ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুখের আলসার ও টুথপেস্টের রসায়ন

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ১৬ আগস্ট ২০১৬

মুখের আলসার ও টুথপেস্টের রসায়ন

মানসিক চাপ ও চলমান সামাজিক অস্থিরতার কারণে মুখের আলসার প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ মুখের সবগুলো আলসারের প্রকৃত কারণ এখনও অজানা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং জেনেটিক কারণে মুখের আলসার হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় উন্নত চিকিৎসা প্রদানের পরও রোগীর মুখে আলসার বা ঘা বার বার দেখা যায়। এক্ষেত্রে আমরা একবারও ভাবি না বা লক্ষ্য করি না কোন টুথপেস্ট রোগী ব্যবহার করছে। কারণ টুথপেস্টের রসায়নের কারণে মুখের আলসার ভাল নাও হতে পারে। টুথপেস্টের মন্দ রাসায়নিক উপাদানের একটি হলো সোডিয়াম লরিল সালফেট যা দেখতে সাদা বা ক্রিম রঙের হয়ে থাকে। সোডিয়াম লরিল সালফেট বা এসএলএস একটি ডিটারজেন্ট যা টুথপেস্ট, সেভিং ক্রিম, শ্যাম্পু, হেয়ার কন্ডিশনার, বডিওয়াশ ইত্যাদি প্রসাধন সামগ্রিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এসএলএসের কারণেই টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করার সময় ফেনা উৎপন্ন হয়ে থাকে। এসএলএস কে টুথপেস্টের ফোমিং এজেন্টও বলা হয়। টুথপেস্টের অতিরিক্ত ফেনা দেখে আনন্দিত হওয়ার কিছুই নেই। এসএলএস ত্বকে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃস্টি করে থাকে। এর সঙ্গে কারও যদি এলার্জি থাকে তাহলে এলার্জিক মুখের আলসার দেখা দিয়ে থাকে। আপনার দাঁত ও ওরাল মিউকোসার ধরন দেখেই নির্ধারণ করতে হবে কোন টুথপেস্ট আপনার জন্য ভাল। টুথপেস্টের গায়ে সাঙ্কেতিক চিহ্ন এবং উপাদান দেখে টুথপেস্ট ব্যবহার করা উচিত। টুথপেস্ট কিভাবে তৈরি করা হয়েছে তা বোঝা যায় টুথপেস্টের গায়ে নিচের দিকে চারকোনা চিহ্নের রঙ দেখে। (ক) লাল রঙ : টুথপেস্টে লাল রঙের চারকোনা চিহ্ন থাকলে বুঝতে হবে সেই টুথপেস্টটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হলেও তাতে রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। (খ) নীল রঙ : টুথপেস্টে নিচের দিকে নীল রঙের চারকোনা চিহ্ন থাকলে বুঝতে হবে ওই টুথপেস্ট ন্যাচারালের পাশাপাশি ওষুধ হিসাবেও ব্যবহারযোগ্য। উদাহরণ স্বরূপ লাল মাশরুম দিয়ে তৈরি গ্যানোফ্রেশ টুথপেস্ট সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি। আবার এই টুথপেস্ট কারও মাথা ব্যথা করলে বাম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যাদের টুথপেস্টে এলার্জি রয়েছে তারা নীল রঙের চিহ্নযুক্ত টুথপেস্ট প্রাথমিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন। (গ) সবুজ রঙ : টুথপেস্টের গায়ে সবুজ রঙের চারকোনা চিহ্ন থাকলে বুঝতে হবে এটি ন্যাচারাল টুথপেস্ট। সবুজ রঙের চিহ্নযুক্ত টুথপেস্ট মুখের আলসার রোগীদের জন্য সবচেয়ে ভাল। কারণ এটি ব্যবহারের ফলে সাধারণত কোন এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হয় না। (ঘ) কালো রঙ : টুথপেস্টের গায়ে কালো রঙের চারকোনা চিহ্ন থাকলে বুঝতে হবে টুথপেস্টটি সম্পূর্ণভাবে রাসায়নিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে। যাদের মুখে বার বার আলসার হয়ে থাকে তাদের কালো চিহ্নযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার না করাই ভাল। দাঁতের শিরশিরভাব বা অতি সংবেদনশীল দূর করার জন্য আমরা বিভিন্ন টুথপেস্ট ব্যবহার করে থাকি। তবে এসব টুথপেস্ট দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করার ঠিক নয়। এসব টুথপেস্টের উপাদানের মধ্যে থাকে পটাশিয়াম নাইট্রেট, স্ট্রোনটিয়াম ক্লোরাইড এবং অন্য উপাদান যা দাঁতের নার্ভের ব্যথার নির্দেশনা বাধাগ্রস্ত করে থাকে। পটাশিয়াম নাইট্রেট তুলনামূলকভাবে নিরাপদ উপাদান যা ব্যবহার করা যায়। স্ট্রোনটিয়াম ক্লোরাইড জাপান সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এটি কসমেটিকে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ নয়। তাই এক্ষেত্রে আমরা এসএলএস মুক্ত পটাশিয়াম নাইট্রেটযুক্ত টুথপেস্ট একটি সীমিত সময়ের জন্য ব্যবহার করতে পারি। দাঁতের অতিসংবেদনশীলতার জন্য ব্যবহৃত টুথপেস্টগুলো দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করা যায় না। দীর্ঘমেয়াদে এসব টুথপেস্ট ব্যবহার করলে দাঁতের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। এছাড়া মুখের অভ্যন্তরে মিউকাস মেমব্রেনের ক্ষতিসাধন হতে পারে। টুথপেস্ট ছাড়াও আমরা বিভিন্ন নামী-দামী মাউথওয়াশ ব্যবহার করে থাকি। এমনকি সুগন্ধিযুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার করে আত্মতৃপ্তি লাভ করে থাকি। সবার অবগতির জন্য জানা প্রয়োজন এসব মাউথওয়াশ ব্যবহারের কারণে যাদের বার বার মুখে আলসার হয়ে থাকে তাদের আলসার কখনই ভাল হতে চায় না। কারণ এর কিছু উপাদান আলসার সারানোর ক্ষেত্রে বিঘœ সৃষ্টি করে থাকে। তবে হ্যাঁ, এসব মাউথওয়াশ কিছু নিয়মকানুনের মাধ্যমে ব্যবহার করলে তেমন ক্ষতি হয় না। তবে ব্যবহার না করে থাকতে পারলেই ভাল। অতএব, মুখের আলসারের চিকিৎসার জন্য মুখস্থ মলম, ভিটামিন, মাউথওয়াশ কোন সমাধান তো দেবেই না বরং সাময়িকভাবে আলসার ভাল হতে পারে কিন্তু পরবর্তীতে মুখের আলসার ব্যাপকভাবে দেখা দেয় যা ভাল হতে সময় নেয় এমনকি যথাযথ উন্নত চিকিৎসা প্রদানের পরও। তাই মুখের চিকিৎসার ক্ষেত্রে যতœবান হতে হবে এবং সুস্থ স্বাভাবিক সরল জীবন যাপন করতে হবে। ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ মোবাইল : ০১৮১৭-৫২১৮৯৭
×