ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাত পোহালেই শুরু ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৫ আগস্ট ২০১৬

রাত পোহালেই শুরু  ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’

সময় এবং স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। চিরন্তন সত্য এটি। তেমনি রূঢ় সত্য ঘড়ির কাঁটাও টিকটিক করে বয়ে চলে, থেমে থাকে না। চিরকালীন এই বাস্তবিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরার একটিই কারণ, অলিম্পিক গেমস। বিশ্ব এখন সর্ববৃহৎ এই ক্রীড়া আসরের ডামাডোলে শামিল হওয়ার অপেক্ষায়। কেননা বিশ্বের বৃহত্তম ক্রীড়া উৎসব ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’ এখন ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড-ওয়ান ড্রিম’ সেøাগানকে সামনে রেখে ক্রীড়াপ্রেমীদের দ্বোরগোড়ায়। বিশ্ববাসীর জন্য সবচাইতে মর্যাদাকর ও আকাক্সিক্ষত এই ক্রীড়ামেলার এবারের আয়োজক ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো। বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোর ৫টা থেকে শুরু হবে রিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অর্থাৎ রাত পোহালেই শুরু হয়ে যাচ্ছে বৃহৎ ক্রীড়াযজ্ঞ। অবশ্য ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে গেমসের পুরুষ ও প্রমীলা ফুটবলের লড়াই। বুধবার মেয়েদের ফুটবল মাঠে গড়ানোর পর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে পুরুষ ফুটবল। বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়াম বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া আসরকে স্বাগত জানাতে পুরোপুরি প্রস্তুত। যেখানে ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল উত্তাপ ছড়িয়েছিল বিশ্বব্যাপী সেই রিওর মারাকানা স্টেডিয়ামেই এবার ৩১তম অলিম্পিকের পালা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে উৎসব আমেজ বিরাজ করছে গোটা রিও শহরে। ব্রাজিলের সাবেক রাজধানী, পুরনো এই শহর নতুনরূপে সাজানো হয়েছে অলিম্পিককে ঘিরে। বিদেশী পর্যটক, দর্শকের শহর এখন রিও। মর্যাদার ক্রীড়া আসরের ছোঁয়ায় রূপ পাল্টে গেছে গোটা শহরের। ব্রাজিলের পতাকা হাতে উৎসবে মেতেছেন স্থানীয় দর্শকরা। আর বিদেশীদের হাতে নিজ নিজ দেশের পতাকা। সব মিলিয়ে এতদিন ঝিমিয়ে থাকা রিও আবার জেগে উঠেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মার্চপাস্টে বাংলাদেশের পতাকা বহন করবেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। এ নিয়ে বেশ গর্ব অনুভব করছেন বাংলার টাইগার। অলিম্পিকে এতদিন অংশগ্রহণই মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের। তবে এবার গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও শূটার আব্দুল্লাহ হেল বাকীকে ঘিরে স্বপ্ন বুনছে লাল-সবুজের দেশ। অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো পদক জয়ের ইতিহাস গড়তে মুখিয়ে আছেন এ দু’জনই। মার্চপাস্টে বাংলাদেশের ১৬ সদস্যের দল অংশ নেবে। এর মধ্যে সাতজনই ক্রীড়াবিদ। অলিম্পিক শুধু বিশ্ববৃহৎ ক্রীড়া উৎসবই নয়, এ হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মিলনমেলা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তাবত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেয় এ আয়োজনে। বিচিত্র ভাষা, বিচিত্র পোশাক, আচার-আচরণ সবকিছুকে ছাপিয়ে এখানে উত্থিত হয় মিলনের সুর, ভালবাসা, ভালা লাগার জয়গান। বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের এই জয়গানে মুখরিত এখন গোটা রিও। পেলের দেশ স্মরণকালের সেরা আয়োজনের মাধ্যমে সবাইকে এক সুতোয় গাঁথার কাজ সম্পন্ন করেছে। রিও অলিম্পিকের আয়োজক কমিটির সূত্র জানিয়েছে, সব প্রস্তুতি শেষ করেছে তারা। এখন শুধু অপেক্ষা পর্দা ওঠার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কি চমক আছে সেটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রীড়াপ্রেমীদের মাথায়। মারাকানা স্টেডিয়ামে প্রায় ৮০ হাজার দর্শকের সামনে উন্মোচন হবে রিও অলিম্পিকের। আগামী ২১ আগস্ট পর্যন্ত চলমান আসরে রেকর্ড সংখ্যাক দেশ পদকের লড়াইয়ে শামিল হচ্ছে। এবারের আসরে কসোভো ও দক্ষিণ সুদানসহ ২০৬টি জাতীয় অলিম্পিক কমিটি (এনওসি) থেকে ১০,৫০০ জনেরও বেশি ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করছে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি কর্তৃক ২০০৯ সালে সংযুক্ত করা ক্রীড়া রাগবি সেভেনস ও গলফসহ ২৮ অলিম্পিক ক্রীড়ায় ৩০৬ ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। ইভেন্টগুলো আয়োজনের জন্য আয়োজক শহর রিও ডি জেনিরোর ৩৩ ভেন্যু এবং অতিরিক্ত হিসেবে ব্রাজিলে সর্ববৃহৎ শহর সাওপাওলো, রাজধানী শহর ব্রাসিলিয়া, মানাউশ ও সালভাদর শহর থেকে ৫টি ভেন্যু নির্বাচন করা হয়েছে। ২০০৯ সালের ২ অক্টোবর ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত ১২১তম আইওসি সেশনের মিটিংয়ে রিও ডি জেনিরোকে আয়োজক শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। স্পেনের মাদ্রিদ, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ও জাপানের টোকিওকে পেছনে ফেলে আয়োজকের মর্যাদা পায় ব্রাজিলের রিও। রিও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের প্রথম অলিম্পিক প্রতিযোগিতার আয়োজক শহর এবং লাতিন আমেরিকার দ্বিতীয়। এর আগে ১৯৬৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক লাতিন আমেরিকার মেক্সিকো সিটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কেমন হবে, তা নিয়ে এখন কৌতূহল সবার মধ্যেই। রিও’র আয়োজকরা জানাচ্ছেন, দেশীয় সংস্কৃতির পাশাপাশি নয়নাভিরাম সব পরিবেশনা থাকছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী সাম্বা নৃত্য তো আছেই। পাশাপাশি থাকছে আরও চমক। প্রায় ৮০ হাজার দর্শক সরাসরি উপভোগ করবেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এছাড়া বিশ্বের তিন বিলিয়ন মানুষ টিভিতে সরাসরি দেখবেন জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই থাকবে পতাকা নিয়ে এ্যাথলেটদের মার্চপাস্ট। এরপর পর্যায়ক্রমে নানা শো। সব শেষে থাকবে বর্ণিল আতশবাজি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন সিটি অব গড বিখ্যাত চলচ্চিত্রের পরিচালক ফার্নান্ডো মেয়ারলেস। তার সঙ্গে থাকবেন আন্ড্রুচা ওয়াশিংটন ও ড্যানিয়েলা থমাস। মজার ইভেন্টে গান করবেন সাম্বা সিঙ্গার এলজা সোয়ারেস। তার আরও একটা পরিচয় আছে। তিনি ব্রাজিলের সাবেক কিংবদন্তি ফুটবলার গ্যারিঞ্চার স্ত্রী। তার সঙ্গে থাকবে ১২ বছর বয়সী এমসি সোফিয়া। যে কি না কথা বলবেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে। এরপর একে একে মঞ্চ মাতাবেন ক্যারল কনকা, লুডমিলা, গিলবার্তো গিল, কায়েটানো ভ্যালোসো। সুরের মায়াজালে দর্শকদের মোহিত করতে থাকছেন ব্রাজিলের বিখ্যাত সব সঙ্গীতশিল্পী। আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনী আয়োজনে ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক পরিবেশনাই অধিক গুরুত্ব পাবে। সহস্রাধিক এ্যাথলেট জাতীয় পতাকা হাতে প্যারেড করবেন। লাইট এ্যান্ড সাউন্ড শো এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে ব্রাজিলে পর্তুগীজ উপনিবেশের ইতিহাস। উদ্বোধনী মঞ্চ আলো করবেন ব্রাজিলের সুন্দরী এবং সুপার মডেলরা। কিংবদন্তি ব্রাজিলিয়ান মডেল গিজেল বান্ডচেন ক্যাটওয়াকের মাধ্যমে মঞ্চ আলোকিত করবেন। ক্যাটওয়াকের বড় একটি অংশজুড়ে থাকবেন মেইনস্ট্রিম ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির সব ধারণা বদলে দেয়া ট্রান্সজেন্ডার মডেল লিটি। অলিম্পিকের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোন ট্রান্সজেন্ডার মডেল মঞ্চ মাতাবেন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ আসর সফল ও নিরাপদে সম্পন্ন করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে ব্রাজিল সরকার। তারা ইতোমধ্যে ৮০ হাজারের বেশি পুলিশ ও সেনা নিয়োগ করেছে। তারা রিও ডি জেনেরো শহরের রাস্তাগুলোতে টহল দিচ্ছে। যদিও এখনও খোদ ব্রাজিলের অনেক জায়গায় অলিম্পিক বিরোধী বিক্ষোভ ও প্রচার চলছে! খ্রিষ্টপূর্ব ৭৭৬ অব্দে অলিম্পিক শুরু হলেও আধুনিক অলিম্পিকের যাত্রা শুরু ১৮৯৬ সালে গ্রীসে। এর পর দুটো বিশ্বযুদ্ধের কারণে আয়োজনে ছেদ বাদ দিলে (তিনবার- ১৯১৬, ১৯৪০ ও ১৯৪৪) এখন পর্যন্ত নিয়মিতই হয়ে আসছে ক্রীড়াবিশ্বের সবচেয়ে বড় আসরটি। ১৮৯৬ সালে গ্রীসের এথেন্সের প্যানাথেসিয়াস স্টেডিয়ামে উদ্বোধন হয় প্রথম আধুনিক অলিম্পিক গেমসের। ১৪ দেশের ২৪১ এ্যাথলেট এ গেমসে অংশ নেন। ইভেন্ট ছিল ৪৩টি। সেই থেকে শুরু আধুনিক অলিম্পিকের।
×