ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর সব হাটেই গরু উঠছে, অধিকাংশই দেশী

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রাজধানীর সব হাটেই গরু উঠছে, অধিকাংশই দেশী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোরবানির ঈদের এখনও বেশ ক’দিন বাকি। আগামীকাল শনিবার থেকে রাজধানীর অস্থায়ী হাটগুলোতে পশু উঠানোর কথা। কিন্তু ইতোমধ্যে প্রায় সবগুলো স্থায়ী হাটে পশু উঠতে শুরু করেছে। রাজধানীর স্থায়ী হাটের মধ্যে গাবতলী কোরবানির পশুতে কানায় কানায় পূর্ণ। বিক্রির চাপ এখনও তেমন একটা বাড়েনি। তাই খুব একটা চোখেও পড়ছে না হাট থেকে গরু নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। কোরবানির পশুর দাম একটু বেশি তাই এ যাত্রায় দরদাম শুনেই বাড়ি ফিরছেন অধিকাংশ ক্রেতা। তারা বলছেন, এবার দাম অনেক বেশি হাঁকছেন বেপারিরা। বিক্রেতারা বলছেন, আশানুরূপ ক্রেতা ও বিক্রি নেই। হাট পর্যন্ত কোরবানির পশু আনতে পথে পথে চাঁদা দিতে হয়েছে। খরচ অনেক বেশি হওয়ায় কম দামে গরু বিক্রি করতে রাজি নন বিক্রেতারা। তবে আজ শুক্রবার থেকে কোরবানির পশু বিক্রি পুরোপুরি জমে উঠবে বলে আশা করছেন বেপারিরা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গাবতলী হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রেতারা গরু-ছাগল থাকার জায়গা থেকে কাদা পরিষ্কার করছেন। রাস্তার কাদা আর গরুর গোবর মিশে একাকার হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে গরুর হাটে হাঁটাচলাও দায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ক্রেতার অপেক্ষায় অনেকটা অলস সময় পার করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে দুপুরের পর ক্রেতার দেখা মিললেও বিক্রি তেমন জমে উঠেনি। ব্যাপারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে আসছেন দাম যাচাই-বাছাই করতে। আর সাধ্যের মধ্যে হলে কোরবানির পশু কিনছেন কেউ কেউ। তবে দিন যত গড়াবে, বিক্রি তত বাড়বে এমনটা জানালেন বিক্রেতারা। তারা জানান, গরু রাখার জায়গা সঙ্কট থাকায় রাজধানীবাসী আগে থেকে গরু কিনতে আগ্রহী হন না। ঈদের দু-একদিন আগেই বেশিরভাগ ক্রেতা গরু কিনে থাকেন। আজ শুক্রবার থেকে গাবতলীর পশুর হাট পুরোপুরি জমে উঠবে বলে আশা করছেন বেপারিরা। এদিকে এখনও রাজধানীর বিভিন্ন রুট দিয়ে ঢুকছে কোরবানির পশু। লঞ্চ, ট্রাকভর্তি গরু, ছাগল ও মহিষ আসছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত হাটে আসা গরুর বেশিরভাগই দেশী। তবে ঈদের আগে ভারতীয় গরু আসা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। তাদের আশঙ্কা, তাহলে গত কয়েক বছরের মতো আবারও লোকসানে পড়তে হবে। যদিও ক্রেতারা বলছেন, বিদেশী গরু কম থাকায় বিক্রেতারা ইচ্ছামতো দাম হাঁকছেন। কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের বেপারি ইসামাইল হোসেনসহ কয়েকজন গত মঙ্গলবার রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে ৩৬টি গরু নিয়ে এসেছেন। ইসমাইল বলেন, আমরা কয়েক মাস আগে থেকে দেশী গরু কিনে কোরবানির হাটের জন্য প্রস্তুত করেছি। এখন পর্যন্ত গরুর দাম ঠিক আছে। তবে হঠাৎ বিদেশী গরুতে বাজার সয়লাব হলে কাক্সিক্ষত দাম পাব না। ক্ষতি নিয়েই ফিরতে হবে। গাবতলীর হাটে এখনও বিদেশী পশুর সংখ্যা কম। তবে কিছু পশু মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান থেকে আসছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সেখানে গরু, মহিষ, খাসি ছাড়াও দেখা মিলেছে দুম্বা ও উট। গাবতলীর পশুর হাট পরিচালনা কমিটির পরিচালক সানোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, বিক্রি এখনও জমে উঠেনি। তবে আজ শুক্রবার থেকে পুরোপুরি গাবতলী হাট জমে উঠবে বলে আশা করেন তিনি। পশুর দাম ও বিক্রি সম্পর্কে গাবতলী হাটের বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, বড় সাইজের গরু আকারভেদে ৮০ হাজার থেকে শুরু করে ১০-১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকছেন তারা। বুধবার এ হাটে সর্বোচ্চ ১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত গরুর দাম হাঁকা হয়েছে। গাবতলী হাটে গত বুধবার পাবনা থেকে গরু নিয়ে এসেছেন বেপারি সিরাজ। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, এখন পর্যন্ত ২২টি গরুর মধ্যে মাত্র ৩টি বিক্রি করতে পেরেছি। যে পরিমাণে ক্রেতা আসছে সে পরিমাণে বিক্রি নেই। একই কথা জানালেন ঈশ্বরদী থেকে আসা ব্যাপারী হাবিবুল। বুধবার কুষ্টিয়া থেকে ১৫টি গরু নিয়ে গাবতলী হাটে আসা মাঈন উদ্দিন জানালেন, এখন পর্যন্ত একটিও বিক্রি হয়নি। গরুর দাম কেমন যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি গরুর দাম ৪ লাখ টাকা চেয়েছি। ক্রেতা দেড় লাখ পর্যন্ত দাম করেছেন। দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রায় সবক’টিতেই বিক্রির জন্য পশু উঠানো হয়েছে। দুয়েকদিন আগে থেকেই পশুবাহী ট্রাক আসতে শুরু করেছে এসব হাটে। সেখানে বিক্রেতাদের পাশাপাশি আসছেন ক্রেতারাও। বিক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষিও চলছে ক্রেতাদের। তবে জমে উঠেনি বেচাবিক্রি। অন্যদিকে অতীতের মতো এবারও ইজারা পাওয়া নির্ধারিত জায়গার বাইরে হাট বসানোর চেষ্টা করছেন ইজারাদাররা। অভিযোগ রয়েছে, হাটগুলোর মূল সীমানার বাইরে এরই মধ্যে বাঁশের খুঁটি পোঁতার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এদিকে গাবতলীর হাটে পুলিশ ও র‌্যাবের উদ্যোগে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের উদ্যোগে ১৩টি ওয়াচ টাওয়ার, নয়টি টহল দল, তিনটি মোটরসাইকেল টহল দল ও ৪০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। অজ্ঞান পার্টি ও দালালদের খপ্পর থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের রক্ষার জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। বসানো হয়েছে জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন। অন্যদিকে অনিয়ম, অতিরিক্ত হাসিল আদায় ও সড়কে পশুর হাট বসানো বন্ধে রাজধানীর ২৩টি হাটে সোমবার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ (ডিএমপি) থেকে নিয়োগকৃত ম্যাজিস্ট্রেটরা এসব ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন।
×