ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাদেশ থেকে বেরিয়ে সংসদে আইন পাস করা জরুরী

সঙ্কটের মুখে বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৪ আগস্ট ২০১৬

সঙ্কটের মুখে বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রকল্প

ডি.এম. তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে অধ্যাদেশ দিয়ে প্রকল্প পরিচালনায় বড় সাফল্য এলেও অজ্ঞাত কারণে আইনের আওতায় আনা হয়নি। ফলে পুরো প্রকল্পটি এখন মুখ থুবড়ে পড়ার পর্যায়ে। অথচ এটি একটি মডেল প্রকল্প। খরার কবল থেকে বিশাল এলাকা রক্ষা করার এই প্রকল্প। দেশী বিশেষজ্ঞদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রথম ধাপে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার ১৫ উপজেলা নিয়ে ১৯৮৫ সালের জুনে বরেন্দ্র সমন্বিত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প চালু করা হয়। উদ্দেশ্য, কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন। পরবর্তীতে এসব জেলার ২৫ উপজেলার প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, মরু প্রবণতা রোধ ও কৃষিক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে ‘বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হয়। এই প্রকল্পে সাফল্য এলে দ্বিতীয় ফেজে ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসে ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার ১৩ উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হয় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকা-। প্রকল্পটি দেশের খাদ্য উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখে। গত ১০ বছরে প্রকল্প পরিচালনায় সরকারের কাছে কোন অর্থ নিতে হয়নি। সেচের চার্জ, আম ও বনায়নের গাছ বিক্রি করে প্রকল্পের আয় হয় ১৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৮% বিদ্যুত, খরচ, ১০% অপারেটারদের বেতন, ১০% মেইনটেন্যান্স খরচ ও বাকিটা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ অন্যান্য ব্যয় হয়। বর্তমানে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রায় দ্বিগুণ হবার ফলে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বেকায়দায় পড়েছে। কর্তৃপক্ষ জনকণ্ঠকে জানায়, প্রকল্পের আয় থেকে ভবিষ্যতে বেতন-ভাতা হয়ত দেয়া সম্ভব হবে না। আগে বেতন-ভাতা বাবদ ৩২ কোটি টাকা লাগলেও তা বর্তমানে বেড়ে ৪৮ কোটি টাকা হয়েছে। সরকারের নির্দেশে বেতন-ভাতা বাড়িয়ে কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধে বাধ্য হলেও কৃষকদের সেচ চার্জ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের দাম প্রয়োজনীয় হারে বৃদ্ধি পায়নি। তাই কর্তৃপক্ষ সেচ চার্জ বাড়াতে সাহস পারছে না। বেতন-ভাতা বৃদ্ধি সামাল দিতে হলে সেচ চার্জ দ্বিগুণ করতে হবে। ১০ বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ধরে রাখতে চাচ্ছে বলে ত্রিশ বছর ধরে চলে আসা অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন এই প্রকল্প উত্তরাঞ্চলের ৬০টি উপজেলার মোট ৬৫৪৪ বর্গমাইল (৪১.৭৪ লাখ একর) এলাকা জুড়ে সম্প্রসারিত। লোকবলের সংকট মোকাবেলা না করতে পাবার অন্যতম কারণ আইন পাস না হওয়া। অধ্যাদেশ দিয়ে ৩০ বছর প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবার পরেও তা লাভজনক পর্যায়ে রয়েছে। এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে অধ্যাদেশের বদলে আইন পাস করতে হবে। গত ছয় বছর ধরে প্রকল্পে কোন নতুন নিয়োগ নেই। পাশাপাশি যারা দীর্ঘদিন কাজ করছেন তাদের নেই পদোন্নতি। ফলে প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বড় মাপের হতাশা বিরাজ করছে। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ১৫৬৩ লোকবলের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে চিঠি পাঠানো হলেও তা পূরণ করা হয়নি।
×