স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে অংশ নিতে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে আফগানিস্তান ক্রিকেট দল। বুধবার বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখে বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি ভবনের মাঠে অনুশীলন করে তারা। রবিবার বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে খেলতে নামার আগে আজ বিসিবি একাদশের বিপক্ষে একদিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে আফগানরা। ম্যাচটি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ খেলবে আফগানিস্তান। এর আগে কখনই বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ খেলেনি আফগানরা। তবে দুই দলের মধ্যকার দুটি ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। একবার বাংলাদেশ জেতে। আরেকবার জেতে আফগানিস্তান। বাংলাদেশে ২০১৪ সালে হওয়া এশিয়া কাপের ম্যাচটিতে ৩২ রানে জেতে আফগানিস্তান। এরপর গতবছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে এর প্রতিশোধ নেয় বাংলাদেশ। ১০৫ রানের বড় ব্যবধানে আফগানিস্তানকে হারায় মাশরাফিরা। এবার যখন দুই দল রবিবার প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামবে, তখন এগিয়ে যাওয়ার ম্যাচ হিসেবেই ধরা দেবে।
আফগানিস্তান চাইবে বাংলাদেশকে হারিয়ে শুধু এগিয়ে যেতেই নয়, আরও কিছু অর্জন করতে। সেই অর্জনের মধ্যে নিজেদের প্রমাণ করাই মূল লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে এখন টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তুত যে আফগানিস্তান, সেটি বুঝিয়ে দেয়াও আছে। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সিইও শফিক স্ট্যানিকজাই যেমন বলেই দিয়েছেন, টেস্ট খেলতে প্রস্তুত তারা। এ জন্য বাংলাদেশকে হারানোই আফগানিস্তানের লক্ষ্য। স্ট্যানিকজাই বলেছেন, ‘আমরা টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তুত। সেটি প্রমাণও করব।’ তা প্রমাণ করতে হলে বাংলাদেশকেও সিরিজে হারাতে হবে। তা কি পারবে আফগানিস্তান?
এ মুহূর্তে নির্ধারিত ওভারে আফগানিস্তান শক্তিশালী দলই হয়ে উঠছে। ভারতে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করেছে তারা। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে। এরপর বাংলাদেশে এসেছে। সর্বশেষ কয়েকটি সিরিজে চমক জাগিয়েছে আফগানরা। হারেনি। টেস্ট খেলুড়ে দেশ জিম্বাবুইয়েকে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়েছে। এরপর স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১-০ ব্যবধানে জিতেছে। আয়ারল্যান্ড সফরে গিয়ে ২-২ সমতায় সিরিজ শেষ করেছে। দারুণ উজ্জীবিত দলই এখন আফগানরা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আগামী ২৫, ২৮ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবর যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে খেলবে আফগানরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে দিবা-রাত্রির এই ম্যাচগুলো খেলতে নামার আগে আফগানিস্তান ক্রিকেট দল অনুপ্রাণিত হওয়ার মতো ইতিহাসই পাচ্ছে। বাংলাদেশে এর আগে একবার ওয়ানডে খেলে যে একবারই জিতেছে। আবার খেলা হচ্ছে বাংলাদেশেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে জেতার প্রেরণা তাই ২০১৪ সালের এশিয়া কাপই হয়ে উঠতে পারে। যে দলগুলোকে হারিয়ে বাংলাদেশে খেলতে এসেছে আফগানিস্তান, সেই দলগুলোর চেয়েও শক্তিশালী বাংলাদেশ। এ দলটিকে হারাতে পারলে তো বিশ্ব ক্রিকেটে আলোড়নই জাগিয়ে দেবে আফগানরা। তা কি সম্ভব? বাংলাদেশ যে এখন অনেক শক্তিশালী। দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ে, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজ হারিয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে দেশের মাটিতে কোন সিরিজ হারেনি। ১২টি ওয়ানডে খেলে ১০টিতেই জিতেছে। এবার যদি আফগানিস্তানকেও হারিয়ে দেয়, দেশের মাটিতে টানা পঞ্চম ওয়ানডে সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার যে দল ঘোষণা করা হয়েছে, সেটিও তো অনেক শক্তিশালী।
যেখানে আফগানিস্তানের ১৭ সদস্যের দলে তিনটি নতুন মুখ। এ সিরিজের জন্য আফগান দলে প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছেন ইহসানুল্লাহ, করিম জান্নাত ও নবীন-উল-হক। সেখানে বাংলাদেশ দলে আছেন একজন নতুন মুখ-মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। বাকি সবাই বিশ্ব ক্রিকেট মাতিয়ে রাখা ক্রিকেটার।
তবে আজ যে প্রস্তুতি ম্যাচ হবে, সেখানেই বোঝা যাবে সিরিজে কী নৈপুণ্য দেখাতে পারে আফগানিস্তান। বিসিবি একাদশে বাংলাদেশের চূড়ান্ত দলের ইমরুল কায়েস, সৈকত, সাব্বির রহমান রুম্মন আছেন। বাকিদের মধ্যে এনামুল হক বিজয়, লিটন কুমার দাস, শুভাগত হোম চৌধুরী, আবু হায়দার রনি, সানজামুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম রাব্বি, মোঃ আল আমিন জুনিয়র, শুভাশিষ রায় চৌধুরী, মেহেদী হাসান মিরাজ ও আলাউদ্দিন বাবু আছেন। প্রত্যেকে জাতীয় দলে খেলার মতো ক্রিকেটার। বিসিবি একাদশের এ ক্রিকেটারদের বিপক্ষেই খেলতে হবে আফগানিস্তানকে। আফগানিস্তান দলে অধিনায়ক আসগর স্ট্যানিকজাই, মোহাম্মদ শাহজাদ, রহমত শাহ, মিরওয়াইস আশরাফ, দৌলত জাদরান, মোহাম্মদ নবী, সামিউল্লাহ শিনওয়ারি, রশিদ খান, হাশমতুল্লাহ শহীদি, ফরিদ আহমেদ, আমির হামজা, নাজিবুল্লাহ জাদরান, নওরোজ মঙ্গল, নবীন-উল-হক, করিম জান্নাত, শাবির নূরী ও ইহসানুল্লাহ আছেন। দেখা যাক এখন প্রস্তুতি ম্যাচে কী করতে পারে আফগানিস্তান।