ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরমাণু অস্ত্র প্রথম ব্যবহার না করার ঘোষণার পথ ছাড়লেন প্রেসিডেন্ট

প্রতিশ্রুতি দেবেন না ওবামা

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

প্রতিশ্রুতি দেবেন না ওবামা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কোন পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দেবেন বলে মনে হয় না। তিনি কোন সংঘর্ষে এরূপ অস্ত্র প্রথম প্রয়োগ করার সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেছিলেন। এখন তিনি সে প্রস্তাব পরিত্যাগ করছেন বলে মনে হয়। এটি মিত্রদের মনোবল দুর্বল করবে এবং রাশিয়া ও চীনের সাহস বাড়াবে বলে তার শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা যুক্তি দেখানোর পর তিনি দৃশ্যত তার মত পরিবর্তন করছেন। প্রশাসনের কয়েক কর্মকর্তা এ কথা জানান। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের। ওবামা পরমাণু অস্ত্রের ভূমিকা হ্রাস করায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার অবদানের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেন। কিন্তু তিনি কোন কোন সাবেক সিনিয়র সহকারীসহ তার সমালোচকদের কথা শুনে অপমানিত বোধ করেন। এসব সমালোচক যুুক্তি দেন যে, ওবামার দ্বিতীয় প্রশাসনের পরমাণু অস্ত্র আধুনিকায়নের পরিকল্পনা তার ২০০৯ সালের প্রতিশ্রুতিকে ম্লান করে দেয়। এ পরিকল্পনায় আগামী কয়েক দশকে এক লাখ কোটি ডলার ব্যয় করার পক্ষে। কয়েক মাস ধরে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে সমর্থকরা ওবামার পরমাণু অস্ত্রমুক্ত এক পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে কাজ করার প্রতিশ্রুতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাকে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। কোন পরমাণু অস্ত্র প্রথম প্রয়োগ না করার অঙ্গীকারই হতো এসব পদক্ষেপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাহসিকতাপূর্ণ। তারা যুক্তি দেখান যে, বাস্তবেও কোন আমেরিকান প্রেসিডেন্টই অত বেশি বিকল্প উপায় থাকতে কোন পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করবেন না। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী উইলিয়াম জে পেরি সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে বলেন, এখনই সঠিক সময়। এ অঙ্গীকারই কয়েক দশক ধরে চলে আসা আমেরিকার অঘোষিত নীতিকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওবামা তার বর্তমান উপদেষ্টাদের পক্ষই নিয়েছেন। তারা চলতি গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন বৈঠকে সতর্ক করে দেন যে, প্রথমে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মিত্রদের মনে ভয়ের সঞ্চার করবে। ওই সব দেশ এশিয়া থেকে আমেরিকার সরে যাওয়ার কথাবার্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যে এরূপ ভাবনা প্রকাশ পায়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ্যাশটন বি কার্টার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন যে, বাল্টিক সাগর থেকে দক্ষিণ চীন সাগর পর্যন্ত রাশিয়া ও চীনের নেয়া নতুন নতুন পদক্ষেপ বর্তমান সময়কে পরমাণু অস্ত্র প্রথমে প্রয়োগ না করার ঘোষণা দানের পক্ষে অনুপযোগী করে তুলেছে। জ্বালানীমন্ত্রী আর্নেস্ট জে মনিজ আপত্তিকারীদের দলে যোগ দিয়েছেন। তার দফতর পরমাণু অস্ত্রভা-ার দেখাশোনা করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা ফেলেছিলেন। এটি ইতিহাসে যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হওয়া বা কোনবার ব্যবহৃত হওয়ার একমাত্র দৃষ্টান্ত। হ্যারি এস ট্রুম্যানের সময় থেকে প্রত্যেক প্রেসিডেন্টই পরামাণু অস্ত্র কেবল শেষ অবলম্বন হিসেবেই ব্যবহৃত হবে বলে স্পষ্ট করে দেন। কাজেই ওমাবার অঙ্গীকার অলিখিত নীতিতেই বহুলাংশে অনুমোদন করত। প্রশাসন কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন যে, পরমাণু অস্ত্র প্রথমে ব্যবহার করা সম্পর্কিত নীতি বদলানোর প্রশ্নটি চলতি গ্রীস্মকালে বারবার উত্থাপিত হয়। ওবামা দেখাতে চান যে, আমেরিকান রণকৌশল পরমাণু অস্ত্রের ভূমিকা হ্রাস করা এবং এভাবে পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি কমানোর প্রতিশ্রুতি কেবল বাগাড়ম্বরই ছিল না। কিন্তু প্রেসিডেন্টের নিজের সামনে উত্থাপিত যুক্তিগুলো ক্ষণস্থায়ী হয় বলে কর্মকর্তারা জানান। এর কারণ সম্ভবত এত বেশি সিনিয়র সহকারী আপত্তি তুলেছিলেন। কার্টার যুক্তি দেখান যে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন পরমাণু অস্ত্র প্রথম ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতিকে আমেরিকার দুর্বলতার লক্ষণ বলে ব্যাখ্যা করতে পারেন; যদিও এর অভিপ্রায় তা ছিল না।
×