ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কিমকে ইংরেজী শেখাতে মার্কিনীকে অপহরণ করে উত্তর কোরিয়া

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কিমকে ইংরেজী শেখাতে মার্কিনীকে অপহরণ করে উত্তর কোরিয়া

কিম জং ইলের সরকার কি তার ছেলে-মেয়েদের ইংরেজী শেখানোর জন্য ২০০৪ সালে এক আমেরিকানকে অপহরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন? চীনা কর্মকর্তাদের সহায়তায় উত্তর কোরীয় প্রতিনিধিরা কি মিয়ানমার সংলগ্ন সীমান্তের কাছে পথচারী এক ছাত্রকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন? অপহৃতদের পক্ষে আন্দোলনকারী ও মানবাধিকার প্রবক্তা, অপহৃত ছাত্রের মা-বাবা যদি ঘটনার প্রতি বিশ্বাসী হন তাহলে তার উত্তর হবে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘অন্তত সম্ভাব্য’ এবং আমেরিকান কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তার উত্তর বেরিয়ে আসে ‘না’। কিন্তু সিউলে এ্যাবডাকটিস ফ্যামিলি ইউনিয়নের সভাপতি চোই সং-ইয়ং বলেন, তার কাছে তথ্য রয়েছে যে, ওই সময় আমেরিকান ডেভিড স্নেডেনের অবস্থান পিয়ংইয়ংয়ে ছিল। তার বয়স এখন ৩৬ বছর। তিনি এখন কোরীয় নাম ‘ইউন বং সু’ ব্যবহার করছেন। কিম ইউন হাই নামের এক নারীকে বিয়ে করেছেন তিনি এবং তাদের দু’সন্তান রয়েছেÑ একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। চোই পিয়ংইয়ংয়ে এক তথ্য প্রমাণের উদ্ধৃতি দিয়ে একথা বলেন। চোই বলেন, স্নেডেনকে পিয়ংইয়ংয়ে নেয়া হয়। কারণ, কিমইল রাষ্ট্রের বর্তমান নেতা কিম জং উনসহ তার ছেলেমেয়েদের এক ইংরেজী ভাষী দিয়ে ইংরেজী শেখানোর জন্য ওই নির্দেশ দিয়েছিলেন। নির্দেশে বলা হয়েছিল, ওই ব্যক্তি এমন হবেন যিনি আমেরিকান সংস্কৃতি শিখাতেও সমর্থ হবেন। চোই বেশ কিছুদিন যাবত চেষ্টা করছেন ঐ অপহরণে কি ঘটেছিল তা খুঁজে বের করার জন্য। ব্রিগহামইয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিওয়াইইউ) ছাত্র ২৪ বছর বয়স্ক স্নেডেন দক্ষিণ কোরিয়ায় তিন বছরের এক মর্মোন (ধর্মীয়) মিশন সম্পন্ন করার পর ২০০৪-এর গ্রীষ্মে বেজিংয়ে যখন এক সেমিস্টারে পড়াশোনা করছিলেন তখন এ অপহরণ গল্পকথার সৃষ্টি হয়। স্নেডেন এক পর্যায়ে কোরীয় ভাষাও শেখেন এবং বিওয়াইইউয়ে চীনা ভাষার ক্লাস নেয়ার জন্য পরিকল্পনা করছিলেন। তার বাবা রয় স্নেডেন বলেছেন, তার অধ্যয়ন কাজ তখন সম্পন্ন হয়ে গেছে। স্নেডেন তাই চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র দেখতে যাচ্ছেন। ডেভিড স্নেডেন মিয়ানমার সীমান্ত, সংলগ্ন ইউনান প্রদেশে নৈসর্গিক শোভাম-িত টাইগার লিপিং গিরিসঙ্কটে এক মনোরম পথে পদচারণা করেছেন। তিনি ইয়াকবার নামের এক কোরীয় রেস্তরাঁয় কিছুদিন ছিলেন। তারপরই তিনি নিখোঁজ হন। তার মা-বাবা মনে করেন, তাদের ১১ সন্তানের মধ্যে অন্যতম এ ছেলেকে আটক করেছে চীন কর্তৃপক্ষ। রয় স্নেডেন ও ডেডিডের দু’ভাই অনুসন্ধানে ওই এলাকায় যান। কিন্তু তারা যে তথ্য পান তা হচ্ছে ডেভিড গিরিসঙ্কটে পা পিছলে পড়ে মারা গেছেন। তারপর চার বছর কেটে গেছে। ডেভিডের মা-বাবা দক্ষিণ কোরিয়ায় এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি ফোন কল পান। এই ব্যক্তি জানান, তিনি তাদের ছেলের মতো দেখতে একজন পিয়ংইয়ংয়ে বাস করছেন বলে শুনতে পেয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে কয়েকটি জাপানী সংবাদপত্রে মাঝে মধ্যেই এরকম সম্ভাবনার কথা বলেছে যে, উত্তর কোরিয়া ডেভিডকে অপহরণ করেছে। ১৯৭০ ও ১৯৮০’র দশকে কিম জং ইলের নির্দেশে অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষ অপহরণ করা হয় এবং তাদের উত্তর কোরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। পশ্চিম উপকূলে প্রত্যন্ত পর্যটন কেন্দ্রগুলো থেকে কমপক্ষে ১৭ জন জাপানীকে অপহরণ করে পিয়ংইয়ংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের জাপানী ভাষা ও সংস্কৃতিতে গোয়েন্দা বৃত্তিতে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়। এক দক্ষিণ কোরীয় চিত্র পরিচালক ও এক প্রখ্যাত অভিনেত্রীকে অপহরণ করা হয় কিমের নির্দেশে। এছাড়া থাই, রোমানীয় ও লেবাননী নারীদেরও অপহরণ করা হয়। কিন্তু এমন ঘটনা দেখা যায় না যে, কোন আমেরিকানকে অপহরণ করা হয়েছে। যদিও উদাহরণ রয়েছে। পিয়ংইয়ং সম্প্রতি কয়েকজন আমেরিকানকে আটক করেছে। এক মার্কিন উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেছেন, জাতিসংঘে অবস্থিত উত্তর কোরীয় কূটনীতিকদের কাছে অপহরণ বিষয়টি এখনও উত্থাপন করেনি পররাষ্ট্র দফতর। -ওয়াশিংটন পোস্ট
×