ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপিএল বই প্রদর্শনী

দেশ-বিদেশের সমৃদ্ধ প্রকাশনা, বিপুল সম্ভার

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

দেশ-বিদেশের সমৃদ্ধ প্রকাশনা, বিপুল সম্ভার

মোরসালিন মিজান ॥ বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের খুবই উন্নত এবং অভিজাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। ছোট করে বললে, ইউপিএল। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে প-িত ব্যক্তিত্ব মহিউদ্দিন আহমেদ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। তাঁর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান এখন বাংলাদেশের গর্ব। যেমন পুরনো তেমনি সমৃদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান। অত্যন্ত সুনির্বাচিত বই। বাংলাদেশের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধ রাজনীতি অর্থনীতি পরিবেশ ও শিল্প সংস্কৃতির নানা দিক নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়ে আসছে এখান থেকে। বাংলায় যেমন, ইংরেজীতেও। পৃথিবীর বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্লভ অনেক গ্রন্থও পাঠকের হাতে আসে ইউপিএল হয়ে। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত প্রদর্শনীতে সেইসব বইয়ের বিপুল সম্ভার। গত মঙ্গলবার প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। বই কেনায় আছে বিশেষ মূল্য ছাড়। সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছেন সচেতন পাঠক। নিজ নিজ চাহিদা অনুযায়ী বই সংগ্রহে ব্যস্ত তারা। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতিবছরই আয়োজন করা হয় প্রদর্শনীর। শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালে। সেই ধারবাহিকতায় এবারের আয়োজন। বৃষ্টির আশঙ্কায় পরিসর বড় করা হয়নি। তবে বইয়ের সংখ্যা অনেক। নিজেদের ও বিদেশী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্রায় আড়াই হাজার বই দিয়ে সাজানো হয়েছে সেমিনার কক্ষ। সুন্দর ডিসপ্লে। অধিকাংশ বইয়ের প্রচ্ছদ দৃশ্যমান। প্রথমেই নজড় কাড়ে ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ধ্রুপদী প্রকাশনাগুলো। আর্থার কে ব্লাডের লেখা ‘দি ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ’ ও লে. জেনারেল জে এফ আর জ্যাকবের লেখা ‘সারেন্ডার এ্যাট ঢাকা’ পাশাপাশি প্রদর্শিত হচ্ছে। আছে মঈদুল হাসানের বিখ্যাত ‘মূলধারা ৭১’। মুনতাসীর মামুন ও মহিউদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ‘পাকিস্তানীদের দৃষ্টিতে একাত্তর’, খাদিম হোসাইন রাজার ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রির পাতা উল্টে দেখছেন পাঠক। তারও আগের ইতিহাসটি মফিদুল হকের ‘দেশভাগ সাম্প্রদায়িকতা এবং সম্প্রীতির সাধনা।’ আরও অনেকগুলো গ্রন্থে ইতিহাসের পথ পরিক্রমা। মুক্তিযুদ্ধের দলিল। প্রদর্শনীতে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করা হচ্ছে বাংলার ধ্রুপদী সাহিত্যকে। পাওয়া যাচ্ছে দুই বাংলার কিংবদন্তি লেখক কবিদের গুরুত্বপূর্ণ রচনা। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’, ‘খোঁয়ারি’, শংকরের ‘এপার বাংলা ওপার বাংলা, ‘জন-অরণ্য’ খুঁজে নিচ্ছেন আজকের পাঠকও। প্রদর্শনীতে আছে ইউপিএল নির্বাচিত বাংলাদেশের প্রবন্ধ, ছোটগল্প, কবিতা। ১৯৯৯ সাল থেকে তিন খ-ে সংকলনটি প্রকাশ করে আসছে ইউপিএল। আছে পরবর্তীতে প্রকাশিত ‘সাহিত্য সংগ্রহ।’ দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা সাময়িকী লিটল ম্যাগাজিন থেকে নির্বাচিত রচনা নিয়ে এই সংগ্রহ। একেবারে নতুন কিছু বইও পাওয়া যাচ্ছে প্রদর্শনীতে। অমর একুশে গ্রন্থমেলার পর প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে আকবর আলী খানের ‘গ্রেশামস ল সিনড্রোম এ্যান্ড বিয়ন্ড’, আবুল মাল আবদুল মুহিতের ‘হিস্টরি অব বাংলাদেশ এ সাবকন্টিনেন্টাল সিভিলাইজেশন’, মাহমুদুল হক সম্পাদিত ‘বাংলাদেশ হিস্টরি পলিটিক্স, ইকোনমি সোসাইটি এ্যান্ড কালচার’, সাঈদ রোজানা রশিদের ‘আনসারটেইন টুমরোজ।’ আলাদা করে বলতে হয় বিদেশী বইগুলোর কথা। বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বহু দুর্লভ বই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। অক্সফোর্ড, পেঙ্গুইন বুকস, জেড বুকস, পার্মানেন্ট ব্ল্যাক, মনোহর, সেইজ পাবলিকেশন্সের বইগুলো দিয়ে সাজানো হয়েছে একটি কর্ণার। এখানে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বই দেখছেন পাঠক। প্রদর্শনী বলা হলেও, বই কেনার বড় সুযোগ এখানে। প্রচার সামান্যই। তবু বিক্রি ভাল। দ্বিতীয় দিনে বই কিনতে এসেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অনিন্দিতা রায়। একাই তিনি ৩০টির মতো বই কেনেন। কথা প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, ইউপিএলের প্রদর্শনীর কথা জেনেই এতদূর থেকে এখানে এসেছি। দেখতে এসেছি কী কী বই পাওয়া যায়। আমার রিসার্চ থিউরি বেজড। এ ক্ষেত্রে সহায়ক অনেকগুলো বই পেয়েও গেছি। তাই কেনা। প্রায় একই রকমের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সারথী ইসলাম বলেন, একাডেমিক অনেক বই এখানে পাওয়া যাচ্ছে। মূল্য ছাড়ও আছে। তাই প্রয়োজনীয় বইগুলো কিনে নিচ্ছি। এমন আয়োজন আরও বেশি বেশি হওয়া উচিত বলে মত দেন তিনি। প্রদর্শনী প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাহরুখ মহিউদ্দিন জনকণ্ঠে বলেন, ইউপিএল বহুকালের পুরনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। এর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। বিশেষ সুনাম আছে। আমরা সুনামের দিকটি বিবেচনায় রেখে খুব সিলেকটিভ বই প্রকাশ করে থাকি। ১৯৭৫ সালে শুরু হওয়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাইরের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বই আছে প্রায় ২ হাজার। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বই নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে প্রদর্শনীর। এখানে আমাদের নিজস্ব প্রকাশনা আছে প্রায় ৫০০। বাইরের বই আছে আড়াই হাজারের মতো। বিপুল ভা-ার থেকে পাঠক তাদের পছন্দের বই খুঁজে নিতে পারছেন। সেইসঙ্গে তাদের সঙ্গে আমাদের একটি সংযোগ স্থাপিত হচ্ছে। ভবিষ্যতেও সংযোগ ও সম্পর্ক আরও ভাল করার লক্ষ্য নিয়ে ইউপিএল কাজ করছে বলে জানান মহিউদ্দিন কন্যা। ইউপিএল বার্ষিক গ্রন্থ প্রদর্শনী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে।
×