ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষ্ণাদের নিয়ে বাফুফের এক বছরের মহাপরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কৃষ্ণাদের নিয়ে বাফুফের এক বছরের মহাপরিকল্পনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কে ভাবতে পেরেছিল, পুরুষদের চেয়ে একসময় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল? ক’দিন আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এএফসি অ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে ‘সি’ গ্রুপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ দল। ফলে এই আসরের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে তারা। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের অধীনে তাদের এই সাফল্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয় দেশে। নড়ে চড়ে বসে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তারা ঘোষণা দেয়- মূলপর্বে যেন বাংলাদেশের এই কিশোরীরা ভাল ফল করতে পারে সেই ব্যবস্থাই করবেন তারা। সে অনুযায়ী শুক্রবার বাফুফে ভবনে বাফুফের কার্যনির্বাহীর এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, ‘থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য ২০১৭ সালের এএফসি অ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের মূলপর্বে উন্নীত হওয়ার জন্য বাংলাদেশ মহিলা দলের সব ফুটবলার এবং কোচিং স্টাফদের আমি আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দন জানাচ্ছি। থাইল্যান্ডে যেন মেয়েরা ভাল ফল করতে পারে, সেজন্য আমরা তাদের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি, যা কমিটি অনুমোদন করেছে। সেই অনুযায়ী আজ থেকে আমরা কাজ শুরু করতে যাচ্ছি।’ সালাউদ্দিনের ভাষ্যমতেÑ পরিকল্পনাটা হবে এক বছর মেয়াদী। বাফুফে ক্যাম্পে আপাতত ২৩ ফুটবলার থাকলেও এএফসির নিয়ম অনুযায়ী মোট ২৮ জনকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে রেখেছে বাফুফে। ফলে শীঘ্রই আরও ৫ ফুটবলার যোগ দেবেন ক্যাম্পে, তাদের নিয়েই আগামী এক বছর ব্যস্ত থাকবেন গোলাম রব্বানী ছোটন, মাহবুবুর রহমান লিটু এবং মাহমুদা আক্তার অনন্যা। অচিরেই তাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন একজন করে ফিজিক্যাল ট্রেনার, ফিজিও থেরাপিস্ট এবং গোলরক্ষক কোচ। সালাউদ্দিন জানান, ‘সঙ্গত কারণেই একজন মহিলা ফিজিওথেরাপিস্ট লাগবে আমাদের। যদি দেশে পাওয়া যায়, তাহলে তো হলোই। নয় তো বিদেশ থেকে নেব। তবে ফিজিক্যাল ট্রেনার এবং গোলরক্ষক কোচ অবশ্যই নেয়া হবে বিদেশী কাউকে। আমরা অচিরেই বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের ইন্টারভিউ নেয়া শুরু করব।’ অনুর্ধ ১৬ মহিলা দলের ফুটবলাররা সবাই স্কুলে পড়ে। বেশিরভাগই সেভেন থেকে টেনের মধ্যে। দু-একজন আছে, যারা এসএসসি পরীক্ষার্থী। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘ এক বছরের জন্য ট্রেনিং ক্যাম্পে থাকলে তারা তো নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে স্কুলের পরীক্ষাগুলোতে অংশ নিতে পারবে না। সেক্ষেত্রে করণীয় কি? ‘বাফুফে ভবনে বাংলা, ইংরেজী ও অংক বিষয়ে পারদর্শী চার শিক্ষক রাখা হবে, তাদের অধীনেই মেয়েরা পড়াশোনা করে পরীক্ষার সময়ে নিজ এলাকার স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দেবে।’ তবে বাফুফে আদৌ এই শিক্ষক-প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা, এ নিয়ে সংশয় আছে বিস্তর। কেননা, এর আগে তারা সিলেট বিকেএসপিতে থাকা ফুটবলারদের লেখাপড়ারও দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু কিছুই করতে পারেনি। মেয়েদের এক বছরের ট্রেনিং ক্যাম্পের অনেক নিয়মই ক্যাডেট কলেজের নিয়মের সঙ্গে মিলে যায়। যেমন- দেড় মাস পর পর অভিভাবকরা ঢাকায় এসে মেয়েদের সঙ্গে দেখা করে যেতে পারবেন। ৩-৪ মাস পর পর মেয়েরা ছুটি পাবে ৩-৪ দিনের জন্য। এই এক বছরে মেয়েরা নিজেদের ঝালিয়ে নিতে খেলবে ৫-৬টি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ। এ প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা জাপান, চীন, কোরিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচ খেলার চেষ্টা করব। কেননা বিশ্ব মহিলা ফুটবলে ওরাই এখন সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। আমরা তো বাছাইপর্বে প্রতিপক্ষকে ৫-১০ গোল করে দিয়েছি। কিন্তু মূলপর্বে তো এটা সম্ভব না। বরং আমাদেরই তারা টার্গেট করবে। এজন্য আগেভাগেই ওদের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেললে ওদের সম্পর্কে এবং আমাদের সামর্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।’ জাতীয় পুরুষ ফুটবল দল যে মাসিক বেতন পায়, তার চেয়েও নাকি অ-১৬ মহিলা দল বেশি টাকা পাবে, বলে জানিয়েছে বাফুফে। সালাউদ্দিন বলেন, ‘মেয়েদের ঠিক বেতন না, ওদের দেয়া হবে মাসিক ভাতা। যেটা ছেলেদের চেয়েও বেশি। তবে অঙ্কটা বলা যাবে না টার্মস এ্যান্ড কন্ডিশন অনুযায়ী।’ শনিবার কৃষ্ণাদের সংবর্ধনা এবং আর্থিক পুরস্কারে ভূষিত করার কথা ছিল বাফুফের। কিন্তু সেটা পিছিয়ে অনুষ্ঠিত হবে আগামী সোমবার। বাফুফের স্ট্র্যাটেজিক এ্যান্ড টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি বাংলাদেশে না থাকায় মহিলা ফুটবল দলের মহাপরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেননি। ৪-৫ দিন পর তিনি বাংলাদেশ আসবেন এবং পরিকল্পনাটা নিয়ে মডিফাই করবেন।
×