ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্যবান্ধব চাল বিতরণে ॥ ব্যাপক অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৭ অক্টোবর ২০১৬

খাদ্যবান্ধব চাল বিতরণে ॥ ব্যাপক অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ সরকারের ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী’র চাল নিয়ে রাজশাহীতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। হতদরিদ্ররা কার্ড পেলেও পাচ্ছেন না ১০ টাকা কেজি দরের চাল। এছাড়া তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জেলার মোহনপুর উপজেলায় খাদ্যবন্ধব কর্মসূচীর আওতায় প্রকৃত হতদরিদ্রের চাল না দিয়ে সম্পদশালীদের মাঝে চাল বিতরণ হচ্ছে। সর্বশেষ গত বুধবার উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের হতদরিদ্ররা কার্ডের বিপরীতে চাল না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর কবীর জানান, অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুধু মোহনপুর উপজেলা নয়, জেলার অন্য উপজেলাতেও চাল বিতরণ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। ওজনে কম দেয়া, কালোবাজারে বিক্রি, ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমেও চাল বিতরণের তথ্য পাওয়া গেছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় মোহনপুর উপজেলা ৬টি ইউনিয়নে নামের তালিকায় উঠে এসেছে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের নাম। চাল বিতরণ না করে কালো বাজারে বিক্রিরও অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বাকশিমইল ইউনিয়নে গাঁঙ্গোপাড়া গ্রামের ডিলার রবিউল ইসলাম মৃধার মোহনপুর বাজারে চাল বিতরণের জন্য স্থান নির্ধারিত ছিল। তবে তিনি ওই স্থানে চাল বিতরণ না করে জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে বিতরণ করেন। গতমাসে ৫শ’ অতিদরিদ্রের মাঝে চাল বিতরণের কথা থাকলে তিনি ৩শ’ জনকে চাল দেন। বাকিদের চাল না দিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। এদিকে গত মাসে কার্ডধারীদের মধ্যে যারা চাল উত্তোলন করেনি বুধবার চাল উত্তোলন করতে গিয়েও ফিরে আসেন। এ ইউনিয়নের ৩৮৪ নম্বর সুবিধাভোগী শহিদুল ইসলাম, ৪০৫ নম্বর সুবিধাভোগী আহসান, ১২০নম্বর হাসান আলী অভিযোগ করেন, জনপ্রতি ৩০ কেজি চালের স্থলে ২৮ কেজি চাল বিতরণ করা হচ্ছে। সুবিধাভোগীরা জানান, দুই মাসের চাল দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। কার্ডে দুই মাসের স্বাক্ষর নিয়ে কিছু ব্যক্তির মাঝে চাল বিতরণ করে দোকানঘর বন্ধ করে চলে যান ডিলার। গত বুধবার সকাল ৯টায় চাল বিতরণ হবে জেনে উপজেলার শিবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৭৬ সুবিধাভোগী উপস্থিত হন। দীর্ঘসময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও চাল না পেয়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করে। পরে বেলা ২টার দিকে ডিলার মশিউর রহমান ১ বস্তা মুড়ি সুবিধাভোগীর মাঝে বিতরণ করেন। রাযঘাটি ইউনিয়নে লালইচ গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে শহিদুল ইসলাম সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে সুবিধাভোগীদের মাঝে চাল বিতরণ করেন। সেখানেও ৩০ কেজির বদলে দেয়া হয় ২৭ কেজি। জানা গেছে, রাজশাহীতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ৫০ বিঘা সম্পত্তির মালিকের ছেলের নামে হতদরিদ্রের জন্য কার্ড দেয়া হয়েছে। কার্ড পেয়েছেন হার্ডওয়ারের ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাও। তবে কার্ড পাননি বিধবা নারী বা তার ভ্যানচালক ছেলে। জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় ৮১ হাজার ৪৮২টি পরিবারকে হতদরিদ্রের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এরমধ্যে মোহপুরের বাকশিমইল ইউনিয়নের ভেটুপাড়া গ্রামের প্রায় ৫০ বিঘা জমির মালিক হোসেন মৃধার ছেলে শিহাব পেয়েছেন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর কার্ড। তিনি মুদি ব্যবসায়ী। কিন্তু