ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সিএমপির ঘোষণা

মিতু হত্যার প্রধান আসামি মুসাকে ধরিয়ে দিলে ৫লাখ টাকা পুরস্কার

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৭ অক্টোবর ২০১৬

মিতু হত্যার প্রধান আসামি মুসাকে ধরিয়ে দিলে ৫লাখ টাকা পুরস্কার

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় নেতৃত্বদানকারী সেই কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসাকে ধরিয়ে দিতে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনার মোঃ ইকবাল বাহার এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, কেউ নির্দেশ দিয়েছিল কিনা তা জানতে মুসাকে প্রয়োজন। উল্লেখ্য, ঘটনার কিছুদিনের মধ্যে মুসাকে গুম করা হয় বলে জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সিএমপি কমিশনার জানান, এই হত্যাকা-ে মুসার নেতৃত্বে একটি গ্রুপ অংশ নিয়েছিল। গ্রুপের সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে। তারা নেতৃত্বদানকারী হিসেবে মুসার নাম বলেছে। কিন্তু মুসাকে কেউ নির্দেশ দিয়েছিল কিনা তা জানা প্রয়োজন। সেজন্য তাকে গ্রেফতার করতে হবে। পুলিশ এতদিন পর্যন্ত মুসাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেছে বলে জানিয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘কেউ তাকে গ্রেফতার কিংবা গ্রেফতারে সহযোগিতা করলে পুরস্কার ঘোষণা করছি। সেটি ৫ লাখ টাকা।’ মুসা যেন দেশ ছেড়ে যেতে না পারে সে জন্য আকাশপথ, জলপথ ও স্থলবন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, আলোচিত এ হত্যাকা-ে গ্রেফতার হওয়া আসামিরা পুলিশ ও আদালতে যে স্বীকারোক্তি দিয়েছে তারা সকলেই থেমেছে মুসা পর্যন্ত গিয়ে। এই মুসাকে পাওয়া গেলেই জানা যাবে সে কার নির্দেশনা অনুযায়ী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে মোস্টওয়ান্টেড এ আসামিকে শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মুসা গুম হয়ে গেছে এমন তথ্যও চাউর রয়েছে। মুসার স্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছেন ২২ জুন পুলিশ মুসাকে ধরে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে তারা আর খোঁজখবর পাননি। মুসার স্ত্রীর দাবি প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, এটা তাদেরই প্রমাণ করতে হবে। পুলিশ মুসাকে গ্রেফতার করেনি। এসপি বাবুল আক্তারের নির্দেশেই স্ত্রী মিতুকে খুন করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিএমপি কমিশনার জানান, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং বিভিন্ন তথ্যে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে, মুসাই এ হত্যার নেতৃত্বদানকারী। তবে তাকে কেউ নির্দেশনা দিয়েছে কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে। বাবুল আক্তার স্ত্রী হত্যা মামলার বাদী। আমরা বাদী হিসেবে উনার বক্তব্য নিচ্ছি। মামলা তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা তার সঙ্গে প্রয়োজন অনুযায়ী কথা বলছেন। উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সকালে সন্তানকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় নৃশংসভাবে খুন হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। মোটরসাইকেলযোগে এসে একটি গ্রুপ তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭ জন গ্রেফতার হয়েছে। তন্মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম ও আনোয়ার হোসেন নামের দুই আসামি। রাঙ্গুনীয়ায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে দুইজন। একমাত্র মুসা ছাড়া হত্যাকা-ে সরাসরি অংশগ্রহণকারী সকল আসামিকেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তবে মুসার স্ত্রী তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার দাবি করলেও স্বীকার করেনি পুলিশ। এদিকে, চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার নেপথ্যে প্রথমে সন্দেহের তীর জঙ্গীদের দিকে থাকলেও দশদিন না যেতেই পুলিশ নিশ্চিত হয়ে যায় যে, এটি জঙ্গীকা- নয়। কিলারদের পরিচয় বেরিয়ে আসতেই চোখ কপালে ওঠার অবস্থা পুলিশ প্রশাসনের। কারণ, নেতৃত্বদানকারী মুসা বাবুল আক্তারের বিশ্বস্ত ও প্রধান সোর্স। এরপরই সন্দেহ ঘুরপাক খেতে থাকে এসপি বাবুল আক্তারকে ঘিরে। ঘটনার পর বাবুল আক্তার তার সন্তানদের নিয়ে অবস্থান করতে থাকেন ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুরালয়ে। সেখান থেকে ২৪ জুন রাতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশ সদর দফতরে। প্রায় পনেরো ঘণ্টা সেখানে রেখে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গ্রেফতার আসামিদের বাবুল আক্তারের মুখোমুখি করা হয়। আর এতেই রটে যায় যে, বাবুল আক্তার গ্রেফতার হয়েছেন। তবে গ্রেফতার না হলেও সেদিনই তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর তিনি আবার চাকরি ফিরে পাওয়ার তদবিরও চালান। তার কাছ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে বলেও বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু পদত্যাগপত্র একবার দেয়া হলে তা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই বলে আইজিপির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়। অবশেষে গত ৬ সেপ্টেম্বর তাকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
×