ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রিও পৌঁছে অনুশীলনে মেসবাহ, শিরিন, সাগর ও সোনিয়া

তবু তারা ফুরফুরে মেজাজে, মনে করছেন ভাগ্যবান

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ৪ আগস্ট ২০১৬

তবু তারা ফুরফুরে মেজাজে, মনে করছেন ভাগ্যবান

রিও পৌঁছেই অনুশীলনে নেমে পড়েছেন বাংলাদেশের চার ক্রীড়াবীদ। অনেক ঝক্কি-ঝামেলা অতিক্রম করে প্রথম দল হিসেবে অলিম্পক শহরে পা রেখেছেন দুই স্প্রিন্টার মেসবাহ আহমেদ ও শিরিন আক্তার এবং সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর ও সোনিয়া আক্তার। ঝামেলা বলতে অনেকের আগমনটা কিছুটা স্বস্তির হলেও এই চারজনের ব্রাজিলে আসাটা ছিল বেশ কষ্টের। ঢাকা থেকে তুরস্কের ইস্তানবুল হয়ে (২১ ঘণ্টা ট্রানজিট) সাড়ে ১৪ ঘণ্টা বিমানে সফর শেষে ব্রাজিলের সাওপাওলো পৌঁছায়। পরে সেখান থেকে রিও ডি জেনিরো। প্রায় তিনদিনের এই ভ্রমণ ক্রীড়াবীদদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য। তবে দুবাই হয়ে এ্যামিরেটসে আসতে পরলে দেড় দিনে পৌঁছতে পারতেন। ভ্রমণক্লান্তি খেলোয়াড়দের বড় শত্রুর একটি। সঙ্গত কারণে ভোরে পৌঁছার পর সারাদিনের বিশ্রাম শেষে শরীরের আড়মোড়া ভাঙতেই মঙ্গলবার লম্বা অনুশীলন করেছেন এই চার ক্রীড়াবীদ। আটলান্টিক পাড়ের শহরে অলিম্পিকের ওজন কত টের পাবেন তারা ৫ আগস্ট উদ্বোধনীর পরই। পাহাড়তুল্য আটলান্টিকের ঢেউয়ের গর্জন ইতোমধ্যে কানে পৌঁছে গেছে। কাজেই ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড বা সুইমিং পুল দুটোই তাদের কাছে মহাসাগরের উত্তাল ঢেউয়ের সমান। তবে সাহস নিয়ে যে চারজনই বললেন ভাল কিছু করার এটা প্রশংসার দাবি রাখে। যদিও আরাম-আয়েশ বাংলাদেশের ক্রীড়াবীদদের জন্যই প্রযোজ্য। কারণ পদক জয়ের ধারে কাছে যাওয়ার সামর্থ্য যেহেতু নেই, সেহেতু অলিম্পিকের মতো বিশ্বসেরা মঞ্চে তাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। অভিজ্ঞতা অর্জন আর অংশগ্রহণটাই হচ্ছে মূলমন্ত্র। অলিম্পিক হচ্ছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় ও মর্যাদার মঞ্চ। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও অলিম্পিক বাংলাদেশের জন্য কেবল অংশগ্রহণ আর অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটা কি কেবলই আর্থিন দৈন্যতা? নাকি বড় মাপের আসরের জন্য ক্রীড়াবীদ তৈরির ক্ষেত্রে সরকারের উদাসিতা? এর কোনটা সত্য, উত্তর পাওয়া কঠিন। তবে এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়, যে কোন গেমসের দরজায় কড়া নাড়া পড়লেই তড়িঘড়ি দলগঠন করে অংশ নেয়াটা নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। আর্থিক দৈন্যতার দোহাই দিয়ে পাড় পাওয়া যাবে না। কারণ অলিম্পিকে পদক জেতা, চমক সৃষ্টিকারী অনেক দেশ রয়েছে যাদের আর্থিক অবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক খারাপ। দৈন্যতার