ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কুয়েট নবীন হলেও ইতিহাসের দিক থেকে এটি একটি প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

১৪ বছরে কুয়েট

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

১৪ বছরে কুয়েট

বর্ণিল আয়োজন আর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর পালিত হলো খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ত্রয়োদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। এর মধ্যদিয়ে ১৪ বছরে পদার্পণ করল কুয়েট। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কুয়েট নবীন হলেও ইতিহাসের দিক থেকে এটি একটি প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বিআইটি এবং পরে বিআইটি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। ইতোমধ্যে কুয়েট দেশে-বিদেশে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। এখানে তিনটি অনুষদের অধীনে ১৮টি বিভাগে (ডিপার্টমেন্টে) প্রায় পাঁচ হাজার ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে। ইতিহাসের পাতা থেকে: খুলনা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে ফুলবাড়ীগেট এলাকায় গ্রাম্য সরলতার মধ্যে ১০১ একর এলাকা নিয়ে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) অবস্থিত। এই কুয়েটের ইতিহাস বিভিন্নভাবে ঐতিহ্য বহন করছে। এটি ১৯৬৭ সালে খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কিন্তু এর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে এটি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি), খুলনা শাখায় রূপান্তরিত হয়। খুলনা বিআইটি হিসেবে কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার প্রায় দেড় যুগ পর ২০০৩ সালের ০১ সেপ্টেম্বর খুলনা বিআইটি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। যে কারণে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ৪৯ বছর, অর্জনের ৪২ বছর ও গৌরবের ১৩ বছর শিরোনামে এবার কুয়েটের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করা হয়। বর্তমান অবস্থা: বর্তমানে কুয়েটে তিনটি অনুষদের অধীনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পুরকৌশল, তড়িৎ ও ইলেক্ট্রোনিক কৌশল, যন্ত্র কৌশল, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল, ইলেক্ট্রোনিক্স ও কমিউনিকেশন কৌশল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা, বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট, বায়ো-মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, এনার্জি সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত, স্থাপত্য, মেটেরিয়াল সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও মানবিক বিভাগ চালু রয়েছে। এই ১৮টি বিভাগে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। প্রায় তিন শ’ জন শিক্ষক, শতাধিক কর্মকর্তা এবং আড়াই শতাধিক কর্মচারী দিয়ে চলছে কুয়েটের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। আগামীতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও কয়েকটি বিভাগ (ডিপার্টমেন্ট) চালু, বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন ও লোকবল বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন:ত্রয়োদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার কুয়েটে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। সভাপতিত্ব করেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর। সকাল সোয়া ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত হয় প্রীতি সমাবেশ। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে সঙ্গে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা। পতাকা উত্তোলন শেষে প্রধান অতিথি বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদ্বোধন করেন। এরপর পর সকাল পৌনে এগারোটায় বের করা হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ফুলবাড়ীগেট এলাকা প্রদক্ষিণ করে অডিটরিয়ামের সামনে এসে শেষ হয়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে অডিটরিয়ামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রজেক্ট প্রদর্শনী, টেকনিক্যাল পেপার প্রেজেন্টেশন, আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত পুরকৌশল অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুব আলম, যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. তারাপদ ভৌমিক, প্রকৌশল অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মোঃ আবদুর রফিক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. শিবেন্দ্র শেখর শিকদার এবং পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) প্রফেসর ড. সোবহান মিয়া। বিকেল ৩টায় কুয়েটের নবনির্মিত লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন এবং গেস্ট হাউস কাম ক্লাব ভবনের শুভ উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। এ সময় গেস্ট হাইস সংলগ্ন এলাকায় তিনি একটি গাছের চারা রোপণ করেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন বিভাগের ল্যাবসমূহ উম্মুক্তকরণ, প্রধান অতিথির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতবিনিময়, ছাত্র-শিক্ষক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, দোয়া মাহফিল এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ¦ অমল সাহা
×