ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান ॥ আগে দিল্লীকে থামান-ইসলামাবাদের জবাব

পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচী গুটান

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচী গুটান

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে তাদের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচী গুটিয়ে ফেলতে বলেছে। আর পাকিস্তান বলেছে, বিশ্বের প্রথমে ভারতের পরমাণু কর্মসূচীর অবসান ঘটানো উচিত। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচী চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অন্যান্য সাহায্যদাতাদের নজরদারি ও চাপের মুখে পড়েছে। আর উরিতে চালানো সন্ত্রাসী হামলার জন্য ভারতের প্রতিশোধের আশঙ্কা করে পাকিস্তানের বিচলিত নেতারা তাদের পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের সম্ভাবনার কথা বলছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইসলামাবাদকে এর পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচী গুটিয়ে ফেলতে বলেছে- এমন কথা পাকিস্তানী ও মার্কিন উভয় শ্রেণীর কর্মকর্তাই বলছেন। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের উত্তেজনা বাড়তে থাকা এবং সার্কের অন্যান্য দেশ ও এর বাইরেও কোন কোন দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতি ঘটার মধ্যে মার্কিন চাপের খবরটি প্রকাশিত হলো। মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্কতার সঙ্গে বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচীতে সংযম দেখানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। কেরি পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচী ‘সীমিত’ করতে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন- এ কথা পাকিস্তানী কর্মকর্তারা স্বীকার করেন। তবে তারা এ কথাও স্পষ্টভাবে বলেন যে, পাকিস্তানের কাছ থেকে যেসব প্রস্তাবের বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করা হয়, সেগুলো ভারতেরও বাস্তবায়ন করা উচিত। জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মালিহা লোদি এক ব্রিফিংয়ে বলেন, তার দেশের পরমাণু কর্মসূচী সীমিত করা যাবে না। পাকিস্তানী মিডিয়ায় এ কথা প্রচার করা হয়। এ ব্রিফিং থেকে ভারতীয় সাংবাদিকদের বাইরে রাখা হয়। তিনি বলেন, বিশ্বের উচিত ভারতের পরমাণু কর্মসূচী প্রথমে বন্ধ করা। এদিকে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ও শীর্ষ জেনারেলরা নিজেদের ওপর আস্থা দেখাতে তাদের পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের সম্ভাবনার কথা বলেছেন। উরি সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারতের প্রতিশোধ নেয়ার সম্ভাবনা দূর করাই এর উদ্দেশ্য। এ হামলা পাকিস্তান থেকে শুরু করা হয় বলে নয়াদিল্লী জানায়। পৃথক প্রসঙ্গে বলতে গেলে সাপ্লায়ার্স গ্রুপের (এনএসসি) সদস্য হতে এর পরমাণু কর্মসূচীকে বল্গাহীনভাবে সম্প্রসারিত করার হুমকিকে কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচী ও পরীক্ষা এবং পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি হিসেবে পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান দুর্নাম ভারতের পরমাণু কর্মসূচীর মতো বৈধতা পেতে ইসলামাবাদের চেষ্টার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মঙ্গলবার নওয়াজ শরীফ এনএসসির সদস্য হতে জাপানের সমর্থন কামনা করেন, যদিও পাকিস্তান উত্তর কোরিয়ার কাছে পরমাণু প্রযুক্তি রফতানি করে জাপানের অস্তিত্বের প্রতি বিপদের সৃষ্টি করেছে। শরীফের আহ্বান অগ্রাহ্য করা হয় বলে জানা গেছে। তবে পাকিস্তান মিডিয়ায় বলা হয়, তিনি জাপানকে বলেন যে, পাকিস্তান উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক পরমাণু পরীক্ষার তীব্র নিন্দা এবং উত্তর কোরিয়াকে এর আন্তর্জাতিক চুক্তিগত বাধ্যবাধকতা পালনের আহ্বান জানায়। পাকিস্তান যে সন্ত্রাসবাদে মদদ দিয়ে এবং পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার ঘটিয়েও এখনও অবাধ পার পেয়ে গেছে, তা খুবই আশ্চর্যের কথা। কিন্তু সেসব দিনের শীঘ্রই অবসান হতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার দুই মার্কিন কংগ্রেস সদস্য পাকিস্তানকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করতে এক বিল উত্থাপন করেন। প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা এবং রাজস্বের দুটি প্রধান উৎস রেমিট্যান্স ও রফতানির দ্রুত হ্রাস দেশটিকে বিশেষভাবে দুর্বল অবস্থানে নিয়ে গেছে। এ সময়েই যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাকিস্তানের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে শুরু করেছে। এর জবাবে পাকিস্তানÑ চীন, তুরস্ক, রাশিয়া ও সৌদি আরবের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। এসব দেশ এখন পাকিস্তানের নতুন মিত্র বলে পাকিস্তানের অনেক কল্পনাবিলাসীর ধারণা; কারণ ভারতÑ যুুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর করছে।
×