্যাটসম্যানই দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভুল শটে সাজঘরে ফেরেন। ১৯২ রানেই ৬ উইকেট পতনের পর যদি দীর্ঘদিন অফ ফর্মে থাকা মুশফিকুর রহীম (৬৭*) ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (৩৮*) সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৮৫ রানের জুটি না গড়তেন, তাহলে বাংলাদেশ এত বড় স্কোর গড়তেও পারত না। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এত বড় স্কোর তাড়া করে এখন পর্যন্ত জয় নেই। ২২৬ রানের টার্গেট অতিক্রম করার রেকর্ড বাংলাদেশেরই আছে। এবার ইংল্যান্ড রেকর্ড গড়েই জিতল। সেই জয়টি মিলল ‘শিশির ভাগ্যে’ই। শিশির না পড়লে ফল অন্যরকমই হতে পারত। অবশ্য বাটলার যখন টস জিতলেন, আর ফিল্ডিং নিলেন; তখন ইংল্যান্ড অধিনায়কের মাথাতেও নিশ্চয়ই শিশির ছিল। বাংলাদেশ স্পিনাররা বিশেষ কিছু করতে পারবেন না, এ ভেবে নিশ্চয়ই আগে ব্যাট করেননি। তাতে পরিকল্পনায় সফল ইংল্যান্ড। বেন ডাকেট ৬৩, স্যাম বিলিংস ৬২, বেন স্টোকস অপরাজিত ৪৭ ও ক্রিস ওকস অপরাজিত ২৭ রান করেন। তাতেই বাজিমাত করে ইংল্যান্ড। ২৩৬ রানে ইংল্যান্ডের ৬ উইকেট যাওয়ার পর আশা দেখা গেলেও কাজ হয়নি। স্টোকস ও ওকস মিলে সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৪২ রানের জুটি গড়েই ম্যাচ জেতান। যদিও ২১ বলে ২১ রানের দরকার থাকার সময় ৪৬ রান করা ইমরুল কায়েস ওকসের ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি। এ ক্যাচটি ধরলে হয়তো কিছু একটা হতে পারত। আবার নাও হতে পারত। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অপরাজিত ৩৩ রান করা আদিল রশিদ যে ব্যাটিংয়ে ছিলেন। রশিদকে ব্যাটিংয়ে নামতেই হলো না। স্টোকস ও ওকস মিলেই ম্যাচ জেতান। ম্যাচ জয়ের পর যে মাটির দিকে ঘুষি মারার মতো উদযাপন করলেন স্টোকস, তা সবারই নজরে থাকল। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ক্রিকেটাররা বাটলার আউট হতেই বাঁধভাঙ্গা উল্লাস করেছিলেন। তাতে রেগে ক্ষোভও প্রকাশ করেন বাটলার। এবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাটলার আউট হতে কোন শব্দ হলো না। সেই ম্যাচেই হাত মেলানোর সময় তামিমের সঙ্গে তর্কে জড়ান স্টোকস। তাই মনে মনে একটা জেদও ছিল। সেই জেদ যেন ম্যাচ জিতিয়েই দেখালেন স্টোকস। ১৩ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশেরও সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে যায়।
×