ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘সৌদিদের বিরুদ্ধে মামলার অনুমতি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে’

ওবামার ভেটো কংগ্রেসে খারিজ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ওবামার ভেটো কংগ্রেসে খারিজ

২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলায় দায়ী করে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের মামলার অধিকার দিয়ে তোলা যে বিলে ভেটো দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তা বাতিল করে দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস। ওবামা বলেন, বিল নিয়ে কংগ্রেস তার ভেটো অগ্রাহ্য করে বড় ভুল করেছে। এর মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবার সৌদি আরব সরকারের যে কোন সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার পেল। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার। ওবামা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যক্তির মামলা করার সুযোগ দিয়ে বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে এ বিল। ওবামার ভেটো নাকচ করতে বুধবার কংগ্রেসে ভোটাভুটি হয় এবং ‘জাস্টিস এ্যাগেইনস্ট স্পন্সরস অব টেররিজম এ্যাক্ট (জেএএসটিএ)’ নামের ওই বিলে ওবামার অবস্থানের বিপক্ষে স্বয়ং তার দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও বিরোধী রিপাবলিকান পার্টির সদস্যরা একাট্টা হয়ে ভোট দেন। মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে বিলের পক্ষে ৯৭ জন সদস্য ভোট দিয়েছেন আর বিপক্ষে একমাত্র ভোট দিয়েছেন সিনেটের সংখ্যালঘু বিষয়ক নেতা হ্যারি রিড। সিনেটের ভোটের পরপরই প্রতিনিধি পরিষদেও ভোট হয়। সেখানে বিলের পক্ষে ৩৪৮ জন, বিপক্ষে মাত্র ৭৭ জন সদস্য ভোট দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ওবামার শাসনামলে এই প্রথমবার তার ভেটো কংগ্রেসে বাতিল হলো। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন কংগ্রেস নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মধ্য দিয়ে ওই বিল পাস করেছিল। তবে গত সপ্তাহে বিলে ভেটো দিয়ে ওবামা বলেছিলেন, এ বিল আইনে পরিণত হলে তাতে মার্কিন নিরাপত্তা ও মিত্রদের স্বার্থ ক্ষুণœ হবে। সিআইএ’র পরিচালক জন ব্রেনান বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তার ওপর এটি মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এ বিলে ক্ষতির সম্ভাব্য পরিমাণ ব্যাপক হতে পারে। বিলটির সহ-উদ্যোক্তা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নিউইয়র্কের সিনেটর চাক সুমার বলেছেন, হোয়াইট হাউস ও নির্বাহী বিভাগ কূটনৈতিক ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাবছে। আর আমরা ভাবছি হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার ও ন্যায়বিচার নিয়ে। ১৫ বছর আগে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে (টুইন টাওয়ার) আল কায়েদা সন্ত্রাসীদের বিমান হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত ও অন্ততপক্ষে ছয় হাজার মানুষ আহত হন। ওই হামলায় জড়িত ১৯ জন বিমান ছিনতাইকারীর মধ্যে ১৫ জনই ছিল সৌদি নাগরিক। কিন্তু এর সঙ্গে সৌদি সরকারের কোন সম্পর্ক থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ থাকার কথা সৌদি সরকার অস্বীকার করে। এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৯/১১-এর ছিনতাইকারীদের কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় সৌদি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারে এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল এবং তাদের কাছ থেকে সমর্থন বা সাহায্য নিয়েছিল। ভোটাভুটির আগে ভেটো দেয়ার পক্ষে যুক্তিতে ওবামা বলেছিলেন, এ বিল আইনে পরিণত হলে তা যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এমনকি আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন অনেক কর্মকর্তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারে। ওবামা বুধবার সিএনএনকে বলেন, এটি অবশ্যই একটি বিপজ্জনক নজির। মাঝে মাঝে কেন কঠিন কিছু করতে হয়, এটি তার একটি উদাহরণও। আমার বিশ্বাস, কংগ্রেসও এ কঠিন সিদ্ধান্তটিই গ্রহণ করবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ৯/১১ হামলায় হতাহতদের পরিবারের মামলা করা নিয়ে দেয়া ভেটো অবশ্যই কঠিন সিদ্ধান্ত; কিন্তু এটিই সঠিক কাজ। দৃশ্যপটের অন্তরালে থেকে সৌদি আরব বিলটি বাদ করানোর পক্ষে জোর লবিং করে এসেছে। গত মাসে মার্কিন সরকারকে সৌদি বাদশাহর পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, বিলটি পাস হলে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রে ৭৫ হাজার কোটি ডলারের বন্ড ও অন্যান্য বিনিয়োগ তুলে নেবে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড পাবলিক এ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র ফেলো স্টিফেন কিনজার বলেন, আট দশকের দীর্ঘ মার্কিন-সৌদি সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। অন্য বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ার করে বলেছেন, এ বিলের প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরব মার্কিন অর্থনীতি থেকে শত শত কোটি ডলারের বিনিয়োগ উঠিয়ে নিতে পারে এবং সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, বিনিয়োগ ও গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সামরিক ঘাঁটিতে মার্কিনীদের প্রবেশ সুবিধা দান প্রত্যাহার করতে উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের (জিসিসি) ঘনিষ্ঠ মিত্রদের রাজি করানোর চেষ্টা করতে পারে।
×