ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চীনে বিশ্বমানের টেক কোম্পানি ॥ উবার কেন হেরে গেল

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৩১ আগস্ট ২০১৬

চীনে বিশ্বমানের টেক কোম্পানি ॥ উবার কেন হেরে গেল

পশ্চিমী দেশগুলো চীনের ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোকে নিয়ে নানা ব্যঙ্গ বিদ্রƒপ করে থাকে। কিন্তু এখন অবস্থা দাঁড়িয়েছে এই যে চীনের বাজারে গিয়ে তাদের ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো আর হালে পানি পাচ্ছে না। গুগল বাজার ছেড়ে চলে গেছে। ফেসবুক আটকে দেয়া হয়েছে। ব্যবসা এগিয়ে নিতে ও এ্যামাজনকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। আর অতি সম্প্রতি হেইল রাইডিং (ট্যাক্সি) সার্ভিস কোম্পানি উবার চীনে তার স্থানীয় ইউনিট প্রতিদ্বন্দ্বী চীনা কোম্পানি ডিডি চুক্সিংয়ের কাছে বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীনের বাজার দখল করে নেয়ার যে স্বপ্ন উবারের ছিল সেটির অপমৃত্যু হয়েছে যেমনটি এর আগে হয়েছে অন্য আরও অনেক কোম্পানির বেলায়। কারণটা কি? কারণ আর কিছুই নয়, চীনের স্থানীয় ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর দ্রুত ও শক্তিশালী বিকাশ ঘটেছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক আইনের দ্বারা সেগুলোকে বাইরের প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করা হচ্ছে। তার ওপর আছে গ্রেট ফায়ারওয়াল। অর্থাৎ ইন্টারনেটের ওপর সেন্সরশিপ। অনেকে বলে থাকে যে এসব সুরক্ষার অর্থ চীনাদের নতুন কিছু উদ্ভাবনের প্রয়োজন নেই। তারা পাশ্চাত্যে উদ্ভাসিত ব্যবসায় মডেলগুলো অনুকরণ করে নিজেদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতে পারে। সংক্ষেপে বলতে গেলে চীন এখন বাইরের ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর কাছে রুদ্ধ। এর কোম্পানিগুলো সরকারী প্রশ্রয়ে লালিত এবং অন্যের অনুকরণের মধ্যেই রয়েছে তাদের মেধার পরিচয়। উবারের ব্যবসা থেকে পিছু হটা থেকে উপরের ওই কথাগুলোই সত্য বলে মনে হতে পারে। উবার তার চীনের বাজার ডিডির কাছে ছেড়ে দিয়েছে। এখন তারা স্বদেশের বাজার ও অন্যত্র মনোনিবেশ করবে। উবারের এই আত্মসমর্পণের আংশিক কারণ সম্প্রতি চীনা সরকারের জারিকৃত নিয়মকানুন যার দ্বারা ভর্তুকি দেয়া কার্যত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উবার চীনের চালক ও আরোহীদের প্রণোদনা দিতে গিয়ে বছরে এক শ’ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। এখন ডিডির পক্ষে চুটিয়ে হেইল রাইডিং ব্যবসা করার পথ খুলে গেছে। কিন্তু আরেকটু নিবিড়ভাবে দেখলে আরও ইতিবাচক চিত্র বেরিয়ে আসবে এবং সেটা শুধু ডিডির নয়, উপরন্তু সামগ্রিকভাবে চীনের আইটি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর। পশ্চিমারা বলে থাকে যে চীনের বাজারটাই এমন যে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে হয় একেবারে আটকে রাখা হয় নয়ত নানা নিয়মকানুনে তাদের বাধা পড়তে হয়। চীন সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা সীমিত করেছে সত্য যার পণ্য সেখানে সার্চের ক্ষেত্রে বাইদুর মতো পাশ্চাত্য কোম্পানির ক্লোন দাঁড়িয়ে গেছে। তাই বলে চীনের বাজার একেবারে দুর্ভেদ্য বলে সমালোচকরা যা বলে সেটা ঠিক নয়। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাসেজিং এ্যাপ হোয়াইটস এ্যাপ যা কিনা ফেসবুকের মালিকানাধীন তা অবাধে চীনে পাওয়া যায়। তবে চীনের শীর্ষস্থানীয় এ্যাপ উইচ্যাট হোয়াইটস এ্যাপের দাপট কমিয়ে দিয়েছে। উইচ্যাট চীনের বিশাল ও শক্তিধর ইন্টারনেট কোম্পানি আলি বাবার বিরুদ্ধেও লড়েছে। চীন হলো এ্যাপলের আইফোনের সবচেয়ে বড় বাজার। উবারও বিশ্বের বৃহত্তম রাইড হেইলিং বাজার চীনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জোর প্রয়াস চালিয়েছিল। এটা ঠিক নয় যে চীনের বৃহৎ টেক কোম্পানিগুলো বিশ্বের বাকি অংশ থেকে নিজেদের প্রাচীর দ্বারা আড়াল করে রেখেছে। বরং দেখা যাচ্ছে যে তারা স্ন্যাপচ্যাট ও লিফটের মতো আমেরিকার স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করেছে এবং ফিনল্যান্ডের সুপারসেল ও ইসরাইলের প্লেটিকার মতো মোবাইল গেমিং কোম্পানিগুলো কিনে নিয়েছে। সমালোচকরা বলে যে বিদেশী কোম্পানিকে চীনের বাজারে ঢুকতে দেয়া হয় কিন্তু প্রতিযোগিতায় জিততে দেয়া হয় না। সেটাও ঠিক কথা নয়। বরং এর দ্বারা চীনের বিশাল বিশাল টেক কোম্পানিগুলোর কৃতিত্বকে বেশি খাটো করে দেখানো হয়। অনেক অনলাইন ব্যবসার মতো রাইড-হেইলিং ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা। এখানে যে জিতবে বাজার তারই হবে। ২০১৫ সালে চীনের স্থানীয় দুটি কোম্পানি একীভূত হয়ে গঠিত হয় ডিডি। কোম্পানিটি প্রতিযোগিতায় উবারকে হারিয়ে দেয়। ২০১৫ সালের শেষ দিকে উবার সারা বিশ্বে তার এক শ’ কোটিতম রাইডের আয়োজন করেছিল এবং সেটাও হয়েছিল তাদের পাঁচ বছর ধরে ব্যবসার পর। অন্যদিকে ডিডি শুধু ২০১৫ সালে ১৪০ কোটি রাইডের ব্যবস্থা করেছিল এবং সেটাও আবার কেবল চীনেই। উবার চীনে তার বাজারের ভাগটা ১০ শতাংশের ওপর ওঠাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছিল। অন্যদিকে ডিডি স্থানীয় সংস্কৃতি বুঝত। তাই সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোর সঙ্গে ভালভাবে একাত্ম হয়েছিল এবং গোড়া থেকেই ট্যাক্সি ড্রাইভারদের তার এ্যাপে অন্তর্ভুক্ত করে নিজের পক্ষে টেনে নিয়েছিল। সোজা কথায় আমেরিকান কোম্পানি উবার চীনা কোম্পানির কাছে প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়েছিল। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×