ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজের প্রথম ওয়ানডে আজ

জয় দিয়ে শুরু চায় টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জয় দিয়ে শুরু চায় টাইগাররা

মিথুন আশরাফ ॥ কথায় আছে, ‘এক ঢিলে দুই পাখি মারা’। তবে আজ শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে বাংলাদেশের সামনে ‘এক ঢিলে অনেক পাখি’ মারার সুযোগ আছে। সিরিজের ফল কী হবে? এ প্রশ্ন উঠতেই, ওয়ানডেতে বাংলাদেশের শক্তি বিবেচনায় সবার মনের ভেতরই তা জানা আছে। আর তা হচ্ছে সিরিজে জিতবে বাংলাদেশ। যেভাবে বৃষ্টি ঝড়ে যাচ্ছে, তাতে বাধা পড়তে পারে। যদি বাধা না পড়ে তাহলে এমনকি সিরিজ ৩-০ ব্যবধানেও জিততে পারে বাংলাদেশ। সেই সক্ষমতা আছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল তাই তো বলেছেন, ‘আমরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে যে কোন দলকে হারানো সম্ভব।’ যে কোন দলকে নয়, আপাতত বাংলাদেশের সামনে আফগানিস্তানকে হারানোর চ্যালেঞ্জই আছে। যে চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশকে জিততেই হবে। তা হলেই ‘এক ঢিলে অনেক পাখি’ মারার স্বাদ মিটতে পারে। প্রথমত জিততে হবে, ওয়ানডেতে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য। যদিও গত বছর নবেম্বরের পর, ১০ মাস পর আবার ওয়ানডেতে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। আর এ বছর মার্চের পর, ৬ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নামছে। তবুও শক্তির দিক দিয়ে বাংলাদেশই এগিয়ে থাকছে। দ্বিতীয়ত জিততে হবে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারলে লজ্জা মিলতে পারে। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে জিতলেও ২০১৪ সালের এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের কাছে হেরে লজ্জা মিলেছিল। এখন বাংলাদেশ যে শক্তির দল, তাতে আফগানিস্তানের কাছে হেরে যাবে, তা যেন কল্পনাই করা যায় না। ভক্ত-সমর্থকদের সেই বিশ্বাস অটুট রাখতে হবে। তৃতীয়ত জিততে হবে, আফগানিস্তানকে হারিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের জন্য আত্মবিশ্বাস কুড়িয়ে নিতে হবে। হারলেই আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি পড়বে। এরপর জিতবে হবে, আরেকটি বিশেষ কারণেও। বাংলাদেশ যে এখন ৯৮ রেটিং নিয়ে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের সপ্তম স্থানে আছে; সেটিও বজায় রাখতে হবে। আগামী বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ র‌্যাঙ্কিং ধরে রাখতে পারলেই ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগ মিলবে। আগামী বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে সাতটি দল র‌্যাঙ্কিংয়ে ১ থেকে ৭ নম্বরে থাকবে, তারাই ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে। বাকি দলগুলোকে বাছাইপর্ব খেলতে হবে। বাংলাদেশের সামনে তো ষষ্ঠ স্থানে যাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। যদি আফগানিস্তানকে ৩-০’তে সিরিজে হারাতে পারে বাংলাদেশ, তাহলে রেটিং বাড়বে। শ্রীলঙ্কা যে ১০১ রেটিং নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে আছে, সমান রেটিং হয়ে যাবে বাংলাদেশের। এরপর ইংল্যান্ডকে যদি কোনভাবে ২-১’এও সিরিজে হারাতে পারে বাংলাদেশ, লঙ্কানদের পেছনে ফেলে ষষ্ঠ স্থানটিতে উঠে যাবে বাংলাদেশ। আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা জোরালো হবে। এরসঙ্গে এ সিরিজেই প্রথম দুই ওয়ানডেতে টানা জিতলে বাংলাদেশের ১০০তম ওয়ানডে জেতাও হয়ে যাবে। আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে এত অর্জন কুড়িয়ে নিতে পারবে বাংলাদেশ? খুবই সম্ভব। ক্রিকেটে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যে শক্তির দিক দিয়ে এখনও বিস্তর ফারাক। বাংলাদেশ ওয়ানডেতে আকাশচুম্বী সাফল্যে ভাসছে। বিশেষ করে দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে ২০১৫ সাল থেকে তো অপ্রতিরোধ্য দল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। আর আফগানিস্তান, এবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলছে। বাংলাদেশকে সিরিজে হারিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের শক্তির জানান দেয়ার স্বপ্নে বিভোর আফগানিস্তান। এ দুই দলের মধ্যকারই আজ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর আড়াইটায় প্রথম ওয়ানডে দিয়ে সিরিজ শুরু হয়ে যাবে। