ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

জাঙ্ক কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৮ আগস্ট ২০১৬

জাঙ্ক কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত কিছুদিন ধরে পুঁজিবাজারে কিছুটা মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। আর সেই মন্দাবস্থার সুযোগ নিচ্ছে এক শ্রেণীর চতুর বিনিয়োগকারীরা। তারা অল্প টাকা বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করে মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করছে স্বল্প মূলধনী বা জাঙ্ক শেয়ারগুলোকে। যে শেয়ারগুলোর বেশিরভাগই নন-মার্জিনেবল। বেশিরভাগই লোকসানী কোম্পানি বা পিই-রেশিও মাত্রারিক্ত। যেমন গত কিছুদিন ধরেই রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি শিল্প কর্পোরেশনের তিনটি প্রতিষ্ঠান রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, ঝিল বাংলা ও শ্যামপুর সুগার মিলের শেয়ার দর বেড়েছে গড়ে একশ’ শতাংশেরও ওপর। কিন্তু কারও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও নিশ্চুপ রয়েছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রবিবারেও শ্যামপুর সুগার, ইস্টার্ন ক্যাবলস, সোনালী আঁশ, উসমানিয়া গ্লাস, মেঘনা পেট, নর্দান জুটস, সিভিও পেট্রো কেমিক্যাল, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, জেমিনি সী ফুড ও লিব্রা ইনফিউশনের শেয়ারের বিক্রেতাশূন্য অবস্থায় লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শুধু সিভি পেট্রো কেমিক্যাল ছাড়া বাকি সবগুলো কোম্পানির পিই রেশিও ৪০ বেশি। অর্থাৎ আইনানুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার বিবেচনায় নিয়ে কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনতে ব্রোকার হাউস বা মার্চেন্টগুলো ঋণ দেয় না। কারণ এই শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এছাড়া কোম্পানিগুলোর বেশিরভাগই লোকসানী প্রতিষ্ঠান। আগামীতে ভাল কোন লভ্যাংশ ঘোষণা না করার সম্ভাবনাই বেশি। তবুও এক শ্রেণীর কারসাজি চক্রের সদস্যরা সুযোগ নিচ্ছেন। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ১০ জুলাই শ্যামপুর সুগার মিলের প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল ৬ টাকা। রবিবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২.১০ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির দর বেড়েছে ১০০ শতাংশের ওপর। একইভাবে ১০ জুলাই ইস্টার্ন ক্যাবলসের দর ছিল ১৩০ টাকা। রবিবারে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯৪.৯০ টাকা। এক মাসে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৬৪.৯০ টাকা। লভ্যাংশ ঘোষণাকে সামনে রেখে সোনালী আঁশের গত এক মাসে দর বেড়েছে ৪৫ টাকা। উসমানিয়া গ্লাসের দর বেড়েছে ৩৫ টাকা। নর্দান জুটসের দর বেড়েছে ১৩৫ টাকা। সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৫০১ টাকা একইভাবে লোকসানী প্রতিষ্ঠান লিব্রা ইনফিউশনের দর বেড়েছে ১৪১ টাকা। কোম্পানিগুলোর দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়লেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। তবে এখন পর্যন্ত কোন ন্যূনতম তদন্ত কমিটিও গঠন করেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্চেন্ট ব্যাংক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা জানান, বাজারে অনেক ভাল ভাল শেয়ার থাকলেও বিনিয়োগকারীরা এখন স্বল্প সময়ে দ্রুত মুনাফা করার জন্য জাঙ্ক বা জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের পেছনে ছুটছেন। এটি বাজারের জন্য সুখের খবর নয়। কারণ এই শেয়ারগুলোতে যখন তখন অস্বাভাবিক রকমে বিক্রির চাপ বাড়তে পারে। ফলে যারা এখন বিনিয়োগ করছেন তাদের হয়ত দীর্ঘ সময়ে বিনিয়োগে থাকতে হতে পারে। এছাড়া জাঙ্কগুলোর দৌরাত্ম্য কমাতে স্টক একচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কোন ভ্রুক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এটিও চিন্তার বিষয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, জাঙ্ক কোম্পানিগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ না কমলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে না। কারণ অস্বাভাবিকভাবে কোন কোম্পানিরই দর এভাবে বাড়তে পারে না।
×