ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সুগন্ধি বুনোফুল দোলনচাঁপা

যেন দেবকুমারীর শুভ্র হাসি, ফুল হয়ে দোলে...

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৪ আগস্ট ২০১৬

যেন দেবকুমারীর শুভ্র হাসি, ফুল হয়ে দোলে...

মোরসালিন মিজান ॥ ফারিয়া হাসীনের বাসা মনিপুরীপাড়ায়। বাসার ঠিক সামনে ফুলের বাগান। ছোট্ট বাগানে একাধিক সুগন্ধি ফুল ফুটে আছে। তবে পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় প্রথমে যে ঘ্রাণটি নাকে আসে, সেটি দোলচাঁপার। বিশেষ করে বিকেল বেলায় দারুণ মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়ায় সফেদ সুগন্ধি বুনোফুল। রাত যত গভীর হয় ঘ্রাণ আরও ছড়িয়ে পরে। ছুঁয়ে দিয়ে যায়। পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মন ভাল হয়ে যায় পথিকের। শুধু এই একটি বাসা বা বাগানে নয়, দোলনচাঁপা এখন ফুটে আছে প্রায় সর্বত্র। বাগানে যেমন আছে, তেমনি দৃশ্যমান হচ্ছে ঢাকার রাস্তায়। ছোট ছোট ছেলেময়েরা ফুলের তোড়া সাজিয়ে এদিক ওদিক ছুটছে। তাদের ছোটাছুটি গোটা শহরকে জানিয়ে দিচ্ছে, ফুটেছে দোলনচাঁপা! ফুল কেনায় অভ্যস্ত না হলেও অনেকে কিনছেন। হাত বাড়িয়ে নিচ্ছেন একগুচ্ছ ভাললাগা। ভাললাগার ফুল দোলনচাঁপা। ভালবাসারও। কোন কবি খুব সুন্দর বলেছিলেন। তার বলাটি অনেকটা এরকম- আমার ভালোবাসার কথা দোলনচাঁপা জানে/ তাই এতো সুগন্ধ ছড়ায়...। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মনেও দোলা দিয়েছিল দোলনচাঁপা। প্রিয় ফুলের প্রতি নিজের হৃদয়াবেগের কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন- দোলে দোলে দোলে প্রেমের দোলন-চাঁপা হৃদয়-আকাশে...। নজরুল ফুলটিকে প্রকৃতির হাসি জ্ঞান করেছিলেন। কবির বলাটি, ‘যেন দেবকুমারীর শুভ্র হাসি, ফুল হয়ে দোলে ধরায় আসি/ আরতির মৃদুজ্যোতি প্রদীপ কলি দোলে, যেন দেউল আঙিনাতে...।’ বাসাবাড়িতে ফুটলেও দোলনচাঁপা বুনো ফুল। গাছ দেখতে অনেকটা আদা বা হলুদ গাছের মতো। ফুল ফোটা শেষ হলে কা- শুকিয়ে যায়। গোড়া থেকে আবার নতুন কা- বের হয়। ফুলচাষীরা মৌসুমী ফুল হিসেবে দোলনচাঁপার চাষ করে থাকেন। এর আদিনিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ভারতীয় প্রজাতির ফুল দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশে আছে। বহুবর্ষজীবী কন্দজ উদ্ভিদের প্রধান আকর্ষণ ফুল। বাংলাদেশে সাদা ফুলটি বেশি দেখা যায়। অনেকে মনে করেন, দোলনচাঁপা মানেই সাদা। আসলে হলুদ এবং লাল রঙেরও হয়। দোলনচাঁপার পাপড়িগুলো দেখতে প্রজাপতির ডানার মতো। মৃদু মন্দ হাওয়ায় সুন্দর দোল খায়। দেখে মনে হয়, লম্বা সবুজ পাতার উপর প্রজাপতি এসে বসেছে। এ কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফুলটিকে বাটারফ্লাই জিঞ্জার লিলি বলে ডাকা হয়। নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা জানান, দোলনচাঁপার ৪০টির মতো প্রজাতি। গাছ ৬০ থেকে ৭০ সেমি উঁচু হয়। কা-ের পাশে কয়েকটি লম্বা পাতা থাকে। পাতা লেন্স আকৃতির। লম্বায় আট থেকে চব্বিশ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। চওড়া দুই থেকে পাঁচ ইঞ্চি। তবে এত সুন্দর আর মিষ্টি ঘ্রাণ যে দোলনচাঁপার, সেটি বিকেলে ফোটে। রাতভর গন্ধ বিলায়। সকাল হতেই আর তেমন দেখা যায় না। ঝরে পড়তে থাকে। ঝরে যায়। হারিয়ে যায় না!
×