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ও ১ অক্টোবর তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেটি অনুষ্ঠিত হবে। সিরিজে বৃষ্টির বাধা পড়তে পারে। তাই প্রতিটি ম্যাচেই আছে ‘রিজার্ভ ডে’। প্রতিটি ম্যাচেই ৬০ মিনিট করে বেশি হাতে রাখা হবে। যদি বৃষ্টি হয়, সাড়ে তিনটায় খেলা শুরু হয়; তাহলে ৫০ ওভার করেই খেলা হবে। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে যত সময় যাবে তত ওভার কাটা হবে। কমপক্ষে ২০ ওভার খেলা হলে বৃষ্টি আইনে চলে যাবে ম্যাচ। আর তা না হলে যেখানে খেলা শেষ হয়েছে সেখান থেকেই পরের দিন খেলা শুরু হবে। তাও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে পরিত্যক্ত হবে ম্যাচ। যেন পরিত্যক্ত না হয়, জেতার সম্ভাবনা ভেস্তে না যায়, বাংলাদেশের জয় হাতছাড়া না হয়; তা ভেবেই ‘রিজার্ভ ডে’ রাখা হয়েছে। বিসিবি একাদশের বিপক্ষে ফতুল্লায় যে প্রস্তুতি ম্যাচটি হলো, তাতে অবশ্য ৬৬ রানে জিতে আফগানরা খুব আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। আফগান অলরাউন্ডার মিরওয়াইস আশরাফ তো যেন প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে হুঙ্কারই দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমাদের লেগস্পিন, বাঁহাতি স্পিন এবং ভাল পেস বোলার আছে। তাই সামনের ম্যাচ খুব কঠিন হবে।’ এ ম্যাচে জেতার সঙ্গে আফগানিস্তান যে ইদানীং ক্রিকেটে দুর্দান্ত খেলছে সেটিও আত্মবিশ্বাসে বাড়তি জ্বালানি হিসেবে কাজ করছে। গতবছর অক্টোবর থেকে জিম্বাবুইয়েকে দুইবার ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজে হারিয়েছে। টি২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে অপরাজিত দল ছিল। টি২০ বিশ্বকাপের ‘সুপার টেনে’ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে। এরপর স্কটল্যান্ডকে সিরিজে হারানোর পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ড্র করেছে। উড়ন্ত নৈপুণ্যই দেখাচ্ছে আফগানরা। তবে আফগানদের বিপক্ষে শুক্রবার হওয়া প্রস্তুতি ম্যাচে দুই দলের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করা বিসিবি একাদশের মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত যে বলেছেন, ‘যে অবস্থা দেখলাম, তাতে একটু বুঝে খেললেই ভাল ব্যাটিং করা সম্ভব।’ এতেই বোঝা যায়, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর অপেক্ষায় থাকা সৈকতই বুঝে গেছেন কী করতে হবে। তা তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান রুম্মনদের সঙ্গে আলোচনা করবেন সৈকত। আর তাতেই কাজ হয়ে যাবে। মিরওয়াইস যতই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবীর অলরাউন্ডার নৈপুণ্য, লেগ স্পিনার রশিদ খানের স্পিন ঘূর্ণি, বামহাতি পেসার ফরিদ আহমেদ ও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর অপেক্ষায় থাকা ডানহাতি পেসার করিম জানাতের গতিতে বিশ্বাসী হয়ে উঠুন। সঙ্গে যতই বামহাতি ব্যাটসম্যান হাসমতুল্লাহ শহীদি, মোহাম্মদ শাহজাদ ও অধিনায়ক আসগর স্ট্যানিকজাইয়ের ব্যাটিং নিয়ে উৎফুল্ল হোন। বাংলাদেশকে নিয়ে কিন্তু তবুও ভয় আছে আফগানদের। মিরওয়াইসের কথাতেই তা স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ আইসিসির একটি পূর্ণ সদস্য দেশ। খুব মানসম্মত ও সম্মানজনক দল। তারা সব ডিপার্টমেন্টেই খুব শক্তিশালী।’ তার এ মন্তব্যেই বোঝা যায়, আফগানিস্তানের ভেতরে বাংলাদেশকে নিয়ে ভীষণ ভয়ও কাজ করছে। এ ভয়ই আফগানিস্তানের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে এ জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেটারদেরও সিরিয়াস খেলাটাই খেলতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ আবারও আরেকটি সিরিজ জিতে দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো টানা পাঁচটি সিরিজ জেতার রেকর্ডও গড়ে ফেলতে পারে। সেই রেকর্ড গড়ার সিরিজ শুরু হচ্ছে আজই।
×