ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘আবুল মনসুর আহমদের স্মৃতিকথা ইতিহাসের মূল্যবান দলিল’

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

‘আবুল মনসুর আহমদের স্মৃতিকথা ইতিহাসের মূল্যবান দলিল’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক জীবনে সাহিত্যের সঙ্গে রাজনীতির মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন আবুল মনসুর আহমদ। রাজনীতিক পরিচয়ের পাশাপাশি অর্জন করেছিলেন শক্তিমান লেখকের মর্যাদা। ব্যঙ্গাত্মক রচনায় কুড়িয়েছেন বিশেষ খ্যাতি। তীক্ষè দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সাহিত্যের আশ্রয়ে তুলে ধরেছিলেন মুসলিম সমাজের গোঁড়ামি, ধর্মান্ধতা, ভ-ামি ও কুসংস্কারের চিত্র। গত ৩ সেপ্টেম্বর ছিল এ সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকের ১১৮তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হলো তাঁকে নিবেদিত আলোচনা সভা। বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মনসুর মুসা ও কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন আবুল মনসুর আহমদের ছেলে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী আবুল মনসুর আহমদ তঁাঁর ব্যঙ্গাত্মক লেখার মাধ্যমে অসাধারণ শিল্পবোধের পরিচয় দিয়েছেন। তার স্মৃতিকথা সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের মূল্যবান দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। রাজনীতি, সাহিত্যচর্চা ও সাংবাদিকতা- যখন যেখানে ছিলেন সেখানেই ধর্মীয় গোঁড়ামির উর্ধে উঠে বাঙালী মুসলমানের প্রতি ভালবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, অবিভক্ত বাংলার রাজনীতির ইতিহাসে দু’জন ব্যক্তি একই সঙ্গে রাজনীতি করেছেন ও লিখেছেন। তাঁরা হলেন আবুল মনসুর আহমদ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন থাকলেও শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কোন স্মৃতিকথা রেখে যাননি। ফলে তাঁদের দৃষ্টিতে আমরা তাঁদের সমকালীন রাজনীতির আদ্যপান্ত প্রেক্ষাপট বুঝতে পারিনি। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান রাজনীতিক ও সাংবাদিকদের উচিত নিজেদের ভাবনা-চিন্তার কথা লিখে যাওয়া। তিনি আরও বলেন, রাজনীতি ও সাংবাদিকতা করে কিভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করা যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আবুল মনসুর আহমদ। বর্তমান প্রজন্মের উচিত এ মহৎপ্রাণ মানুষটির সামাগ্রিক জীবনাচরণ চর্চা করা। অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, আবুল মনসুর আহমদ সম্পর্কে বিস্তৃত গবেষণার প্রয়োজন আছে। গবেষণা করলে স্পষ্ট হবে তাঁর প্রাসঙ্গিকতা। সেই সঙ্গে তাঁর ভাবনা-চিন্তায় যদি কোন বৈপরীত্য থাকে তা স্পষ্ট হবে। দ্বিমতের জায়গাটা হলো, তিনি বিশ্বাস করতেন মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা মানেই হলো লাহোর প্রস্তাবের বাস্তব প্রতিফলন। এতে তাঁর বাঙালী জাতীয়তাবাদের বিশ্বাসটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আবার ‘পাক বাংলার কালচার’ বইটি শিরোনামের কারণে আপত্তির সৃষ্টি হয়। যদিও পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন হয়ে ‘বাংলাদেশের কালচার’ হয়। তবে একজন মানুষের চিন্তার শুরু আর শেষে স্ববিরোধিতা আসতে পারে, সেটা মেধার বিকাশমানতার অর্থে কিংবা বয়সজনিত কারণে। তাঁর বিষয়টা কী রকম ছিল তা নিয়ে গবেষণার অবকাশ আছে। অধ্যাপক মনসুর মুসা বলেন, তিনি দর্শনের ছাত্র ছিলেন। ফলে যাপিত জীবনের সর্বক্ষেত্রেই দর্শনের ছাপ ছিল। তাঁর লেখা পড়ে হঠাৎ করে বিতর্ক সৃষ্টি করার সুযোগ নেই। লেখার গভীরে প্রবেশ করে লেখাকে সমাকালীন পরিস্থিতি ও পরিবেশ বিবেচনা করে বুঝে নিতে হবে। আলোচনা সভায় উত্তর প্রজন্মের বক্তা হিসেবে আবুল মনসুর আহমদের মূল্যায়ন করেন প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহার, সাংবাদিক ও লেখক কাজল রশীদ শাহিন, লেখক শোয়াইব জিবরান, শরীফা সালোয়া ডিনা ও কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান। অনুষ্ঠানের শুরুতে আবুল মনসুর আহমদের যাপিত জীবনের ওপর নির্মিত ‘দুর্লভ এই আলো’ শীর্ষক তথ্যচিত্র দেখানো হয়। এরপর কবি ইমরান মাহফুজ সম্পাদিত ‘জীবন শিল্পী আবুল মনসুর আহমদ’ স্মারক গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। শিল্পকলায় চর্যা ও গৌড়ীয় নৃত্য পরিবেশনা ॥ মঙ্গলবার বৃষ্টিভেজা শরত সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে পরিবেশিত হলো চর্যা নৃত্য ও শাস্ত্রীয় গৌড়ীয় নৃত্য। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের পরিবেশিত নৃত্যশৈলীতে মুগ্ধ হলো নৃত্যানুরাগী দর্শকবৃন্দ। নাচের মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে নৃত্য সন্ধ্যাটি হয়ে ওঠে অনবদ্য। চর্যাপদ প্রকাশের শত বছরপূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় নেপালের প্রখ্যাত নৃত্যগুরু চন্দ্রমান মুনিকরের পরিচালনায় মাসব্যাপী চর্যা নৃত্য ও শাস্ত্রীয় গৌড়ীয় নৃত্য কর্মশালার সমাপনী আয়োজন হিসেবে অনুষ্ঠিত হয় এ পরিবেশনা। চর্যা নৃত্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন নেপালের নৃত্যগুরু চন্দ্রমান মুনিকর এবং গৌড়ীয় নৃত্যের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ভারতের গৌড়ীয় নৃত্য গবেষক অধ্যাপক ড. মহুয়া মুখোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক সোহরাব উদ্দিন। শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন নৃত্যগুরু চন্দ্রমান মুনিকর ও গৌড়ীয় নৃত্য গবেষক মহুয়া মুখোপাধ্যায়। এছাড়া দর্শক সারিতে বসে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন দেশের খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী ও পরিচালকবৃন্দ। লাকী আখন্দের চিকিৎসা সহায়তায় মিউজিক ভিডিও প্রকাশ ॥ দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছেন কিংবদন্তি শিল্পী লাকী আখন্দ। তার চিকিৎসা সহায়তায় নেয়া হয়েছে ভিন্নধর্মীয় উদ্যোগ। তারই গাওয়া গান নিয়ে প্রকাশিত হবে মিউজিক ভিডিও। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী নির্মাতা রেদওয়ান রনি নির্মিত মিউজিক ভিডিও প্রকাশ করবে প্রাণ গ্রুপ। বুধবার সন্ধ্যায় প্রাণ গ্রুপের ইউটিউব চ্যানেল ‘প্রাণ স্ন্যাকস টাইম’-এ প্রকাশ করা হবে লাকী আখন্দের ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’, ‘আমায় ডেকো না’ ও ‘আগে যদি জানতাম’ গানগুলো। এ বিষয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের হেড অব ডিজিটাল মিডিয়া আজিম হোসাইন বলেন, আমরা কপিরাইট আইনের দিকটি মাথায় রেখে তার গানগুলো অবিকৃত রেখে প্রকাশ করব গানগুলো। রেডিওতে গাওয়া তার অনেক গান সংরক্ষণ করা হয়নি। যদি সে গানগুলো পাওয়া যায়, তবে সেগুলো আমরা সংরক্ষণ করব। সংবাদ সম্মেলনে প্রাণ ফুডসের চীফ অপারেটিং অফিসার সাইফুল ইসলাম শিকদার জানান, লাকী আখন্দের সঙ্গে প্রাণ ফুডস লিমিটেডের এ মিউজিক ভিডিও নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রাণ গ্রুপের হেড অব মার্কেটিং আলী হাসান আলম বলেন, লাকী আখন্দ তার গানের মাধ্যমে আমাদের আনন্দ দিয়েছেন। এ মুহূর্তে আসলে আমাদের কাছ থেকে তিনি কিছু চাইতেন পারেন। আমরা তার গানগুলো শ্রোতাদের কাছে নতুনভাবে পৌঁছে দিয়ে শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চাই। রেদওয়ান রনি বলেন, লাকী আখন্দের মতো কিংবদন্তি শিল্পীর গান নিয়ে কাজ করা আমার জন্য এক বিরাট অভিজ্ঞতা। এটি আমার প্রথম মিউজিক ভিডিও। আশা করি গানগুলোর মতো এর ভিডিওচিত্রগুলোও শ্রোতা-দর্শকের ভাল লাগবে। লাকী আখন্দের গানগুলোর নতুন সঙ্গীতায়োজনের পাশাপাশি তাতে কণ্ঠ দিয়েছেন এ প্রজন্মের গায়ক লিমন। আজ শেষ হচ্ছে মূল্যবোধের নাট্যোৎসব ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ৬৪ জেলা শিল্পকলা একাডেমির মূল্যবোধের নাটক প্রযোজনা সমন্বয়ে প্রথম ধাপে ২০ জেলার ২০টি নাটক নিয়ে ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় মূল্যবোধের নাট্যোৎসব। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে চলমান সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবের শেষ দিন আজ বুধবার। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় মঞ্চস্থ হয় এ্যাডভোকেট মুনিরুজ্জামান নির্দেশিত বরগুনা জেলার নাটক ‘সু স্বর প্রতিবিম্ব’। সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হয় শামসুল হাদী নির্দেশিত বাগেরহাট জেলার নাটক ‘মান্যবরেষু’। রাত ৮টায় মঞ্চস্থ হয় রাজ্জাক মুরাদ নির্দেশিত রংপুর জেলার নাটক ‘বিবর্ণ সভ্যতা’। আজ বুধবার সমাপনী দিনে সন্ধ্যা ৬টায় মঞ্চস্থ হবে গোবিন্দ রায় সুমন নির্দেশিত মৌলভীবাজারের নাটক ‘শঙ্খচিল’। সন্ধ্যা ৭টায় অতনু কারাঞ্জাই নিদের্শিত ‘পরিচয়’ নাটকটি উপস্থাপন করবে ভোলা। রাত ৮টায় মঞ্চস্থ হবে নাসির উদ্দীন সাইমুন নির্দেশিত ফেনী জেলার নাটক ‘জীবনের ভাগ্য’।
×