মধ্যেও তারা আলো ছড়াচ্ছে মর্যাদার অলিম্পিক আসরে। কিন্তু পরছে না কেবল বাংলাদেশ। স্বর্ণ পদক জিতলে এক কেটি টাকা দেয়া হবে, প্রশংসা করতে হয় বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের এই ঘোষণার। কিন্তু সেটা যে আদৌ সম্ভব নয় বিষয়টা বোধ করি অজানা নয় ঘোষণা দানকারীদের। প্রবাদ আছে ‘কোরবানির আগে পশুকে যতই ঘাস খাওয়ান, সেবা যতœ করা হোক তাতে পশু যা আছে তাই থাকবে। এরচেয়ে বেশি তাজ হয় না, হবে না’। সঙ্গত কারণে পুরস্কার ঘোষণা হচ্ছে পরের বিষয়। আগে খেলোয়াড় তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। বড় মাপের আসরে অংশ নেয়া বা পদক জয়ের জন্য ক্রীড়াবীদ তৈরির ক্ষেত্রে সবার আগে দেশে-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বস্তা দরের প্রশিক্ষক দিয়ে কাজ যে হবে না এটা যুগ যুগ ধরে প্রমাণ হয়ে আসছে। ফলে পদক পাওয়ার মতো ক্রীড়াবিদ আগে তৈরি করে তারপর তাকে অনুপ্রাণিত করতে কোটিপোতি বানানোর পুরস্কারের ঘোষণা দিলে ভাল হয়। মঙ্গলবার রিও পৌঁছা চার ক্রীড়াবিদের মধ্যে সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর ও সোনিয়া আক্তার অংশ নেবেন ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে হিটে। ব্রাজিল সময় ১১ তারিখ সকালে সাগর নামবেন মাইকেল ফেলপসের মতো বিশ্ব খ্যাত সাঁতারুদের এই ইভেন্টের হিটে। আর পরের দিন সোনিয়ার পালা। এখন হিটেই ‘আউট’ নাকি পরের ধাপে, সেটাই দেখার। তবে হিটে কুইট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। একই অবস্থা দেশের দ্রুততম মানব মেসবাহ আহমেদ ও দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তারের। গতিদানব উসাইন বোল্টের প্রিয় ইভেন্ট ১০০ মিটার স্পিন্টের হিটে মেসবাহর ভাগ্য পরীক্ষা ১৩ আগস্ট। আর ডেফনে শিপার্স-ফেলিক্সদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টের হিটে শিরিনের লড়াই আগেরদিন। অর্থাৎ ১২ আগস্ট। তবে সবার আগে আসা এই চার ক্রীড়াবীদের সবাই বেশ ফুরফুরে মেজাজে। জীবনের প্রথম অলিম্পক। যা ভাগ্যে জুটে না অনেক ক্রীড়াবীদের। ফলে অংশগ্রহণটাকেই বিরাট একটা ভাগ্য হিসেবে নিচ্ছেন তারা। প্রসঙ্গ, রিও অলিম্পিকে এবারই সবচেয়ে বড় দল, সাত ক্রীড়াবীদ অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে। অন্য তিনজন হলেনÑ এশিয়ার ৫৫ র‌্যাঙ্কিংধারী গলফার সিদ্দিকুর রহমান, আরচার শ্যামলী রায় ও শূটার আবদুল্লাহ হেল বাকী। নামটা ‘বাকী’ হলেও দেশে বসেই নগদ হিসেবটা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি, শীর্ষ আটজনের মধ্যে থাকতে পারলেই যথেষ্ট। এক কথায় খুশি তিনি। সিদ্দিকুও স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। এখন ‘হোলের’ (গর্ত) শুরু হলেই বুঝা যাবে জাতিকে কি উপহার দিতে পারবেন সিদ্দিকুর রহমান। আরচার শ্যামলী রায়ও গতানুগতিক ভাষায় বলেছেন ভাল কিছু করার চেষ্টা থাকবে।
×