ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় ওয়ানডেতে ১৪১ রানে জিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ টাইগারদের

এক শ’ ওয়ানডে জয়ে সিরিজ উদযাপন

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২ অক্টোবর ২০১৬

এক শ’ ওয়ানডে জয়ে সিরিজ উদযাপন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অবশেষে আসল শততম জয়। সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে যেন আসল চেহারা দেখা গেল আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের। সেই ম্যাচে খুব সহজেই সফরকারী আফগানিস্তানকে ১৪১ রানের বড় ব্যবধানে বিধ্বস্ত করল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। সেই সঙ্গে টানা ষষ্ঠ সিরিজ বিজয় করল বাংলাদেশ দল। এর আগে টানা চার সিরিজ জয় ছিল বাংলাদেশের। সেটাকে পেরিয়ে গেছে আগেই, এখন রেকর্ডটাকে আরও সমৃদ্ধ করল টাইগাররা। অঘটন! হ্যাঁ, দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের হারটা অঘটনই ছিল- কারণ কাগজে-কলমে, র‌্যাঙ্কিংয়ে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোর ফর্ম বিবেচনায় কোনভাবেই বাংলাদেশের ধারেকাছে নেই আফগানরা। কিন্তু দীর্ঘ ৬ মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং সাড়ে দশ মাস ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে বিরতিটাই ছন্দপতনের কারণ ছিল সেটার প্রমাণ দেখা গেল এ সিরিজে। প্রথম দুই ম্যাচে দুর্দান্ত খেলে এক ম্যাচ জিতে আকাশে উড়ছিল আফগানরা, স্বপ্নটা অনেক বড় হয়েছিল তাদের এবং চেয়েছিল সিরিজ জিতে বিজয় উদযাপন করতে। কিন্তু স্বাভাবিক যেটা ঘটনার কথা ছিল সেটার মঞ্চায়ন হলো তৃতীয় ওয়ানডেতে। প্রথম ব্যাট করে তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের সপ্তম শতকে ৮ উইকেটে ২৭৯ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। জবাবে দীর্ঘ ৮ বছর পর ফেরা মোশাররফ হোসেন রুবেলের ঘূর্ণিবল ও তাসকিন আহমেদের গতির তোপে ৩৩.৫ ওভারে মাত্র ১৩৮ রানেই গুটিয়ে যায় আফগানরা। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে ১০০তম ম্যাচ জিতে ২-১ ব্যবধানে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। টস জিতে আগের দুই ম্যাচের মতোই এবারও ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। আফগানদের বিরুদ্ধে কোণঠাসা হয়ে পড়া বাংলাদেশ এ ম্যাচে হারলে সিরিজ হার ও রেটিং পয়েন্ট ৯১তে নেমে গিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে সাত থেকে আটে নেমে যাওয়ার ভয় ছিল। জিতলে আগের ৯৫ রেটিং নিয়েই অবস্থান ঠিক রাখার সুযোগ। শুরুতেই আবার চাপ, এ ম্যাচেও ব্যর্থ হলেন ওপেনার সৌম্য সরকার- উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরলেন ১১ রান করে। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভার তখন, বাংলাদেশের রান মাত্র ২৩! তবে বিপদটাকে বাড়তে দেননি তামিম ও তিন নম্বরে নামা সাব্বির রহমান। যদিও মোহাম্মদ নবীর করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই আসগর স্ট্যানিকজাইকে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন তামিম ব্যক্তিগত ১ রানে; সে যাত্রা বেঁচে যান। এরপর আর পেছনে তাকাননি। ওয়ানডেতে প্রথমবার তিন নম্বরে নেমে সাব্বিরও দারুণ খেলেছেন। দ্বিতীয় উইকেটে ১৪০ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন তারা। উভয়ে অর্ধশতক পান। নিয়মিত ছয়ে নামা সাব্বির ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি পান টানা চার ওয়ানডেতে ব্যর্থতার পর। ৭৯ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৫ রানের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলে বিদায় নেন তিনি। ফিফটির পরও দারুণ খেলে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে আরও ৪৯ রান যোগ করে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের ভিত দেন তামিম। তিনি ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দেশের পক্ষে এককভাবে ওয়ানডেতে সর্বাধিক সেঞ্চুরির মালিক হয়ে যান। শতকের আগ পর্যন্ত ধীরস্থির থাকলেও পরে তা-ব শুরু করেছিলেন তামিম। কিন্তু ১১৮ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১১৮ রান করে নবির বলেই সাজঘরে ফেরেন তিনি। ৩৮.৪ ওভারেই ততোক্ষণে স্কোরবোর্ডে ২১২ রান তুলে ফেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরও খুব বেশিদূর যেতে পারেনি তারা। পরের দিকে ব্যর্থ হয়েছেন সাকিব (১৭), মুশফিকুর রহীম (১২), মোসাদ্দেক হোসেন (৪), মোশাররফ হোসেন (৪) ও মাশরাফি (২)। তবে মাহমুদুল্লাহ ২২ বলে ৪ চারে ৩২ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস খেললে ৮ উইকেটে ২৭৯ রানের বড় সংগ্রহ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। রশিদ খান, নবী ও মিরওয়াইস দুটি করে উইকেট নেন। জবাব দিতে নামার পর এই প্রথম যেন সেরা একটি বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে অসহায় হয়ে স্বাভাবিক চেহারায় রূপ নিল আফগান ব্যাটিং। মাশরাফি প্রথম ওভার মেডেন দেয়ার পর ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই বোল্ড করে দেন মোহাম্মদ শাহজাদকে (০)। নওরোজ মঙ্গল ও রহমত শাহ ৪৭ রানের জুটি গড়ে দলকে এরপরও ভালভাবেই এগিয়ে নিচ্ছিলেন। তবে মোশাররফ এসে নওরোজকে (৩৮ বলে ৩৩) শিকার করে ব্রেক থ্রু দেন। এরপর তাসকিন আর মোশাররফের জোড়া আঘাতে একের পর এক উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে আফগানিস্তান। ৮৯ রানেই ৭ উইকেট হারায় তারা। ষোল কোটি মানুষের দেশ কতটা ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ সেটা বোঝা যায় এক ভক্ত মাঠে ঢুকে মাশরাফিকে জড়িয়ে ধরার মাধ্যমে। তবে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা জন্ম নেয়ার আগেই দ্রুতই নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে মাঠের বাইরে নিয়ে গেছেন। শেষদিকে নাজিবুল্লাহ জাদরান ও রশিদ ৪৩ রানের জুটি গড়ে পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা কমিয়েছেন। নজিবুল্লাহ ৪ ছক্কায় ১৯ বলে ২৬ রান করার পর মোসাদ্দেকের শিকার হন। শেষ পর্যন্ত ৩৩.৫ ওভারে ১৩৮ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। ২৪ রানে তিন উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং দেখান মোশাররফ। ১৪১ রানে জিতে যায় বাংলাদেশ।
×