ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

উইলস লিটলের ছাত্রী রিশাকে বাঁচানো গেল না

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৯ আগস্ট ২০১৬

উইলস লিটলের ছাত্রী রিশাকে বাঁচানো গেল না

আজাদ সুলায়মান ॥ বখাটেরা তাকে বাঁচতে দিল না। চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শেষপর্যন্ত হেরে গেল উইলস লিটল স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা (১৫)। ঢাকা মেডিক্যালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মারা যায় সে। কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী রিশা নিহত হবার খবরে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে তার সহপাঠীরা। ঢাকা মেডিক্যালের জরুরী বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক জেসমিন নাহার জানান, রিশার করুণ মৃত্যু ঘটেছে। শত চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো গেল না। এদিকে রিশার মৃত্যুর সংবাদ শোনার পরপরই উইলস লিটলের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়। তারা কাকরাইলের সড়ক অবরোধ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিশা হত্যার আসামিকে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ তুলে নেয়। নিহত রিশার বাবা রমজান আলী কেবল ব্যবসায়ী। সিদ্দিক বাজারের ১০৪ নম্বর বাসায় পরিবার নিয়ে বাস করেন। ২ বোন এক ভাইয়ের মধ্যে রিশা সবার বড়। মেধাবী ছাত্রী রিশাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল পরিবারের। ঘটনার দিন গত বুধবার দুপুর সোয়া বারোটার দিকে স্কুলের কয়েক গজ দূরে কাকরাইলের ফুটওভারব্রিজের নিচে পৌঁছামাত্রই তার ওপর হামলে পড়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে এক দুর্বৃত্ত। ভীতসন্ত্রস্ত রিশা হাত দিয়ে তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা চালায়। এতে বাঁ হাতেও আঘাত লাগে। পেট আর হাতের আঘাতে ঘটনাস্থলেই বসে পড়ে সে। বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকে। সেই নৃশংস তা-বের প্রত্যক্ষদর্শী উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রাফি বলেন, রিশার চিৎকারে পথচারীরা ওই যুবককে ধাওয়াও করেছিল। কিন্তু আটকাতে পারেনি। রিশাকে উদ্ধার করে প্রথমে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ও পরে ঢামেকে পাঠানো হয়। ঢাকা মেডিক্যালের ডাক্তাররা জানান, ছুরিকাঘাতে প্রচুর রক্তপাত ঘটে। রক্ত দিয়েও তাকে শঙ্কামুক্ত করা যায়নি। শনিবার রাত থেকে তার অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। সকালেই দেখতে হয়েছে করুণ পরিণতি। রিশার মা তানিয়া হোসেন জানিয়েছিলেন, ৫ থেকে ৬ মাস আগে এলিফ্যান্ট রোডে ইস্টার্ন মল্লিকা শপিংমলে বৈশাখী টেইলার্সে জামা বানাতে দেয় রিশা। ওই সময় তার মোবাইল নম্বরটিও দেয়া হয়। এরপর থেকে ওই দোকানের এক কাটিং মাস্টার প্রায়ই ফোন করে রিশাকে উত্ত্যক্ত করত। বাধ্য হয়ে ফোনের ওই সিমটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপরও স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্রায়ই ওই কাটিং মাস্টার তার মেয়েকে বিরক্ত করত। স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত। ওই কাটিং মাস্টার এ ঘটনা ঘটাতে পারে। রিশার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। বেলা এগারোটার দিকে সড়কে অবস্থান নেয় তারা। প্রায় এক ঘণ্টা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দেয়। পুলিশ জানায়, ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার রিশার মা তানিয়া হোসেন বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ধারায় এবং পেনাল কোডে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করে ওবায়দুল খান (২৯) নামে এক ব্যক্তিকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। আসামি ওবায়দুল ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্সের বৈশাখী টেইলার্সের কাটিং মাস্টার। ওই টেইলার্সে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, ওবায়েদ দুই মাস আগে চাকরি ছেড়ে চলে গেছে। রিশার মৃত্যুর পর হাসপাতালের মর্গে যায় এক বেদনাবিধূর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রিশার শোকার্ত সহপাঠী, শিক্ষক ও স্বজনদের আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। এ সময় হঠাৎ নীরবতা ভেঙ্গে আর্তনাদ করে ওঠেন রমজান আলী-‘আমাকে নিয়ে গেলি না কেন। কই গেলি মা আমার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কোন সান্ত¡নায় আমার মন মানছে না। এতটুকু বাচ্চার কি অপরাধ ছিল! তাকে এভাবে মেরে ফেলল। সন্ধ্যায় রিশার স্বজনরা জানান, সিদ্দিক বাজারে তাদের বাড়িতে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।
×