ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডনের সাংবাদিকের দেশ ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১২ অক্টোবর ২০১৬

ডনের সাংবাদিকের দেশ ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা

পাকিস্তানের শীর্ষ স্থানীয় ইংরেজী সংবাদপত্র ‘ডন’এর এক সাংবাদিকের ওপর দেশ না ছাড়ার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পাকিস্তানী সরকার। সিরিল আলমেইদা নামে ওই সাংবাদিকের নাম সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ‘এক্সিট কন্ট্রোল লিস্ট’এ রাখা হয়েছে। পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর এক বৈঠকে মতবিরোধের খবর প্রকাশ করার পর তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়। ওই বৈঠকে ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সকে (আইএসআই) বলা হয়েছিল, সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোতে তাদের সমর্থনের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। খবর পিটিআই ও বিবিসির। ডনের কলাম লেখক ও রিপোর্টার আলমেইদা মঙ্গলবার ভোরে টুইট করে তার বিরুদ্ধে নেয়া এই পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। তিনি টুইটে লিখেছেন, বিমূঢ়, দুঃখিত। কোথাও যাওয়ার কোন উদ্দেশ্য ছিল না, এটাই আমার দেশ, পাকিস্তান। পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে তার মঙ্গলবার সকালে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় তাকে জানানো হয়, তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। এ ঘটনায় এক বিবৃতি দিয়ে ‘ডন’ এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের দফতর থেকে এই খবর অস্বীকার করা হলেও খবরটি একাধিকবার নিশ্চিত করা হয়েছে, বিভিন্ন সূত্রে যাচাইও করা হয়েছে। ৬ অক্টোবরের এক বিশেষ (স্কুপ) রিপোর্টে আলমেইদা লিখেছিলেন, সন্ত্রাসের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রভাবশালী সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে দিয়েছে পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার। খুব স্পষ্টভাবে সেনাবাহিনীকে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ। খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে তা তিনবার প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান সরকার। পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রিপোর্টটি প্রত্যাখ্যান করে এটিকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। নওয়াজ এই খবরকে ‘সাজানো’ বলে ব্যাখ্যা করেছে। এই খবর প্রকাশের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে তিনি সোমবার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারী এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। বিবৃতিটি প্রকাশের আগে একটি বৈঠক হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন নওয়াজ শরীফ, পাক সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ, অর্থমন্ত্রী ইশক দার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিসার আলী খান, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ খান ও আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রিওয়াজ খান। আলমেইদার রিপোর্টটি এমন সময় প্রকাশ করা হলো যখন, পাকিস্তানভিত্তিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের কাশ্মীর রাজ্যর উরি সেনাঘাঁটিতে হামলা নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। ওই হামলায় ১৮ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। রিপোর্টে সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, আইএসআইয়ের সঙ্গে কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সম্পর্ক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না সেনাবাহিনী। এ নিয়ে ওই বৈঠকে নওয়াজ, তার ভাই পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সরকারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আইএসআইর মহাপরিচালক রিজওয়ান আখতারের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। তারা সেনাপ্রধানকে হুঁশিয়ারি করে দেন যে, পাকিস্তান আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পাঞ্জাব মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় দৃঢ়ভাবে খবরটি প্রত্যাখ্যান করে বলে, বৈঠকে এ ধরনের কোন দ্বন্দ্ব ছিল না।
×