একই উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত আব্দুলের বিধবা স্ত্রী নিলুফা এই কার্ডের আওতায় আসেননি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে জানা গেছে, প্রতিটি ইউনিয়নে ২জন করে ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমেই চাল বিতরণ করা হচ্ছে। তবে এসব বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তার ফোন রিসিভ করেননি। রুমায় কার্ডপ্রতি ২শ’ টাকা নেয়ার অভিযোগ নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান থেকে জানান, রুমার পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের বিরুদ্ধে হতদরিদ্রদের কার্ড বিতরণকালে জনপ্রতি ২শ’ টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ডিলারও জড়িত বলে জানা গেছে। ব্যাপক অনিয়ম ধামাচাপা দিতে ইউপির সাধারণ সদস্য ও মহিলা সদস্যদের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের ঘোষিত হতদরিদ্র পরিবারের জন্য কেজিপ্রতি ১০ টাকায় চাল বিতরণ করতে রুমা উপজেলায় চারটি ইউনিয়নের দুই হাজার ১৬১ হতদরিদ্র পরিবার তালিকাভুক্তি করা হয়। তার মধ্যে পাইন্দু ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ৪৭৩ জন। ৩নং ওয়ার্ডের চাইরাগ্রুপাড়া কারবারি (পাড়াপ্রধান) উচ্চ মারমাসহ আরও অনেকে অভিযোগ করে জানান, তাদের পাড়ার ৯ কার্ডের বিপরীতে জনপ্রতি ২শ’ টাকা করে ইউপি সদস্য মংসিংথোয়াই মারমাকে দিতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যারা টাকা দিতে পারেনি, তারা গ্রাহক কার্ড পায়নি। আরও জানা গেছে, টাকা দেয়ার পরও ইউপি সদস্য গ্রাহক কার্ড দেরিতে বিতরণ করায় গত সেপ্টেম্বর মাসে অনেকে ১০ টাকায় চাল কেনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এখনও অনেক গ্রাহকের কার্ড এই মেম্বারের হাতে রয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক রতন কান্তি দাশ বলেন, হতদরিদ্রদের চাল বিতরণে অনিয়মে যারা জড়িত, সে যত প্রভাবশালী হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া উচিত হবে না। এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মংসিংথোয়াই মারমা বলেন, কার্ড গ্রাহকের কাছে কোন টাকা নিজ হাতে নেইনি। তবে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ছোমেচিং মারমার কাছ থেকে গ্রাহক কার্ড বাবদ দুই হাজার টাকা নিয়েছেন বলে তিনি স্বীকার করেন। ইউপি সদস্য মংসিংথোয়াই মারমাকে টাকা দেয়া প্রসঙ্গে মহিলা সদস্য ছোমেচিং মারমা পাল্টা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, আমি কোন গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেইনি। মেম্বার নিজে টাকা নিয়ে আমাকে ফাঁসাচ্ছে। এ ব্যাপারে পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ২শ’ টাকা নেয়ার কথা শোনার পর সব ইউপি সদস্যকে ফেরত দিতে বলা হয়েছে। এদিকে, রেমাক্রী প্রাংসা ও গ্যালেঙ্গ্যা ইউনিয়নেরও ডিলার ও স্থানীয় ইউপি সদস্যদের যোগসাজশে নামে-বেনামে কার্ড বিতরণ ও চাল দেয়া-নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউপি মেম্বার গ্রেফতার নিজস্ব সংবাদদাতা, জয়পুরহাট থেকে জানান, ধনাঢ্য জামায়াত নেতার স্ত্রীর নামে ১০ টাকার চালের কার্ড করে দেয়ার প্রত্যক্ষ সহযোগিতাকারী আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি মেম্বার মোঃ খালেককে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের নির্দেশে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দৈনিক জনকণ্ঠে ‘ধনাঢ্য জামায়াত নেতার স্ত্রীর নামে ১০ টাকা চালের কার্ড’ র্শীর্ষক খবর প্রকাশিত হলে খাদ্যমন্ত্রী পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর উদ্দিন আল ফারুককে টেলিফোনে ইউপি মেম্বার আব্দুল খালেককে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাঁচবিবি থানার ওসিকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা বললে বৃহস্পতিবার বিকেলে আব্দুল খালেককে পাঁচবিবি থানার ওসি আশরাফুল ইসলামকে গ্রেফতার করেন।
×