ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানে হামলা প্রশ্নে মোদিকে ভারতীয় শীর্ষ সেনা কমান্ডারদের পরামর্শ

তাড়াহুড়া করে সামরিক অভিযান নয়

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

তাড়াহুড়া করে সামরিক অভিযান নয়

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পাকিস্তান সীমান্তবর্তী উরি সেনা ঘাঁটিতে এক সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ সৈন্য নিহত হওয়ার একদিন পর সোমবার প্রথম পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা পাকিস্তানী ভূখ-ে তাড়াহুড়ো করে সামরিক অভিযান না চালাতে শীর্ষ কমান্ডারদের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। ভারতীয় সরকারী সূত্রগুলো এ খবর জানিয়েছে। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও ডনের। ভারতের শীর্ষ সামরিক কমান্ডাররা বৈঠকে সতর্ক করেছেন যে, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীও নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর তাদের আত্মরক্ষা কৌশল বাড়িয়েছে। তাই দু’টি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে কখনও ‘নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধ’ করা সম্ভব নয়। তা অচিরে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে পরিণত হবে এবং আন্তর্জাতিক মহলও বিষয়টি মেনে নেবে না। এমনকি নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে জঙ্গী শিবির গুঁড়িয়ে দিতে গেলেও তার ফল কী হতে পারে, তা-ও ভেবে দেখা দরকার বলে মত প্রকাশ করেছেন সেনা কমান্ডাররা। এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে আপাতত কূটনৈতিক স্তরেই ইসলামাবাদকে কোণঠাসা করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে নয়াদিল্লী। বৈঠকের অল্প কিছু তথ্যই পাওয়া গেছে। পাকিস্তানে অবিলম্বে হামলা চালাতে সেনা সদস্যদের আহ্বানকে নাকচ করে দিয়েছেন ভারতের সিনিয়র সরকারী কর্মকর্তারা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকর ও অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও সেনাপ্রধান জেনারেল দলবির সিং জিহাদি তৎপরতা ও পাকিস্তানী সামরিক অবকাঠামোর বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে সম্ভাব্য দীর্ঘ-মেয়াদী বিকল্পগুলোর বিষয়ে তাদেরকে অবহিত করেছেন। বৈঠকের বিষয় সোমবার রাতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এদিকে গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান ও চীফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান অরূপ রাহা। কিছু নিরাপত্তা বিশ্লেষক এটিকে একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন যে, এই পরিস্থিতিতে সরকার নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বিমান হামলার কথা বিবেচনা করছে না। এছাড়া কাশ্মীরের শ্রীনগর-মোজাফরাবাদ রুটের নির্ধারিত বাস চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। যা এখনই যুদ্ধে না জড়ানোর আরেকটি ইঙ্গিত। এদিকে ইসলামাবাদ থেকে পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাওয়ালপিন্ডিতে কোর কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ। ওই বৈঠকে তিনি পাকিস্তানের ভেতর ও বাইরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। পরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত যে প্ররোচনামূলক ভাষ্য দিচ্ছে, তা মাথায় রেখে সেনাপ্রধান বলেছেন, আমরা পুরোপুরি তৈরি, এই অঞ্চলের সাম্প্রতিকতম ঘটনাবলীর উপর গভীর নজর রাখছি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সব ধরনের হুমকির জবাব দিতে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী পুরোপুরি প্রস্তুত। অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সোমবার পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার সমস্যাগুলো সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি নিউইয়র্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে বৈঠকে কাশ্মীর সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে ওবামা প্রশাসনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের আর্জি জানান।
×