ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্য এশিয়াকে নিয়ে নানা শক্তির খেলা

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ৩ আগস্ট ২০১৬

মধ্য এশিয়াকে নিয়ে নানা শক্তির খেলা

কেমন আছে মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশ কাজাখস্তান, কিরগিস্তান, তুর্কিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং সেখানকার জনগণ। কি অবস্থা এবং কেমন ধরনের শাসন বিরাজ করছে এসব দেশে? একনজর বুলালে বাহ্যিকভাবে আমিতাচার বা অমিতব্যয়িতার অনেক নজির চোখে পড়বে এককালের পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত এই পাঁচটি দেশে। কারণ এসব দেশের শাসনব্যবস্থা রয়েছে নিপীড়নমূলক কর্তৃত্ববাদী সরকার। এই দেশগুলোর শাসকরা গণরোষ ও গণআন্দোলনের ভয়ে যেমন শঙ্কিত থাকে তেমনি ভীতগ্রস্ত থাকে জিহাদী মতবাদের কারণে। কেননা এই পাঁচটি দেশের সবই ঐতিহ্যগতভাবে মুসলমান। একদা রুশ ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্য মধ্য এশিয়ার প্রভাব বিস্তার নিয়ে পরস্পর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল। আর আজ এই খ-িত অঞ্চলে ক্ষমতা এ সম্পদ নিয়ে তিনটি শক্তির সাধ্য আরও বড় ও জটিল ধরনের প্রতিযোগিতা চলছে। তিনটি শক্তি হচ্ছে চীন, রাশিয়া ও পাশ্চাত্য। রাশিয়ার একটা বড় সুবিধা হচ্ছে এই প্রতিযোগিতাটি তার নিজের কাছে ঘরোয়া খেলার মতো। পাঁচটি দেশের সব ক’টিতে রুশ ভাষা আন্তর্জাতিক মিশ্রিত ভাষা হিসেবে বিদ্যমান। রাশিয়ার মতো এই পাঁচটি দেশেই ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে থাকা একটি ক্ষুদ্র অথচ অতি বিত্তমান চক্রের হাতে ন্যস্ত। এই দেশগুলোর নেতারা অতি নিষ্ঠুরভাবে ভিন্নমত দমন করে থাকে। মধ্য এশিয়ার এই পাঁচটি দেশই মুসলমানপ্রধান হলেও অধিকাংশ দেশই ধর্মীয় অনুশাসন বেশ শিথিল কিংবা নেই বললেই চলে। জনগোষ্ঠীর এক ক্ষুদ্র অথচ ক্রমবর্ধমান সংখ্যক তরুণ ও ক্ষুব্ধ অংশের কাছে ইসলামের যথেষ্ট কদর আছে। জঙ্গী হামলার ঘটনা এখানেও ঘটেছে। ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের পক্ষে লড়ার জন্য মধ্য এশিয়া থেকে কতজন নারী গেছে কেউ সঠিকভাবে বলতে পারে না। তবে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের হিসাবে এই সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। শাসকরা অবশ্য তাদের দমন-নিপীড়ন নীতির সাফাই গাওয়ার জন্য সংখ্যাটা বাড়িয়ে দেখাতে চায়। মধ্য এশিয়ার কর্মসংস্থানের চিত্র বড়ই নিরাপদ। বেতন ও পারিশ্রমিক বেশ কম। বেকারত্বের হার বেশি। এখান থেকে অনেকে কাজের সন্ধানে রাশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়ার অর্থনীতি মন্দা কবলিত হওয়ায় তাদের একটা বড় অংশ বেকার হয়ে আইএসের প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়েছে। অধিক বেতনের প্রতিশ্রুতিতে তারা এই সংগঠনে গিয়ে ভিড়েছে। উজবেকিস্তান ও তাজাকিস্তান এই দুটি দেশের প্রতিটি থেকে এক হাজারের বেশি জঙ্গী আইএসে গেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসাবে উজবেকিস্তানে কারাবন্দী রয়েছে ১২ হাজার। এদের অনেকে কারাগারে ইসলামী জিহাদী বনে গেছে। সে তুলনায় যাযাবর জীবন ঐতিহ্যের অধিকারী কাজাখস্তান ও কিরগিজস্তান থেকে আইএস খুব বেশি একটা রিক্রুট করতে পারেনি। তথাপি এই দুই দেশের প্রতিটি থেকে কয়েক শ’ যোদ্ধা ইরাক ও সিরিয়ায় গেছে। এই তরুণরা দেশে ফিরে এসে কি ঘটাবে সেটাই আরও বেশি উদ্বেগের ব্যাপার।এমন এক গোলমেলে পটভূমিতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভূরাজনীতির নতুন খেলার কথা শোনা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রধান কুশীলবরা হলো রাশিয়া, চীন, আমেরিকা, ইউরোপ, তুরষ্ক, সৌদি আরব, কাতার এবং সম্ভবত ইরান। এ অঞ্চলের তেল গ্যাস সম্পদ এসব দেশকে নতুন খেলায় মেতে উঠতে আগ্রহী করে তুলছে। শেভরন এ অঞ্চলের সর্বাধিক উৎপাদনশীল তেল খনি চালালেও আমেরিকা ও ইউরোপ এ অঞ্চলের বাজারে ঢুকতে অত উৎসাহিত বোধ করে না। কারণ হয়ত রাশিয়ার বৈরী মনোভাব এবং এই দেশগুলোর দুর্বল আইনী ও ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান এবং লাগামহীন দুর্নীতি। সে তুলনায় চীন এই অঞ্চলে ভালই ব্যবসা করছে। পাঁচটির মধ্যে চারটি দেশ সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার এবং এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংকের সদস্য। চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্পে এই অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। চীনের অর্থনীতি এখানে যেভাবে এসে ঢুকেছে তাতে মধ্য এশিয়ার সাধারণ মানুষ নার্ভাস বোধ করলেও ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরা তাদের উৎসাহিত করছে। গত এক দশকে এ অঞ্চলে চীনের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য এত বেড়েছে যে রাশিয়া এক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছে। তবে এ অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাব এখনও সর্বাধিক। মধ্য এশিয়ার বেশিরভাগ লোক রাশিয়া এবং রুশ ভাষার টিভি চ্যানেল দেখে। সেখানে মার্কিন ও পাশ্চাত্যবিরোধী কর্মসূচীর অভাব নেই। অনেকের সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি নস্টালজিয়া আছে। রাশিয়া এই পাঁচটি ও তার দেশকে সঙ্গে নিয়ে ইউরোপীয় ইকোনমিক ইউনিয়নে যোগ দেয়ার জন্য টানছে। রাশিয়া তার এই সাবেক প্রজাতন্ত্রগুলোকে নিজের সড়ক ও রেল রুট ও পাইপলাইনগুলোর ওপর যতটা সম্ভব নির্ভরশীল রাখতে বদ্ধপরিকর। সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
×