ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রাণবহরে বিমান হামলা নিয়ে রুশ-মার্কিন বাগযুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ত্রাণবহরে বিমান হামলা নিয়ে রুশ-মার্কিন বাগযুদ্ধ

সিরিয়ায় মঙ্গলবার থেকে ফের রক্তপাত শুরু হয়েছে, একই সময়ে দেশটিতে সব ধরনের ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে জাতিসংঘ। অপরদিকে সিরিয়ার স্বল্পমেয়াদী অস্ত্রবিরতি শেষ হওয়ার পর আলেপ্পো শহরে ত্রাণবহরে বিমান হামলা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। খবর এএফপির। মানবিক ত্রাণবহরে সোমবারের ভয়াবহ হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। অপরদিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলায় বহু সিরীয় সৈন্য নিহতের ঘটনায় তিনদিন পর কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে মস্কো। সিরিয়ায় পাঁচ বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্ধ অবসানে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যস্ততায় দেশটিতে শুরু হওয়া সাতদিনব্যাপী অস্ত্রবিরতি শেষ হওয়ার ঘোষণা দেয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আলেপ্পোর ত্রাণবহরে হামলা চালানো হয় এবং দুই দেশের মধ্যে পুনরায় আলোচনা শুরুর প্রচেষ্টা চলছে। ২৩-জাতি বিশিষ্ট ইন্টারন্যাশনাল সিরিয়া সাপোর্ট গ্রুপের (আইএসএসজি) সঙ্গে মঙ্গলবার নিউইয়র্কে এক সংক্ষিপ্ত বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জোর দিয়ে বলেছেন, অস্ত্রবিরতি পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা নষ্ট হয়ে যায়নি। কেরি ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের আহ্বানে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর ওই ২৩ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছেন, চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের পাশাপাশি তারা পুনরায় মিলিত হওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে সর্বশেষ ওই হামলার পর সিরিয়ার সঙ্কট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া কিভাবে মধ্যস্থতা করবেন তা দেখতে পাওয়া কঠিন। রেডক্রস জানিয়েছে, সোমবার রাতে জরুরি ত্রাণবাহী ৩১টি ট্রাকের বহরে বিমান হামলা চালানো হয়। হামলায় সিরিয়ার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্থানীয় এক সিনিয়র কর্মকর্তাসহ নিহত হন অন্তত ২০ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১৮টি ট্রাক বিধ্বস্ত হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র বেন রোডস বলেছেন, আমাদের কাছে থাকা সকল তথ্য এ ইঙ্গিত দেয় যে এটি ছিল একটি বিমান হামলা। আর এ হামলার জন্য দুটি দেশ জড়িত থাকতে পারে। এ হামলার জন্য হয় সিরীয় সরকার, না হলে রুশ সরকার দায়ী। যা হোক এই স্থানে এই বিমান হামলার জন্য রুশ সরকারকে দায়ী করছি। অন্য এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, সোমবার রাতে আলেপ্পোর যে এলাকায় ত্রাণবহর আটকে ছিল, সেখানে দুই রুশ এসইউ-২৪ জঙ্গীবিমান অভিযান পরিচালনা করেছে। তাই আমাদের সেরা মূল্যায়ন হলো, রাশিয়াই ওই হামলা চালিয়েছে। এর আগে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, যদি সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনী ওই হামলা চালিয়ে থাকে তাহলে সিরীয় সরকারের পৃষ্ঠপোষক ও অস্ত্রবিরতি আলোচনার গ্যারান্টার হিসেবেও মস্কো এই অভিযোগের ভাগিদার হবে। রাশিয়া এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভ ও ক্রোধের সঙ্গে বলেছে, এ হামলার জন্য রাশিয়া ও সিরিয়াকে দায়ী করতে সন্ত্রাসী ও দস্যুদের মদদদাতারা এই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর পাইলটদের ভুল থেকে মনোযোগ সরাতে এই অপ্রমাণিত ও হঠকারী অভিযোগ করা হচ্ছে। ইসলামিক স্টেটের জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লড়াইরত মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী শনিবার সিরীয় সেনা ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়। ওয়াশিংটন বলেছে, ভুল করে এ হামলা চালানো হয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মার্কিন কর্মকর্তাদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই অভিযোগ সমর্থন করার পক্ষে মার্কিন প্রশাসনের কাছে কোন তথ্য নেই। এই পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই। রাশিয়া বলেছে, তারা বিশ্বাস করে কোন বিমান হামলাই চালানো হয়নি এবং ঘটনাস্থলের কোন ঘটনা থেকেই ত্রাণ বহরটির গাড়িগুলোতে আগুন লেগেছিল। এ হামলার পর ছয় বছর ধরে গৃহযুদ্ধের কবলে থাকা সিরিয়ায় সব ধরনের ত্রাণ পাঠানো স্থগিত করেছে জাতিসংঘ।
×